30 June 2015

কুমিল্লার অবহেলিত এক উপজেলা তিতাস

কুমিল্লার অবহেলিত এক উপজেলা তিতাস


নিজস্ব প্রতিবেদক: ভালো রাস্তা না থাকায় যোগাযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত কুমিল্লার অপেক্ষাকৃত নতুন উপজেলা-তিতাস। দাউদকান্দি থেকে সরু রাস্তার দীর্ঘ জ্যাম পেরিয়ে এই জনপদে ঢোকার পর চোখে পড়ে ভাঙ্গাচোরা রাস্তাঘাট। একটি ৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র থাকলেও ওই বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে না তিতাসের মানুষ। 

কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার ৯ টি ইউনিয়ন কর্তন করে তিতাস নামে নতুন একটি উপজেলা যাত্রা শুরু করে ২০০৪ সালের ৩০ মার্চ। ১০৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলার দক্ষিণে দাউদকান্দি, উত্তরে হোমনা, পূর্বে মুরাদনগর এবং পশ্চিমে মেঘনা উপজেলা। 

রাজধানী ঢাকা থেকে দূরত্ব মাত্র ৫৫ কিলোমিটার হলেও কুমিল্লা থেকে দূরত্ব আরো বেশি ৫৮ কিলোমিটার। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক থেকে হোমনা সড়ক দিয়ে এই উপজেলায় ঢুকতে শুরুতেই জিআরকান্দি সেতু। সরু সেতু দিয়ে শুধু একমুখী যান চলাচলের কারণে সেতুর দুপাশে প্রতিদিনই ভয়াবহ যানজট।

ওই যানজট পেরিয়ে তিতাসে ঢোকার পর অন্যচিত্র। যে রাস্তাটি তিতাসের উপর দিয়ে চলে গেছে মুরাদনগরের দিকে, সেই রাস্তার বিভিন্ন স্থানে জীর্ণদশা। ভাঙ্গাচোরা ওই রাস্তার বিকল্পও নেই যাত্রী ও গাড়িচালকের কাছে।

এই জনপদের মানুষের আরেকটি বড় সমস্যা বিদ্যুৎ। ৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র  থাকলেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে না এখানকার মানুষ।

এইসব সমস্যার বিষয়ে অবগত আছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারও।

রাস্তার উন্নয়নে কিছু পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসকও। যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সমস্যা কেটে গেলে তিতাস হতে পারে একটি স্বনির্ভর উপজেলা।

27 June 2015

বিলুপ্ত প্রায় কুমিল্লার তাঁতশিল্প

বিলুপ্ত প্রায় কুমিল্লার তাঁতশিল্প


নিজস্ব প্রতিবেদক: একসময় ছয় শতাধিক তাঁত কলে দিন-রাত ঠকাঠক মাকুর আওয়াজ শোনা যেত কুৃমিল্লার ময়নামতি, চান্দিনা, মুরাদনগর, গৌরীপুর ও দেবিদ্বার গ্রামিন জনপদে। সেদিন আর আগের মতো নেই। 

তাঁতশিল্পের অস্তিত্ব কোন রকমে ধরে রেখেছে চান্দিনা আর দেবিদ্বারের তাঁতীরা। আজকের সময়ে নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে কুমিল্লার তাঁতশিল্প টিকে রয়েছে আগের সুনাম নিয়ে। 

মোগল আমল থেকেই কুমিল্লা অঞ্চল ছিল তাঁতশিল্পের জন্য বিখ্যাত। সপ্তদশ শতাব্দির প্রথম দিকে তদানীন্তর ত্রিপুরা রাজ্যের সর্বত্রই অসংখ্য তাঁতী ছিল। ওই সময়ে বৃহত্তর কুমিল্লার ময়নামতি, চান্দিনা, দেবিব্দার, গৌরীপুর নবীনগর, সরাইল, এলাকা প্রায় ১৫ হাজার তাতীঁ শাড়ী, লুঙ্গি, ধুতি, চাদর, গামছা, তৈরীর কাজে নিয়োজিত ছিল।

তাতীঁদের বেশির বাগই হিন্দু গোষ্ঠি সম্প্রদায়ের ছিল। স্বদেশী আন্দোনের সময় তাঁত কাপড়ের চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও মুসলমানরা আগের পেশায় অকৃষ্ট হতে থাকে। মুরাদনগরের তাতীঁদের তৈরী মাদ্রাজি, লুঙ্গির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজার বাজিমাত করেছিল। 

বর্তমান সময়ে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বেলাশ্বর, বাড়েরা, অসাদনগর, ভানী, ভোমরকান্দি ও দেবিব্দারের বরকামতা, চাউমুড়া, নবাবপুরসহ বেশকটি গ্রাম বর্তমানে অর্ধশতাধিক তাতঁকলের অস্তিত্ব মিলবে। আগে তাঁতকলের সংখ্যা ছিল ছয় শতাধিক।

বর্তমানে বরকামতায় প্রায় ১০টি তাঁতকলে খদ্দরের কাপড় তৈরির কাজ চলে। অন্যান্য গ্রামের তুলনায় বরকাম তাঁতেই এখনো অধিক সংখ্যক তাঁত পরিবার রয়েছে। যার সীমাহীন দুঃখ কষ্টের মাঝেও নাান প্রতিকৃলতা মোকাবেলা করে ও এই পেশায় জড়িয়ে রয়েছে।

বরকামতার নাথ বাড়ির শশী মোহন দেবনাথ ছিলেন এই অঞ্চলের খ্যাতিমান তাঁতী। প্রায় ৪৩ বছর হয়েছে তিনি মারা গেছেন। তার এই তাঁত পেশা এখনো আকড়ে ধরে এ শিল্প টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন ছেলে রঞ্জিত বেদনাথসহ তার অন্য সহোদররা। বরকামতার আরো কটি পরিবার তাঁত পেশা এখনো আঁকড়ে ধরে রেখেছে।

এ পেশা নিয়ে বরকামতার তাঁতীরা বুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, বাপ-দাদার পেশা ছাড়তে পারিনা। মায়া জন্মানো আর দেশী পন্যের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই শত কষ্টের ও তাঁতের ব্যবসাটা ধরে রেখেছি। সুতার দাম, কারিগর খরচ, জীবনযাত্রার মান সবই বেড়েছে। কিন্তু পাইকারদের কাছে তাঁতীদের বুনা কাপড়ের দাম বাড়ে না। আমরা তো অনেক কষ্ট সহ্য করে হলেও পূর্বপুরুষের এ পেশা আঁকড়ে ধরে  জীবিকা নির্বাহ করছি। কিন্তু ভীষন চিন্তা হয়, আগামী প্রজন্মের তাঁতীদের জন্য। এতো কষ্ট যে শিল্পে সেই তাঁতে কী তারা আসতে চাইবে? তবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া ন্যায্য মূল্য সুতা বিতরন কার্যক্রম শুরু হলে তাঁতশিল্পে নতুন করে প্রান ফিরে পাবে। কুমিল্লার তাঁতশিল্পের সুনাম ঐতিহ্য রক্ষা করতে আমাদের সন্তানরা ও এগিয়ে আসবে।

বর্তমানে কুমিল্লার চান্দিনা ও দেবিদ্বারের যে কটি গ্রাম তাঁতকল রয়েছে সেখানে থান কাপড়, চাদর, পাঞ্জাবির কাপড়, ফতুয়ার কাপড়, সালোয়ার কামিজ এবং ওড়নার কাপড় তৈরী করা হয়। তাঁতীদের বুনা এসব কাপড় কুমিল্লা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায়, ঢাকা, চট্রোগ্রাম, নারায়নগঞ্জ, ময়মনসিংয়হসহ বিভিন্ন জেলায় চালান করা হয়। 

২৫০ বছরের বেশি সময় ধরে দেশীয় সাংস্কৃতি আর ঐতিহ্যর ধারক কুমিল্লার তাঁতশিল্প। কুমিল্লাবাসীর প্রত্যাশা, কালের পুরিক্রমায় ও আধুনিক যন্ত্রের যাতাকলের ভিড়েও যেনো কুমিল্লার তাঁতশিল্প হারিয়ে না যায়। এখানকার তাঁতীদের বর্তমান আশা যে, বংশ পরষ্পরায় টিকে থাকে এ পেশায়।

14 June 2015

কুমিল্লা শালবন বৌদ্ধবিহারে প্রাচীন কূপ ও টেরাকোটা (ভিডিও)

কুমিল্লা শালবন বৌদ্ধবিহারে প্রাচীন কূপ ও টেরাকোটা (ভিডিও)


নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধ বিহারে খনন করে পাওয়া গেছে প্রাচীন সভ্যতার আরো কিছু নিদর্শন। এর মধ্যে আছে ১৪শ বছরের পুরনো মিঠা পানি সংরক্ষণ কূপ এবং পোড়া মাটির তৈরি ময়ূর ও প্রাচীন টেরাকোটা। প্রাচীন সভ্যতার আরো নিদর্শন পেতে খনন কাজ চালাচ্ছে প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর। 

শালবন বৌদ্ধ বিহার প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯৫৫ সালে এর খনন শুরু হয়। ধারণা করা হয়, সপ্তম শতাব্দীর শেষ দিকে দেব রাজা ভবদেব বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য বিহারটি নির্মাণ করেন। প্রাচীন এ সভ্যতা দেখতে প্রতিদিন দূরদুরান্ত থেকে অনেক দর্শণার্থী আসেন এ বৌদ্ধবিহারে।

প্রাচীন সভ্যতার খোঁজে এখনো চলছে খনন কাজ। এ বছর বিহারের মধ্যভাগে দেখা মেলে অষ্টম শতকের গভীর মিঠা পানির কূপসহ প্রাচীন আমলের দু’টি রাস্তা, ব্রোঞ্জ ও রৌপ্য মূদ্রা।

শালবন বিহারের দক্ষিণে লালমাই ও উত্তরের ময়নামতি পর্যন্ত প্রায় ১১ মাইল এলাকার ৫৫টি বিহারের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩৩টির খনন শেষ হয়েছে বলে জানালেন এই কর্মকর্তা।

শালবন বৌদ্ধবিহারে মাটি খুড়লেই মেলে ইতিহাসের সন্ধান, গত ৫৯ বছরে এখানে মাটি খুড়ে পাওয়া গেছে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাদ্বীর অনেক পুরাকীর্তি ও নিদর্শন। প্রত্নতাত্বিক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এখানে যত মাটি খনন করা হচ্ছে, ততই পাওয়া যাচ্ছে সভ্যতার অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্দশন।
কুমিল্লা নগরীর ফুটপাত হকারদের দখলে

কুমিল্লা নগরীর ফুটপাত হকারদের দখলে


নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ও বেশিরভাগ সড়কের ফুটপাত এখন সিএনজি স্ট্যান্ড ও হকারদের দখলে। সরকারি দলের কতিপয় নেতা, পুলিশ ও স্থানীয় সন্ত্রাসীরা হকারদের বসিয়ে লাখ লাখ টাকার মাসোয়ারা আদায় করছে। নগরীর কান্দিরপাড়, লাকসাম রোড, চকবাজার, রাজগঞ্জ, টনছম ব্রিজ, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ, শাসনগাছাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০টি অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড বসিয়ে প্রতিনিয়ত চাঁদা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ফুটপাত দখলমুক্ত করে যানজট নিরসনে অবিলম্বে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন নগরবাসী।

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে সারি সারি স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। হকাররা ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তার ওপর দোকান দিয়ে ব্যবসা করছে। ফলে পথচারীরা মাঝ রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করায় যানজট ছাড়াও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। নগরীর কান্দিরপাড় এলাকার পূবালী চত্বর থেকে নিউমার্কেট হয়ে মনোহরপুর, রাজগঞ্জ, ছাতিপট্টি, কাপড়িয়াপট্টি হয়ে চকবাজার পর্যন্ত, কান্দিরপাড় থেকে টনছম ব্রিজ পর্যন্ত, কান্দিরপাড় থেকে শাসনগাছা বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের ফুটপাতের অস্তিত্ব বোঝা দায়। কান্দিরপাড় চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন সড়কের দুইপাশের ফুটপাত ছাড়াও ৫-৬ ফুট রাস্তা হকাররা দখল করে নিয়েছে।

কান্দিরপাড় টাউনহলের পশ্চিম কর্ণার থেকে পূর্ব কর্ণার পর্যন্ত ড্রেনের ওপর বাঁশ ও কাঠের পাটাতন বসিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবেই ২ শতাধিক দোকান গড়ে তুলেছে হকাররা। কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরের আশপাশে প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশের ফুটপাতজুড়ে রয়েছে দোকানপাট। জুতা, ফল, কসমেটিক্স, কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্য-সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে ব্যবসা পরিচালনার কারণে সড়কে নিত্যদিন যানজট লেগেই থাকে। এসব দোকান নির্মাণ ও দখলবাজির নেপথ্যে রয়েছে শাসকদলের কতিপয় নেতা। পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তাও সড়ক দখলে সহায়তা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

আর এ ফুটপাত থেকে লাখ লাখ টাকা মাসোয়ারা আদায় করছে তারা। তাছাড়া নগরীর জনবহুল এলাকা কান্দিরপাড় টমছম ব্রিজ, শাসনগাছাসহ নগরীতে প্রায় ১৫টি অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড স্থাপন করে প্রায় ২৫-৩০ লাখ টাকা পুলিশ ও স্থানীয় সরকারদলীয় প্রভাবশালীরা হাতিয়ে নিচ্ছে। কথা হয় কুমিল্লা টাউনহল গেটসংলগ্ন সড়ক দখল করে খুচরা ফল বিক্রেতা আমির হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, ৫ হাজার টাকা দিয়ে স্থানীয় একজন প্রভাবশালী থেকে তিনি দোকানের দখল নিয়েছেন এবং দৈনিক ৩শ’ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়।

দখল পাইয়ে দেয়া এক ব্যক্তির পক্ষে একজন প্রতিদিন সন্ধ্যায় এ টাকা তুলে নেন। এছাড়া কোতোয়ালি মডেল থানার কনস্টেবল শহিদ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নাম ভাঙিয়ে ফুটপাতের অবৈধ ব্যবসায়ীদের থেকে চাঁদা তুলছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কুমিল্লা ছিন্নমূল হকার সমিতির সভাপতি হাসানুল আলম হাসান জানান, এ সমিতির সদস্য ৮১ জন। এ সংগঠনের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত ব্যবসায়ীরা মাসিক মাসোয়ারা দেয় না।

তাদের দৈনিক সঞ্চয় হিসেবে ১০ টাকা আদায় করে সমিতির অফিস খরচের জন্য নেয়া হয়। তবে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন সড়কের ফুটপাতে প্রায় ৭/৮ হাজার হকার রয়েছে। এদের নিয়ন্ত্রণ আমরা করি না। তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে হয়তোবা ব্যবসা করে।

এর বেশি কিছু বলতে পারি না। কুসিক সূত্রে জানা যায়, নগরীতে ৪৮২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে পাকা সড়ক রয়েছে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩৮০ কিলোমিটার রাস্তায় কোনো ফুটপাত নেই। বাকি সড়কের উভয়পাশ দিয়ে ফুটপাত আছে ২০ কিলোমিটার। যার অধিকাংশই হকারদের দখলে। তাছাড়া এসব গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ফুটপাতে রয়েছে অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড প্রায় ২০টি।
কুমিল্লা বিভাগের নাম কুমিল্লাই থাকবে - আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

কুমিল্লা বিভাগের নাম কুমিল্লাই থাকবে - আইনমন্ত্রী আনিসুল হক


নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন হলে কুমিল্লা বিভাগের নাম কুমিল্লাই থাকবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘কুমিল্লাকে বিভাগ করার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বিভাগ বাস্তবায়ন হলে কুমিল্লার নাম কুমিল্লা রাখার জন্য কুমিল্লাবাসির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন। কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন পরিষদ এই গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজন করে।

গোলটেবিল বৈঠকে আনিসুল হক বলেন, কুমিল্লার নাম কুমিল্লাই থাকবে। এতে আমার কোন আপত্তি নাই। কুমিল্লা বিভাগের জন্য কুমিল্লা নামেই গর্ববোধ করি। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা না বুঝে কথা বলেন না। আর যে কথা বলেন তা রাখেন।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পরিকল্পনা বৃহত্তর পরিকল্পনা। তার এই উদ্দেশ্য হচ্ছে ঢাকা শহর থেকে চাপ কমানো। এজন্য কিছু বিভাগ বাড়ানো হচ্ছে।

কুমিল্লা বাসির উদ্দেশে তিনি বলেন, কুমিল্লায় যেন বিনিয়োগ করা হয় সেজন্য ভিবিন্ন গোলটেবিল বৈঠক করা উচিৎ। যারা কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা করার জন্য নাম লিখিয়েছেন তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানানো হবে।

সাবেক মন্ত্রী এবিএম গোলাম মোস্তফার সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক ডিপুটি স্পিকার মোঃ আলী আশরাফ, সাবেক মন্ত্রী আবুল কাশেম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ ম উবায়দুল মোকতাদির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ড. মোহাম্মদ শামসুল হক প্রমুখ।

13 June 2015

ইপিজেডে বর্জ্য শোধনাগারের সুফল পাচ্ছে ১০,০০০ হেক্টর জমি

ইপিজেডে বর্জ্য শোধনাগারের সুফল পাচ্ছে ১০,০০০ হেক্টর জমি


বিশেষ প্রতিনিধিঃ কুমিল্লা ইপিজেডে কেন্দ্রীয় তরল বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৫ মে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ বর্জ্য শোধনাগার চালু হওয়ায় ইপিজেডের আশপাশের এলাকার কয়েকটি গ্রামের কৃষকের কমপক্ষে ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল, প্রাকৃতিক জীব, মাছ, জলজ প্রাণী ও পরিবেশ ক্ষতির হাত হতে রক্ষা পাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
কুমিল্লা ইপিজেড সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী কুমিল্লা মহানগরীর দক্ষিণাংশে ১৯৯৯ সালের এপ্রিলে ২৬৭ দশমিক ৪৬ একর জায়গা নিয়ে কুমিল্লা ইপিজেড এর উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০০ সালের ১৫ জুলাই তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ইপিজেডের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনসহ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
এ ইপিজেডে ২৩৯টি শিল্প প্লট রয়েছে। নেদারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, জাপান, যুক্তরাজ্য, চীন, তাইওয়ান, ফ্রান্স, হংকং, মরিশাস, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা কুমিল্লা ইপিজেডে বিনিয়োগ করেছেন। এখানে ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত উত্পাদন চলছে। এর মধ্যে ১৯টি বিদেশি, ৮টি যৌথ ও ১০টি দেশিয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ২১ হাজার ২৫৭ জন বাংলাদেশি ও ২১৮ জন বিদেশি কর্মরত আছেন। তবে এ ইপিজেডে প্রথম থেকে তরল বর্জ্য শোধনাগার ছিল না। ফলে এর তরল বর্জ্যে খতিগ্রস্ত হচ্ছিল আশেপাশের এলাকার ফসলি জমি, পুকুর-জলাশয়। নষ্ট হচ্ছিল ফসল, মারা যাচ্ছিল মাছ ও জলজ প্রাণী।
ইপিজেড প্রতিষ্ঠার পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনগণ প্রায়ই মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এতে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে এ ইপিজেডে সিগ্মা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় ৩৮.৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কেন্দ্রীয় তরল বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। তখন থেকে প্রতিদিন রাসায়নিক ও জৈবিক উভয় পদ্ধতিতে এ প্লান্টে ১৫ হাজার ঘনমিটার তরল বর্জ্য পরিশোধন করার কাজ চলে আসছিল।
বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) এর মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর জানান, ‘কুমিল্লা ইপিজেডে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানি পোশাক, টেক্সটাইল, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ, ফুটওয়্যার, মেডিসিন বক্স, প্লাস্টিক পণ্য ও বিভিন্ন পণ্য উত্পাদন করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় তরল বর্জ্য শোধনাগারটি গত ২৫ মে উদ্বোধনের পর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব কারখানার তরল বর্জ্য পরিশোধনের কাজ সার্বক্ষণিকভাবে চলছে। এ বর্জ্য শোধনাগারে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে জৈবিক ও রাসায়নিক পদার্থ ধংস করার কারণে শোধিত পানি ফসল, জলজ প্রাণী কিংবা প্রাকৃতিক পরিবেশের কোন ক্ষতি করবে না।’
কুমিল্লার লালমাই ও ময়নামতি পাহাড় এলাকায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন

কুমিল্লার লালমাই ও ময়নামতি পাহাড় এলাকায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন


কুমিল্লার প্রত্যন্ত এলাকার হাটে-বাজারে এখন মৌসুমী ফলের অপূর্ব সমাহার। জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকেই হাট-বাজার ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলা সদর, নগরের রাস্তা, অলি-গলি ও গ্রামীণ জনপদে ফেরী করে বিক্রি হচ্ছে আম, কাঁঠাল, জাম, আনারস, জামরুল, লিচু, লটকনসহ বিভিন্ন জাতের ফল-ফলাদী। তবে এ বছর কুমিল্লার লালমাই ও ময়নামতি পাহাড় এলাকায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে।
কুমিল্লা মহানগরীর কারাগার সড়ক, কোর্ট রোড, রাজগঞ্জ, ছাতিপট্টি, চকবাজার, রামঘাট, লাকসাম রোড, টমছমব্রিজ, শাসনগাছা, রেসকোর্স, ঝাউতলা, রেলওয়ে স্টেশন, নজরুল অ্যাভিনিউ, রাণীর বাজার, আশ্রাফপুর, ইপিজেড সড়ক, ঢুলিপাড়া,   রাজাপাড়া, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে, চাঁপাপুর, বালুতোপা, জাঙ্গালিয়া, পদুয়ার বাজার, আদালতপাড়াসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় আম, লিচু, কাঁঠালসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল ফলের পসরা সাজিয়ে বসেছে বিক্রেতারা। ক্রেতারা কিনে নিচ্ছে এসব মৌসুমী ফল। কাক ডাকা ভোরে দূর-দূরান্ত থেকে সাইকেল, ঠেলাগাড়ি, রিকশা ও ভ্যানে করে পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতারা এসব ফল-ফলাদী বিক্রি করছেন।
নগরীর কারাগার সড়কে জামাল উদ্দিন, আলী হোসেন, জয়নালসহ কয়েকজন ফল বিক্রেতা জানান, লালমাই ও ময়নামতি পাহাড় এলাকায় এ বছর কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ পাহাড় এলাকায় রয়েছে অনেক কাঁঠাল বাগান। এ পাহাড়ের কাঁঠাল অনেক সুস্বাদু এবং কদরও অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন বাগানের শ্রমিক ও ফল বিক্রেতারা। পাহাড় এলাকার বাগান থেকে পাইকাররা এসব কাঁঠাল কিনে নেন। তবে এ বছর কাঁঠালের দাম গত বছরের তুলনায় কম। ভারত সীমান্তের কাছাকাছি হাট বা লালমাই পাহাড় এলাকা থেকে কেনা ৪০-৫০ টাকার কাঁঠাল শহরে এনে ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করা যায়। খুচরা ফল বিক্রি করে তারা প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার টাকা উপার্জন করেন। তারা আরো জানান, কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও জেলার ভারত সীমান্তবর্তী এলাকার বিভিন্ন স্থানে কাঁঠাল, জাম, আনারস, জামরুল, লিচু, লটকনসহ নানান জাতের ফল-ফলাদীর হাট বসে। এছাড়া জেলার আদর্শ সদর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বৌয়ারা বাজারে ফলের হাট ঘুরে জানা যায়, এখানে সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও সোমবার বসে ফলের হাট। ভোর ৫টা থেকে শুরু হয়ে সকাল ৮টা পর্যন্ত এ বাজারে উঠে নানান জাতের মৌসুমী ফল। এ বাজারে দেখা যায় বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা কাঁঠালের অপূর্ব সমাহার। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে এসব সুস্বাদু ফল কাঁঠাল ও আনারসসহ বিভিন্ন ফল ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যান।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে দালালদের কাছে জিম্মি রোগীরা

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে দালালদের কাছে জিম্মি রোগীরা


বিশেষ প্রতিনিধিঃ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগত রোগীরা দালাল ও বহিরাগত মাস্তানদের কারণে অতিষ্ট এবং সঠিক স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দালালরা এতই ব্যাপরোয়া যে রুগীদের আত্মীয় স্বজনদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা দিতে বাধ্য করে এবং না দিলে বিভিন্ন নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়।
বিভিন্ন সময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দালাল নির্মূলের উদ্যোগ নিলে ও তাতে কোন কাজ হচ্ছে না। আগত রোগীদের আত্মীয় স্বজন এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ আইনশৃংখলা বাহিনীর কিছু অসাধু ব্যক্তির সাথে হাত করে দালালরা তাদের এ অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। কাউকে পরোয়া করছে না। তারা এতই ব্যাপরোয়া যে  কেউ তাদেরকে কিছু বলতে চাইলে তারা আইনশৃংখলা বাহিনীর কিছু অসাধু ব্যক্তির  নাম ভাঙগিয়ে হুমকি ধমকি দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় লোকজন জানায় দালালদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে রোগীর স্বজনরা এক হাজার টাকার সরঞ্জাম ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায় কিনতে বাধ্য হচ্ছে। দালালরা এতই বেপরোয়া যে হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করেই রোগীর লোকদের কে নানা রকম বুঝিয়ে তাদেরকে ঔষধ দিয়ে পরবর্তীতে চাপিয়ে দেয় অতিরিক্ত টাকা ৫০০টাকার ঔষধ ৫০০০টাকা দিতে হয়। শতাধিক দালালের সম্বয়ে রয়েছে সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা হাসপাতালের ভিতর পুলিশের সহায়তায় অনায়াসে  ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দালাল জানায়, ভাই আমরা কি করবো আমাদের নিকট থেকে প্রতিদিন ৩০০০টাকা নিয়ে যায়, না দিলে ধরে নেয়। তাই আমরা প্রতি রাতে টাকা দিতে হয়। যে দোকান যে রাতে ডিউটি পরবে সে রাতে ঐ দোকানদার টাকা দিতে হবে। টাকা কিভাবে দেওয়া হয় জানতে চাইলে জানায়, থানা থেকে লোক আসে অথবা আমাদের নেতা আছে সে দিয়ে আসে। নেতা ডিবি অফিসে ও টাকা দেয়। হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীরা দালালদের হাসপাতালে প্রবেশে বাধা দিলে বিভিন্ন হুমকি দেয়। এসব দালাল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক একাধিক অভিযান পরিচালনা করেছেন।
অভিযানে এ পর্যন্ত দালাল সিন্ডিকেটের ১৫ জনকে গ্রেপতার করা হয় বলে তিনি জানান। এর পরও হাসপাতালের বাইরে থাকা বেনামী ফার্মেসি গুলোয় নিয়োজিত দালালদের দৌরাত্ম্য কমছে না। বরং দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে দালালরা আরো ব্যপরোয়া হয়ে উঠেছে। হাসপাতালের সামনে কিছু দোকান আছে দালালদের সাথে মিলে ব্যবসা পরিচালনা করছে দোকান গুলো হলো নুরপুর ড্রাগ হাউজ, কুচাইতলী ফার্মেসী, আজাদ মেডিকেল হল, নাঙ্গলকোট ফার্মেসী, ফারিন ফার্মা, সামিতা ফার্মেসী, মেডিসিন কর্ণার, এস.এ ড্রাগ হাউজ, নিউ আপন ফার্মেসী, সোহেল ফার্মেসী।
ঔষধ ফার্মেসী দোকানদারদের অভিযোগ ড্রাগ অফিস থেকে কখনো কোন দিন দেখতে আসেনা এখানে অবৈধ দোকন আছে কি নাই। ফলে অবৈধ দোকান থাকার কারণে দালালদের পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাছে এবং কিছু কিছু দোকান দালাল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে  ড্রাগ সুপার মোঃ অহিদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে থাকি। যখন মোবইল কোর্ট  ইন্সপেকশানে যায় তখন একটি দোকান দেখতে দেখতে অন্য সব দোকান বন্ধ হয়ে যায় ফলে আমরা অন্য দোকান গুলো বৈধ না অবৈধ তা বুঝতে পারছিনা। যদি কোন অবৈধ দোকান থাকে আর আমাদের কাছে ইনফরমেশন আসে তাহলে আমরা প্রশাসনের সহযোগীতা নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। আর দালালদের ব্যাপারটি ভিন্ন দালাল ধরার এখতিয়ার আমাদের নেই। যদি কোন দোকান দালাল দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আমরা অভিযোগ পেলে প্রমাণ সাপেক্ষে ঐ দোকানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
এব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক মোঃ হাবিব আব্দুল্লা সোহেল জানান, আমি নিজেও দালাল দৌড়িয়েছি। নিজে ধরে পুলিশে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও দালাল কমছে না। দালাল নির্মূল করতে হলে স্থানীয়দের সহযোগীতা এবং প্রশাসনিক সহযোগীতা প্রয়োজন। তাই সকলে এগিয়ে এলে দালাল আশা করি অনেকাংশে কমে আসবে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হচ্ছে মুমূর্ষু রোগীদের শেষ আশ্রয়স্থল। এ হাসপাতালে বেশিরভাগ সময় জরুরী রোগীদের নিয়ে  আসা হয়। কখনও কখনও রাস্তায়ই মারা যাচ্ছে এরকম রোগী আনা হয়। এ পর্যন্ত একাধিক অভিযানে দালাল সিন্ডিকেটের অনেক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত দালালদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়েছে। কিছু দিন জেলে থাকার পর জামিনে এসে তারা আবার ও পুর্বের অপকর্মে লিপ্ত হয়।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বোর্ডের সভাপতি ও কুমিল্লা সদর আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য হাজী আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার জানান, কুমিল্লা সদর আসনে আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রতিটি রাস্তা ঘাট, মসজিদ মন্দির সহ সকল সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করেছি। সদর উপজেলায় এমন কোন জায়গা ন্ইে যেখানে রাস্তা, ব্রিজ কালভার্ট মসজিদ মন্দির ইত্যাদির উন্নয়নের কাজ করি নাই। একই ভাবে প্রতিটি হাসপাতালে উন্নয়নের নানা কাজ হাতে নিয়েছে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দালাল ও মাস্তান বন্ধে আমরা বোর্ড সভায় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি যেমন দালাল বন্ধ করা, সাধারণ মানুষের জন্য সঠিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, গরীব রোগীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা প্রদান, গরীব  রোগীদের বিনামূল্যে ঔষধ প্রদান, হাসপাতালের ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করা।
কুমিল্লা কুচাইতলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গেইট সংলগ্ন ঔষধ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ মমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা যারা বৈধভাবে ব্যবসা করছি সকলে চাই অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং দালালদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হউক। স্থানীয়ভাবে আমরা সকল প্রকার সহযোগীতা করার জন্য প্রস্তুত আছি।
এব্যাপারে আমরা স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং ঔষধ ব্যবসায়ী বৃন্দ সকলে হাসপাতালের পরিচালকের সাথে সাক্ষাত করেছি। সাক্ষাতে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ, দালাল নির্মূল এবং গেইটের শৃংখলা বজায় রাখার জন্য স্থানীয়দের সহযোগীতা চেয়েছেন এবং আমরা সকল প্রকার সহযোগীতা করার জন্য প্রস্তুত আছি বলে স্যারকে জানিয়েছি।

05 June 2015

ফজলুল হালিম চৌধুরী

ফজলুল হালিম চৌধুরী


ফজলুল হালিম চৌধুরী (জন্ম: ১ আগস্ট, ১৯৩০ মৃত্যু: ৯ এপ্রিল, ১৯৯৬) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমীর একজন ফেলোতিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৫১ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেনতিনি ১৯৫৬ সালে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন
তিনি ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন১৯৫৬ সালে তিনি সহকারী অধ্যাপক পদে উন্নীত হন১৯৫৮ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রীডার হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৬৩ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হনতিনি ১৯৬৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত রসায়ন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন১৯৭২ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডীন নির্বাচিত হনতিনি ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসে উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেনএছাড়া তিনি বাংলাদেশ রসায়ন সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৫১ সালে রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেনতাঁর স্নাতকোত্তর থিসিসের বিষয় জুটের বিভিন্ন অংশের রাসায়নিক বিশ্লেষণ এবং তার ব্যবহারবাংলাদেশের কৃতী বিজ্ঞানী আবুল হুস্সাম আমাকে বলেছিলেন, তিনি ঢাবির রসায়ন বিভাগের ছাত্র থাকাকালে পুনরায় ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখেছিলেন যে এই গবেষণাটি জুটের ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে১৯৫৩ সালে রয়্যাল কমিশন ফর এক্সবিশন স্কলারশিপ নিয়ে ১৯৫৬ সালে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Patuch Prize লাভ করেন ভারতীয় ও পাকিস্তানি ছাত্রদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ থিসিস প্রদান করার জন্যকিন্তু ১৯৫৮ সালে তাঁর চেয়ে কম যোগ্যতার একজন শিক্ষককে রিডার মনোনীত করায় তিনি ঢাবির রসায়ন বিভাগ থেকে পদত্যাগ করেন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে যোগ দেনকিন্তু লক্ষণীয় যে পরবর্তী সময়ে উপাচার্য হয়ে ঢাবির রসায়ন বিভাগের তাঁর শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক মোকারম হোসেন খোন্দকারের নামে মোকারম বিজ্ঞান ভবন (১৯৮২-৮৩) নির্মাণ করেন
৯৬৭ সালে রাবিতে ফলিত রসায়ন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেনতিনি নবাব আবদুল লতিফ হলের প্রথম প্রভোস্ট এবং ১৯৭২ সালে রাবিতে ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেনতিনি ছাত্র-শিক্ষকদের সার্বিক কল্যাণে সব সময় সক্রিয় ছিলেন১৯৫৭-৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৫৮-৫৯ সালে রাবির শিক্ষক ক্লাবের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন১৯৭০-৭২ সালে রাবির শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন

তিনি ১৯৭৩ সালে ইউকে চলে যান১৯৭৪-এ বঙ্গবন্ধু তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে বিজ্ঞানবিষয়ক সদস্য নির্বাচিত করেন১৯৭৬ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেটে জয়ী হয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন১৯৭৬-৮৩ সালে সামরিক স্বৈরাচারী সরকারের উত্থানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে থাকে, কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা যা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে বিঘ্নিত করতে পারে, তা সমর্থন করেননিতাঁর সময় সামরিক স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলন, বিক্ষোভ, হরতাল, পে-কমিশন প্রদত্ত বেতন স্কেল প্রান্তিক সুবিধাদি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলেছেএর পরও তিনি ধৈর্য হারাননি এক মুহূর্তের জন্যকিন্তু ১৯৮৩ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে যখন মজিদ খান শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন উত্তাল হয়, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিরুদ্ধে তৎকালীন স্বৈরাচারী শাসনে এক চরম নজিরবিহীন পুলিশি অ্যাকশনের প্রতিবাদে ১৯৮৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেনতিনি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বৈরাচারী হস্তক্ষেপ বরদাশত করেননিএরপর তিনি বিজ্ঞান উপদেষ্টা হিসেবে ১৯৮৫-৯১ সালে ইউনেসকো দিল্লিতে কর্মরত ছিলেনজীবনসায়াহ্নে ১৯৯৬ সালের প্রথমার্ধে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বাবা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা প্রসারে বক্তব্য দেনএই অনুষ্ঠানটি ছিল মৃত্যুর আগে তাঁর শেষ প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণ
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের দুরবস্থা

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের দুরবস্থা


নিজস্ব প্রতিবেদক: আইসিইউ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স, পর্র্যাপ্ত শয্যা, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি-চিকিৎসা উপকরণ সঙ্কটসহ বহুমুখী সমস্যায় রয়েছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। মঙ্গলবার রাতে চান্দিনায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলায় আহতদের কুমেকের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছিল। 

কিন্তু পর্যাপ্ত শয্যা এবং আইসিইউ না থাকায় বুধবার দুপুরের মধ্যেই আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠাতে হয়েছে।

২০১২ সালের ২১ নভেম্বর কুমেক হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের দ্বিতীয় তলায় বার্ন ইউনিট চালু করা হয়। শুরুতে মাত্র চারটি শয্যা নিয়ে এটি চালু হলেও স্বল্পসময়ের ব্যবধানে তা ১৮ শয্যায় উন্নীত করা হয়। 

বুধবার বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, শয্যার অভাবে অনেক রোগী ফ্লোরে রয়েছেন। বর্তমানে বার্ন ইউনিটে এক সহকারী অধ্যাপক, দুই রেজিস্ট্রার ও তিন সহকারী রেজিস্ট্রার রয়েছেন। শূন্য রয়েছে একজন করে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের পদ। 

এছাড়া জনবল কাঠামোতে নার্সদের পদ সৃষ্টি না হওয়ায় হাসপাতালের নিয়মিত নার্স দিয়েই বার্ন ইউনিটের সেবা চালু রাখা হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার জন্য ওয়ার্ড বয় রয়েছে একজন। এখানে পৃথক অস্ত্রোপচার কক্ষ এবং অ্যানেসথেশিয়াবিদ নেই।

১ বছরে এ বার্ন ইউনিটের বহির্বিভাগে ১ হাজার ২০২ জন এবং আন্তঃবিভাগে ১ হাজার ৫০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. হাবিব আবদুল্লাহ প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমানে অবকাঠামো বৃদ্ধির কাজ চলছে। এ কাজ শেষ হওয়ার পর শয্যাসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও জনবল বাড়ানো হবে। এতে বার্ন ইউনিটের চিকিৎসাসেবা আরও উন্নত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বার্ন ইউনিটের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক মির্জা মুহম্মদ তাইয়েবুল ইসলাম জানান, এখানে বর্তমানে ঢাকার মতো চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। আইসিইউ ইউনিট চালু, শয্যা বৃদ্ধি, উন্নতমানের আরও কিছু যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সসহ অন্যান্য শূন্য পদ পূরণ হলে ঢাকায় না গিয়ে রোগীরা এখানেই উন্নত ও পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পাবেন।