14 June 2015

কুমিল্লা নগরীর ফুটপাত হকারদের দখলে


নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ও বেশিরভাগ সড়কের ফুটপাত এখন সিএনজি স্ট্যান্ড ও হকারদের দখলে। সরকারি দলের কতিপয় নেতা, পুলিশ ও স্থানীয় সন্ত্রাসীরা হকারদের বসিয়ে লাখ লাখ টাকার মাসোয়ারা আদায় করছে। নগরীর কান্দিরপাড়, লাকসাম রোড, চকবাজার, রাজগঞ্জ, টনছম ব্রিজ, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ, শাসনগাছাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০টি অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড বসিয়ে প্রতিনিয়ত চাঁদা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ফুটপাত দখলমুক্ত করে যানজট নিরসনে অবিলম্বে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন নগরবাসী।

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে সারি সারি স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। হকাররা ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তার ওপর দোকান দিয়ে ব্যবসা করছে। ফলে পথচারীরা মাঝ রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করায় যানজট ছাড়াও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। নগরীর কান্দিরপাড় এলাকার পূবালী চত্বর থেকে নিউমার্কেট হয়ে মনোহরপুর, রাজগঞ্জ, ছাতিপট্টি, কাপড়িয়াপট্টি হয়ে চকবাজার পর্যন্ত, কান্দিরপাড় থেকে টনছম ব্রিজ পর্যন্ত, কান্দিরপাড় থেকে শাসনগাছা বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের ফুটপাতের অস্তিত্ব বোঝা দায়। কান্দিরপাড় চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন সড়কের দুইপাশের ফুটপাত ছাড়াও ৫-৬ ফুট রাস্তা হকাররা দখল করে নিয়েছে।

কান্দিরপাড় টাউনহলের পশ্চিম কর্ণার থেকে পূর্ব কর্ণার পর্যন্ত ড্রেনের ওপর বাঁশ ও কাঠের পাটাতন বসিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবেই ২ শতাধিক দোকান গড়ে তুলেছে হকাররা। কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরের আশপাশে প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশের ফুটপাতজুড়ে রয়েছে দোকানপাট। জুতা, ফল, কসমেটিক্স, কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্য-সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে ব্যবসা পরিচালনার কারণে সড়কে নিত্যদিন যানজট লেগেই থাকে। এসব দোকান নির্মাণ ও দখলবাজির নেপথ্যে রয়েছে শাসকদলের কতিপয় নেতা। পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তাও সড়ক দখলে সহায়তা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

আর এ ফুটপাত থেকে লাখ লাখ টাকা মাসোয়ারা আদায় করছে তারা। তাছাড়া নগরীর জনবহুল এলাকা কান্দিরপাড় টমছম ব্রিজ, শাসনগাছাসহ নগরীতে প্রায় ১৫টি অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড স্থাপন করে প্রায় ২৫-৩০ লাখ টাকা পুলিশ ও স্থানীয় সরকারদলীয় প্রভাবশালীরা হাতিয়ে নিচ্ছে। কথা হয় কুমিল্লা টাউনহল গেটসংলগ্ন সড়ক দখল করে খুচরা ফল বিক্রেতা আমির হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, ৫ হাজার টাকা দিয়ে স্থানীয় একজন প্রভাবশালী থেকে তিনি দোকানের দখল নিয়েছেন এবং দৈনিক ৩শ’ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়।

দখল পাইয়ে দেয়া এক ব্যক্তির পক্ষে একজন প্রতিদিন সন্ধ্যায় এ টাকা তুলে নেন। এছাড়া কোতোয়ালি মডেল থানার কনস্টেবল শহিদ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নাম ভাঙিয়ে ফুটপাতের অবৈধ ব্যবসায়ীদের থেকে চাঁদা তুলছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কুমিল্লা ছিন্নমূল হকার সমিতির সভাপতি হাসানুল আলম হাসান জানান, এ সমিতির সদস্য ৮১ জন। এ সংগঠনের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত ব্যবসায়ীরা মাসিক মাসোয়ারা দেয় না।

তাদের দৈনিক সঞ্চয় হিসেবে ১০ টাকা আদায় করে সমিতির অফিস খরচের জন্য নেয়া হয়। তবে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন সড়কের ফুটপাতে প্রায় ৭/৮ হাজার হকার রয়েছে। এদের নিয়ন্ত্রণ আমরা করি না। তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে হয়তোবা ব্যবসা করে।

এর বেশি কিছু বলতে পারি না। কুসিক সূত্রে জানা যায়, নগরীতে ৪৮২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে পাকা সড়ক রয়েছে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩৮০ কিলোমিটার রাস্তায় কোনো ফুটপাত নেই। বাকি সড়কের উভয়পাশ দিয়ে ফুটপাত আছে ২০ কিলোমিটার। যার অধিকাংশই হকারদের দখলে। তাছাড়া এসব গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ফুটপাতে রয়েছে অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড প্রায় ২০টি।

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।