13 June 2015

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে দালালদের কাছে জিম্মি রোগীরা


বিশেষ প্রতিনিধিঃ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগত রোগীরা দালাল ও বহিরাগত মাস্তানদের কারণে অতিষ্ট এবং সঠিক স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দালালরা এতই ব্যাপরোয়া যে রুগীদের আত্মীয় স্বজনদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা দিতে বাধ্য করে এবং না দিলে বিভিন্ন নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়।
বিভিন্ন সময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দালাল নির্মূলের উদ্যোগ নিলে ও তাতে কোন কাজ হচ্ছে না। আগত রোগীদের আত্মীয় স্বজন এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ আইনশৃংখলা বাহিনীর কিছু অসাধু ব্যক্তির সাথে হাত করে দালালরা তাদের এ অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। কাউকে পরোয়া করছে না। তারা এতই ব্যাপরোয়া যে  কেউ তাদেরকে কিছু বলতে চাইলে তারা আইনশৃংখলা বাহিনীর কিছু অসাধু ব্যক্তির  নাম ভাঙগিয়ে হুমকি ধমকি দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় লোকজন জানায় দালালদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে রোগীর স্বজনরা এক হাজার টাকার সরঞ্জাম ৫ থেকে ৭ হাজার টাকায় কিনতে বাধ্য হচ্ছে। দালালরা এতই বেপরোয়া যে হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করেই রোগীর লোকদের কে নানা রকম বুঝিয়ে তাদেরকে ঔষধ দিয়ে পরবর্তীতে চাপিয়ে দেয় অতিরিক্ত টাকা ৫০০টাকার ঔষধ ৫০০০টাকা দিতে হয়। শতাধিক দালালের সম্বয়ে রয়েছে সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা হাসপাতালের ভিতর পুলিশের সহায়তায় অনায়াসে  ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দালাল জানায়, ভাই আমরা কি করবো আমাদের নিকট থেকে প্রতিদিন ৩০০০টাকা নিয়ে যায়, না দিলে ধরে নেয়। তাই আমরা প্রতি রাতে টাকা দিতে হয়। যে দোকান যে রাতে ডিউটি পরবে সে রাতে ঐ দোকানদার টাকা দিতে হবে। টাকা কিভাবে দেওয়া হয় জানতে চাইলে জানায়, থানা থেকে লোক আসে অথবা আমাদের নেতা আছে সে দিয়ে আসে। নেতা ডিবি অফিসে ও টাকা দেয়। হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীরা দালালদের হাসপাতালে প্রবেশে বাধা দিলে বিভিন্ন হুমকি দেয়। এসব দালাল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক একাধিক অভিযান পরিচালনা করেছেন।
অভিযানে এ পর্যন্ত দালাল সিন্ডিকেটের ১৫ জনকে গ্রেপতার করা হয় বলে তিনি জানান। এর পরও হাসপাতালের বাইরে থাকা বেনামী ফার্মেসি গুলোয় নিয়োজিত দালালদের দৌরাত্ম্য কমছে না। বরং দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে দালালরা আরো ব্যপরোয়া হয়ে উঠেছে। হাসপাতালের সামনে কিছু দোকান আছে দালালদের সাথে মিলে ব্যবসা পরিচালনা করছে দোকান গুলো হলো নুরপুর ড্রাগ হাউজ, কুচাইতলী ফার্মেসী, আজাদ মেডিকেল হল, নাঙ্গলকোট ফার্মেসী, ফারিন ফার্মা, সামিতা ফার্মেসী, মেডিসিন কর্ণার, এস.এ ড্রাগ হাউজ, নিউ আপন ফার্মেসী, সোহেল ফার্মেসী।
ঔষধ ফার্মেসী দোকানদারদের অভিযোগ ড্রাগ অফিস থেকে কখনো কোন দিন দেখতে আসেনা এখানে অবৈধ দোকন আছে কি নাই। ফলে অবৈধ দোকান থাকার কারণে দালালদের পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাছে এবং কিছু কিছু দোকান দালাল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে  ড্রাগ সুপার মোঃ অহিদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে থাকি। যখন মোবইল কোর্ট  ইন্সপেকশানে যায় তখন একটি দোকান দেখতে দেখতে অন্য সব দোকান বন্ধ হয়ে যায় ফলে আমরা অন্য দোকান গুলো বৈধ না অবৈধ তা বুঝতে পারছিনা। যদি কোন অবৈধ দোকান থাকে আর আমাদের কাছে ইনফরমেশন আসে তাহলে আমরা প্রশাসনের সহযোগীতা নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। আর দালালদের ব্যাপারটি ভিন্ন দালাল ধরার এখতিয়ার আমাদের নেই। যদি কোন দোকান দালাল দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আমরা অভিযোগ পেলে প্রমাণ সাপেক্ষে ঐ দোকানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
এব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক মোঃ হাবিব আব্দুল্লা সোহেল জানান, আমি নিজেও দালাল দৌড়িয়েছি। নিজে ধরে পুলিশে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও দালাল কমছে না। দালাল নির্মূল করতে হলে স্থানীয়দের সহযোগীতা এবং প্রশাসনিক সহযোগীতা প্রয়োজন। তাই সকলে এগিয়ে এলে দালাল আশা করি অনেকাংশে কমে আসবে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হচ্ছে মুমূর্ষু রোগীদের শেষ আশ্রয়স্থল। এ হাসপাতালে বেশিরভাগ সময় জরুরী রোগীদের নিয়ে  আসা হয়। কখনও কখনও রাস্তায়ই মারা যাচ্ছে এরকম রোগী আনা হয়। এ পর্যন্ত একাধিক অভিযানে দালাল সিন্ডিকেটের অনেক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত দালালদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়েছে। কিছু দিন জেলে থাকার পর জামিনে এসে তারা আবার ও পুর্বের অপকর্মে লিপ্ত হয়।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বোর্ডের সভাপতি ও কুমিল্লা সদর আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য হাজী আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার জানান, কুমিল্লা সদর আসনে আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রতিটি রাস্তা ঘাট, মসজিদ মন্দির সহ সকল সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করেছি। সদর উপজেলায় এমন কোন জায়গা ন্ইে যেখানে রাস্তা, ব্রিজ কালভার্ট মসজিদ মন্দির ইত্যাদির উন্নয়নের কাজ করি নাই। একই ভাবে প্রতিটি হাসপাতালে উন্নয়নের নানা কাজ হাতে নিয়েছে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দালাল ও মাস্তান বন্ধে আমরা বোর্ড সভায় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি যেমন দালাল বন্ধ করা, সাধারণ মানুষের জন্য সঠিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, গরীব রোগীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা প্রদান, গরীব  রোগীদের বিনামূল্যে ঔষধ প্রদান, হাসপাতালের ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করা।
কুমিল্লা কুচাইতলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গেইট সংলগ্ন ঔষধ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ মমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা যারা বৈধভাবে ব্যবসা করছি সকলে চাই অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং দালালদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হউক। স্থানীয়ভাবে আমরা সকল প্রকার সহযোগীতা করার জন্য প্রস্তুত আছি।
এব্যাপারে আমরা স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং ঔষধ ব্যবসায়ী বৃন্দ সকলে হাসপাতালের পরিচালকের সাথে সাক্ষাত করেছি। সাক্ষাতে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ, দালাল নির্মূল এবং গেইটের শৃংখলা বজায় রাখার জন্য স্থানীয়দের সহযোগীতা চেয়েছেন এবং আমরা সকল প্রকার সহযোগীতা করার জন্য প্রস্তুত আছি বলে স্যারকে জানিয়েছি।

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।