21 March 2016

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পদে পদে সমস্যা


কুমিল্লা রিপোর্ট২৪ ডেস্কঃ বিশাল এলাকা নিয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শাখা। শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ধর্মপুরে এর অবস্থান। কলেজে ঢুকতেই কলাভবনের দেয়ালজুড়ে সাংসদ বাহাউদ্দিন বাহারের একটি পোস্টার চোখে পড়ে। অবশ্য শহরজুড়েই তাঁর পোস্টার।
গত শনিবার এই প্রতিবেদকেরা যখন সেখানে যান, তখন দুপুরের বিরতি চলছে। ভবনের ভেতরে এবং বাইরে ছাত্রছাত্রীরা ইতস্তত ঘোরাফেরা করছিলেন। দোতলায় অধ্যক্ষ মো. আবদুর রশীদের কক্ষ। তাঁর কক্ষে টাঙানো তথ্য-সংবলিত বোর্ডের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁকে জিজ্ঞেস করি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত কত হওয়া উচিত? তিনি মৃদু হাসলেন।
উন্নত দেশে এই অনুপাত ১: ৩০-এর বেশি নয়। কিন্তু ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১: ১৭৯। কলেজটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪ হাজার ৯৮৭। এর মধ্যে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ২ হাজার ৪০৭ জন, স্নাতক পাস কোর্সে ৪ হাজার ৬০২, স্নাতক (সম্মান) ১০ হাজার ২৩৪ এবং স্নাতকোত্তরে শিক্ষার্থী ৪ হাজার ৭৯৮ জন। অন্যদিকে শিক্ষক আছেন মাত্র ১৩৯ জন।
সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে, একটি শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ১৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে। এই সংখ্যা ৩০০ হলে শাখা করতে হবে দুটি। কিন্তু শিক্ষক স্বল্পতায় সব বিভাগে সেটি সম্ভব হয় না। কোনো কোনো শ্রেণিতে ১৮০ জন পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ উপস্থিত থাকলেও সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৮ জন। একজন শিক্ষকের পক্ষে শতাধিক শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণ করা প্রায় অসম্ভব।
শ্রেণিকক্ষের সমস্যাও প্রকট। সবচেয়ে বড় সমস্যা শিক্ষার্থীদের আবাসিক ও যাতায়াতে। আবাসনের ব্যবস্থা আছে মাত্র ১ হাজার ৩৫ জন শিক্ষার্থীর। ছাত্রদের দুটি হলে ৬৩৫ জন। আর ছাত্রীদের একটি হলে থাকেন ৪০০ জন। কলেজের দুটি শাখা শহরের দুই প্রান্তে। উচ্চমাধ্যমিক শাখা শহরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ের রানীদিঘির পশ্চিম পাড়ে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শাখা ধর্মপুরে। শহর থেকে সেখানে যাতায়াতে ভাড়া গুনতে হয় শিক্ষার্থীদের।
কলেজে শ্রেণিকক্ষ আছে ডিগ্রি শাখায় ৭৩টি, উচ্চমাধ্যমিকে ২২টি। বিজ্ঞানাগার ডিগ্রি শাখায় আটটি, উচ্চমাধ্যমিকে ছয়টি। অফিস ডিগ্রি শাখায় ২৬টি, উচ্চমাধ্যমিকে ছয়টি, যেগুলোতে অর্ধেকের স্থান সংকুলান হয়। একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র থেকে তিন কিলোমিটার দূরে দুটি ক্যাম্পাস পরিচালনা করাও কঠিন কাজ।
অধ্যক্ষও বলেন, সব বিভাগেই শিক্ষকের সংকট আছে। তবে পরিসংখ্যান, ইসলামের ইতিহাসসহ কয়েকটি বিভাগের অবস্থা খুবই নাজুক। তিন-চারজন শিক্ষক দিয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণি পর্যন্ত পড়াতে হয়। অতিথি শিক্ষক দিয়ে কোনো কোনো বিভাগের পাঠ কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হলেও তাঁদের মান উন্নত নয়।
অতিথি শিক্ষকদের বেতন কোত্থেকে দেওয়া হয়, এ প্রশ্নে শিক্ষক পরিষদের সভাপতি জহিরুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, ছাত্রকল্যাণ তহবিলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে ৪১০ টাকা করে নেওয়া হয়, তা থেকেই অতিথি শিক্ষকদের সম্মানী দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য বাসও কেনা হয়েছে ওই তহবিলের টাকা দিয়ে।
কলেজে ঠিকমতো ক্লাস না হওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে অধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষাবর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বছরে ৮৪ দিন বন্ধ থাকে। এর বাইরে শুক্রবার বাদ দিলে বাকি সময়টা ক্লাস হয়। প্রতিবছর কোর্স পরীক্ষা হয়। ক্লাসে ৬০-৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে।
ক্যাম্পাসে ইংরেজি, হিসাবরক্ষণ ও দর্শন বিভাগের তিনজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপ করলে তাঁরা জানান, তাঁরা ক্লাসের বাইরে কলেজের বা বাইরের কোনো শিক্ষকের কাছে কোচিংয়ে পড়েন।
কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রধান রেহানা পারভীন বলেন, শুরুতে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো ক্লাস করলেও দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলেই উপস্থিতির হার কমতে থাকে। এ সময়ে শিক্ষার্থীরা কোচিংনির্ভর হয়ে পড়ে। আগে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো। গত বছর থেকে এসএসসি ও এইচএসসির নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি-প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। এর ইতিবাচক-নেতিবাচক দুটি দিকই আছে। উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর খোলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেখানে অভিজ্ঞ শিক্ষক নেই, সেখানে উচ্চতর শ্রেণি খোলা আত্মঘাতী ব্যাপার।
ভিক্টোরিয়া কলেজ দেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি। পুরোনো সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে পেরেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ মো. আবদুর রশীদ বলেন,‘আমরা চেষ্টা করছি। এইচএসসি এবং স্নাতকোত্তরে আমাদের ছেলেমেয়েরা তো ভালো ফল করছে।’

সুত্রঃ প্রথম আলো

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: