14 March 2016

রূপ হারিয়ে দখলে-দূষণে গোমতী


নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দখল, দূষণ আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে রূপ হারিয়েছে গোমতী। প্রতিবছরের নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত নদীর পাড়ের বাঁধ ও ভেতরের মাটি অবাধে কেটে বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে বাঁধের ভেতরের গাছগাছালি ধ্বংস হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।
কুমিল্লার ইতিহাসবিদ গোলাম ফারুক জানান, শহরের গা ঘেঁষে নদীর সাড়ে চার কিলোমিটার ও শহরের ভেতরে পড়েছে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার। ষাটের দশকে পাকিস্তান সরকার কুমিল্লা শহরকে রক্ষা করার জন্য একটি বাঁধ নির্মাণ করে। এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গোমতী নদী দুই ভাগে বিভক্ত হয়। শহরের ভেতরে রয়েছে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার পুরোনো গোমতী। বাঁধের কারণে এ অংশে সব সময় পানি থাকে। কিন্তু মূল নদীতে পানির গতিধারা থাকে কম।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুরোনো গোমতী নদী এলাকার সাড়ে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচটি এলাকায় বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। ওই রাস্তা দিয়ে নদীর দুই পারের বাসিন্দারা যাতায়াত করে। ডুমুরিয়া চানপুর এলাকায় নদীর মধ্যে ময়লা ফেলা হচ্ছে। কাপ্তানবাজার এলাকায় নদীর ভেতরে নির্মাণ করা হচ্ছে ভবন। এ ছাড়া গয়ামবাগিচা, গাংচর, ফারুকী হাউস, শুভপুর এলাকায় বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, পুরোনো নদীর দুই পারে অন্তত ৬০০ জন অবৈধ দখলদার রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৫০ জনের বাড়ি নদীর দুই পারের বাইরে। জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দফায় দফায় চিঠি দিলেও দখলদারদের উচ্ছেদ করা যায়নি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এককালে পানিতে টইটম্বুর গোমতী তার রূপ হারিয়েছে। গতিপথও পরিবর্তন হয়েছে। সব মিলিয়ে হতশ্রী হয়ে পড়েছে নদীটি। দখল ও দূষণ ঠেকাতে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
জানতে চাইলে পাউবো কুমিল্লার পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল আমিন বলেন, ‘গোমতীকে রক্ষা করতে হলে কুমিল্লার রাজনীতিবিদদের এককাট্টা হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় এ নদীর বাঁধ ধ্বংস হয়ে ঝুঁকিতে পড়বে নগরবাসী। দখল-দূষণ ঠেকানো আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়।’

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: