দেবীদ্বারের ঐতিহ্য 'গুনাইঘর বায়তুল আজগর সাত গম্বুজ জামে মসজিদ'। এটি নির্মাণশৈলির দিক থেকে দেশের বিখ্যাত মসজিদগুলোর অন্যতম মসজিদ হিসাবে দাবী করা হচ্ছে। 'গুনাইঘর বায়তুল আজগর সাত গম্বুজ জামে মসজিদ'টি কুমিল্লা জেলা সদর থেকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক হয়ে উত্তর-পশ্চিম কোনে দেবীদ্বার পৌর এলাকায় এবং দেবীদ্বার সদর থেকে দু'কিলোমিটার পশ্চিম ও সামান্য দক্ষিণে গুনাইঘর গ্রামে অবস্থিত।
নতুন এবং পুরাতন নির্মাণ পদ্ধতির সংমিশ্রণে অসংখ্য ক্যালিওগ্রাফিতে আঁকা ব্যাতিক্রমধর্মী নির্মাণ শৈলির সাত গম্বুজ মসজিদটি দেশব্যপী দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ মসজিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ক্যালিওগ্রাফি ও নির্মাণ কৌশল। মসজিদের চার কোনায় চারটি মিনার রয়েছে। চার মিনারের কোন মসজিদ বাংলাদেশে এটাই প্রথম বলে মনে করা হচ্ছে। মিনারগুলোর উচ্চতা ৮০ফুট। এতে গম্বুজ রয়েছে ৭টি। মসজিদটি ৪৮ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩৬ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট। এ মসজিদের মূল অংশে শতাধিক মুসুলস্নী নামাজ পড়তে পারেন। এ ছাড়া মসজিদটির বারান্দায় অর্থাৎ সামনের টাইলস করা খালী জায়গায় মূল অংশের দ্বিগুণ মুসুল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের উপরে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা রয়েছে। এতে বিভিন্ন রং'র বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদে লিখা 'আল্লাহু' শব্দটি রাতের অন্ধকারে তারকার মতো জ্বল জ্বল করে জ্বলতে থাকে। অনেক দূর থেকে এ আলো দেখা যায়। মসজিদটি'র পশ্চিম পার্শ্বে দৃষ্টি নন্দিত একটি ফল ও ফুলের বাগান আছে। এছাড়াও রয়েছে বিশাল আকৃতির জলধার। এর পাড়সহ চার দিক শ্বেত পাথরে মোড়ানো।
ক্যালিওগ্রাফির দিকে নজর দিলে অবাক হতে হয়। এখানে বাংলা ও আরবিতে ক্যালিওগ্রাফি করা হয়েছে। কারুকাজ ও নকসা শিল্পী হিসাবে কাজ করেছেন শিল্পী আরিফুর রহমান। মসজিদটির স্থপতি ছিলেন শাহিন মালিক। আরবি অক্ষরে সুন্দর করে লিখা হয়েছে 'সুরা আর রহমান', 'আয়তুল কুরছি' ও 'চার কুল'। মসজিদের ভেতরের মূল অংশে ৫টি গম্বুজ আছে। একটিতে লিখা আয়তুল কুরসী। অন্য চারটি গম্বুজের ভেতরে লিখা ৪টি কুল। মসজিদটির বাহিরের আবরনে বহু চাঁদ তারা আঁকা রয়েছে। মসজিদটিতে ইট, সিমেন্ট, বালির পাশাপাশি চিনামাটি ও টাইলস ব্যবহৃত হয়েছে। কারুকার্য করা হয়েছে মোঘল তুর্কী ও পারস্যের সংমিশ্রণে। এখানে ৩শত ৫০মন চিনামাটির টুকরো ও দু'শতটি গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদটিতে ৬টি এসি ও একটি ঝারবাতি আছে। একটি আধুনিক মসজিদে যা কিছু থাকার কথা সবই আছে।
এ মসজিদটি তৈরী করেছেন দেবীদ্বারের সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মূন্সী। এটি তৈরী করতে ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। অর্থদাতাদের নাম পাথরের ফলকে লিখা আছে। ২০০২সালের ১০ জুলাই মসজিদটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মূন্সী এবং ২৮ জন শ্রমিক টানা কাজ করে প্রায় আড়াই বছরে শেষ করেন। ২০০৫সালের ১৪ জানুয়ারী মসজিটি প্রায় শতাধিক মুসুল্লী নিয়ে নামাজ আদায়ের মধ্যদিয়ে উদ্বোধন করেন তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
মসজিদটি'র প্রতিষ্ঠাতা কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) নির্বাচনী এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মূন্সী বলেন, বাংলাদেশের মানচিত্রে দেবীদ্বারের নামটি বিশেষ ভাবে স্থান দেয়ার জন্য এ মসজিদটি তিনি নির্মান করেন।
মসজিদটির স্থপতি শাহিন মালিক।
ক্যালিওগ্রাফি, কারুকাজ ও নকশার শিল্পী বশির মেসবাহ।
0 facebook: