26 February 2016

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার বদলে যাওয়ার গল্প


মহিউদ্দিন মোল্লাঃ মেঘনা নদীর পাড়ে কুমিল্লার একটি ছোট উপজেলা। চারিদিকে নদী আর খাল। এখানে মানুষের একমাত্র পেশা ছিলো কৃষি কাজ আর মাছ ধরা। সড়ক না থাকায় সবাই চলাচল করতো নৌকায়। বিকাল ৩টার পর কেউ বাড়ি থেকে বের হতো না পথে ডাকাতির ভয়ে। বাইরে থেকে এলে পাশে গজারিয়া কিংবা তিতাসে স্বজনদের বাড়িতে রাত্রি যাপন করতেন। যাতায়ত ব্যবস্থা না থাকায় বাইরের লোকজন এখানে আত্মীয়তাও করতে চাইতো না। এছাড়া এলাকার অবস্থা সম্পন্নরা অধিকাংশ থাকেন ঢাকায়। উপজেলা হওয়ার পর থেকে সেই চরাঞ্চলের দিন বদলাতে শুরু করেছে। মানুষ রাস্তায় গাড়ি নিয়ে চলছে, উপজেলা সদরের পাশে হাসপাতাল হয়েছে। সবাই প্রয়োজনে চিকিৎসা নিতে পারছে। উপজেলা সদরে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ বাড়ায় মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলাটি কুমিল্লা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে। উপজেলার পশ্চিমে লাগোয়া  মেঘনা নদী পেরুলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা।
কুমিল্লার হোমনার ৪টি এবং দাউদকান্দির ৩টি ইউনিয়ন নিয়ে ১৯৯৮ সালে মেঘনা উপজেলা গঠিত হয়। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা শফিকুল আলম ১৯৯৬ সালে মেঘনা থানা বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেন। পরে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেঘনা থানা বাস্তবায়ন করেন। উপজেলার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শফিকুল আলম। উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের ফারুক হোসেন বলেন, শফিকুল আলম মেঘনা উপজেলার রূপকার। এখানে তার নেতৃত্বে ব্রিজ-রাস্তা হয়েছে। ১০ বছরের ব্যবধানে ৫০ হাজার টাকার জমির দাম ৫০ লক্ষ টাকা হয়েছে। এখানের সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যরা মেঘনার বাসিন্দা নয়, তাই তারা এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন নি।  উপজেলার লুটেরচর গ্রামের আবুল হাসেম বলেন, মেঘনার রাস্তায় কখনও গাড়ি চলবে তা ছিলো স্বপ্নে বিষয়। উপজেলা হওয়ার পর পাল্টে যায় মেঘনার জীবন যাত্রা। ওমরাকান্দা ও ভাটের চর ব্রিজ ২টি হয়ে গেলে আরও উন্নত হবে মেঘনার মানুষের জীবন যাত্রা। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেঘনা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শফিকুল আলম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এসএম হল ছাত্রলীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম। তখন থেকে স্বপ্ন দেখতাম এলাকাটি যেনো উন্নত হয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হয়। আমার সে স্বপ্নের অনেকাংশ পূরণ হয়েছে। ভাটেরচর-মেঘনা সড়কে দুইটি ব্রিজের কাজ বাকী রয়েছে। আশা করছি ৬ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপর মেঘনাকে আর কেউ পিছিয়ে পড়া এলাকা বলতে পারবে না। কারণ মেঘনা উপজেলা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের নিকটে, এখানে শিল্প কারখানা স্থাপনের দারুণ পরিবেশ রয়েছে।
এখানে চালিভাঙ্গায় ৪ শ’ বিঘা খাস জমি রয়েছে। এতে ইপিজেড করা যেতে পারে। তিনি মেঘনায় আরো কয়েকটি ব্রিজ, বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপন করতে চান। ১৯৯১ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি আওয়ামীলীগ থেকে কুমিল্লা-১ আসন সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন পেয়ে ছিলেন। দলের স্বার্থে সে সময় তিনি নির্বাচন করেননি। তবে তিনি এলাকার উন্নয়নে পুনরায় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান।


শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: