প্রভাষ আমিনঃ ঐতিহ্যের শহর কুমিল্লাকে বলা হতো ব্যাংক আর ট্যাংকের শহর। ব্রিটিশ আমলেই অন্তত ১১টি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ছিল কুমিল্লায়।
সমবায়ভিত্তিক নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও দারুণভাবে বিকশিত হয়েছে কুমিল্লায়। আর ট্যাংক মানে জলাধার। কুমিল্লায় অসংখ্য দীঘি আর পুকুর আছে। কুমিল্লার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ধর্মসাগর আসলে সাগর নয়, দীঘি। কিন্তু এত বড় দীঘি হওয়ায় একে সাগর বলে ডাকে মানুষ। এছাড়া রানীর দীঘি, উজির দীঘি, তালপুকুর; এমন অনেক পুকুর বা দীঘি মন কেড়েছে কবি-সাহিত্যিকদেরও। এসব জলাধার কুমিল্লার ঐতিহ্যেরই অঙ্গ। মালিকানা যারই হোক, এলাকার মানুষ নির্বিশেষে এসব জলাধার ব্যবহার করে। প্রয়োজনে আশপাশের এলাকার মানুষের পানির চাহিদা মেটায় এসব জলাধার। পরিবেশ সংরক্ষণেও রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু সেই ঐতিহ্যে পড়ছে এখন লোভের থাবা।
গত মাসের মাঝামাঝি কুমিল্লার ঝাউতলার খ্রিস্টানপাড়া এলাকায় সবার চোখের সামনে দিনে দুপুরে ভরাট করা হয়েছে দুটি পুকুর। শুরুতে রাতের বেলায় ট্রাক্টর দিয়ে মাটি এনে ভরাট শুরু হলেও পরে সব চক্ষুলজ্জা বিসর্জন দিয়ে দিনে দুপুরে দ্রুতগতিতে পুকুর দুটি ভরাট করা হয়। লেখার সঙ্গের ছবিগুলো ভরাট করার সময়কার। তবে সর্বশেষ খবর হলো পুকুর দুটি পুরোপুরি ভরাট করা হয়ে গেছে। পুরো জায়গাটি টিন দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। জানা গেছে, এখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। যতবার এই পুকুরের ছবিগুলো দেখি, ভাবি কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন চমৎকার দুটি পুকুর ভরাট হয়ে গেছে; ততবার কষ্টে আমার বুকটা ভেঙে যায়। শুনেছি ব্রিটিশ আমলে খনন করা পুকুর দুটির সর্বশেষ মালিকানা বদলের সময় শর্ত ছিল, পুকুর দুটি ভোগদখল করা যাবে, তবে কখনোই ভরাট করা যাবে না। হায় আমাদের লোভ কতটা সর্বগ্রাসী; ঐতিহ্য, পরিবেশ কিছুই আমাদের থামাতে পারে না। হায়, দেশটা বোধহয় মগের মুল্লুক হয়ে গেল।
একসময় বেশ কয়েক বছর কুমিল্লায় থাকার সুবাদে আমি সেখানকার রাজনীতিবিদদের অনেককেই চিনি। এই পুকুরচুরির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে যাদের নাম এসেছে, আমি তাদের চিনি। তাই আমার বিশ্বাস হয়নি তারা এমন বেআইনি কাজে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে পারেন। আমি জানি তারা সবাই কুমিল্লাকে ভালোবাসেন। কুমিল্লার ঐতিহ্য এবং সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে এমন কোনো কাজ তারা করতে পারেন, এটা আমার বিশ্বাস হয় না।
আমি এই লেখার মাধ্যমে কুমিল্লা সদরের সাংসদ হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনারা ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ নিন, উদ্যোগ নিন, এ অন্যায়ের প্রতিকার করুন।
মূল লেখক -
প্রভাষ আমিন
এসোসিয়েট হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ
0 facebook: