02 February 2016

মহাসড়কের পাশে কাচাঁবাজার উচ্ছেদে গড়িমসি


সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: হাইকোর্টের দেওয়া মহাসড়কের পাশে অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের নির্দেশ দু’মাসেও কার্যকর করছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ফলে বুড়িচংয়ের নিমসার কাচাঁবাজারে বিপদজনক ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে ব্যবসায়ীরা।
যে কোন মুহুর্তে এস্থানে মহাসড়কের দু’পাশ সহ রোডডিভাইডারের উপর দূর্ঘটনা কবলিত হয়ে বা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কোন যানবাহন সেই সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপর উঠে পড়লে ক্রেতা-বিক্রেতা সহ বড় ধরনের হতাহতের আশংকা থাকলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এক্ষেত্রে রয়েছে নিরব।
ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের বুড়িচংয়ের মোকাম ইউনিয়নের নিমসার এলাকায় রাস্তার দু’পাশ সহ মহাসড়কের ডিভাইডারের উপর ঘর নির্মান কওে ব্যবসা পরিচালনা করছেন ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন ধরে চরম ঝুঁকি নিয়ে এসব ব্যবসায়ীরা তাদেও ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনা করলেও সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ সেটা দেখেও না দেখার ভান করছে।
সরেজমিন ঘুরে স্থানীয় বিভিন সুত্রে আলাপ করে জানা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীন মহাসড়কের দু’পাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় এই নিমসার বাজারটির অবস্থান।
প্রতিদিন এই বাজারে রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, জয়দেবপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, বরিশাল, সিলেট, নোয়াখালী, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে পাইকার ব্যবসায়ীরা নানাজাতের মৌসুমী তরিতরকারি,শাক-সবজি,ফল-মূল নিয়ে আসে।
পরবর্তীতে আবার সেখান থেকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এসকল মালামাল ক্রয় কওে কুমিল্লা মহানগরী সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও ফেনী, চট্রগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ঢাকা, সিলেটসহ বিভিন্নস্থানে নিয়ে যাচ্ছে বিক্রির উদ্দেশ্যে।
প্রতিদিন রাত যত গভীর হয় এই নিমসার কাচাঁবাজারের ব্যস্ততাও তত বাড়তে থাকে।
পরবর্তীতে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাজারের ব্যস্ততাও কমে যায়। স্থানীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুত্র জানায়,নিমসার বাজারটি মহাসড়কের কোল ঘেষে গড়ে উঠায় দেশের প্রধান জাতীয় এই ঢাকা-চট্র্রাম মহাসড়কের উপর শত শত ট্রাক, কভার্ডভ্যান, পিক-আপ, ট্রাক্টর,নসিমন, করিমন, ভটভটি, রিক্সাভ্যান রেখে প্রতিদিন গভীর রাত থেকে সকাল ১০/১১ টা পর্যন্ত মালামাল উঠানো-নামানো হচ্ছে। এতে ওই সকল যানবাহন সড়কের অধিকাংশ জায়গা দখল করে রাখায় মহাসড়কে চলাচলরত দ্রুতগতির যানবাহনগুলো নিমসার এলাকায় এসে ধীর গতিতে চলতে বাধ্য হচ্ছে। এতে সেখানে প্রতিদিনই যানজট লেগেই থাকে।
এছাড়াও মহাসড়কটি ফোর লেনে উন্নীত হওয়ায় মহাসড়কের মাঝখানে নিমসার এলাকায় থাকা ডিভাইডারের উপরও অনেকে ঘর নির্মান করে ব্যবসা পরিচালনা করছে। একেতো মহাসড়কের পাশে অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা তারউপর ফোর লেনের ডিভাইডারেও ঘর নির্মান কওে ব্যবসা পরিচালনা ওই স্থানটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
মহাসড়কের মাঝে গড়ে উঠা এসকল দোকান ঘরে বিভিন্নস্থান থেকে আসা বিক্রেতারা ট্রাক, কভার্ডভ্যান সহ অন্যান্য যানবাহন রেখে প্রতিদিনই মালামালা উঠা-নামা করায় সেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। মহাসড়কের মাঝের এই ডিভাইডাওে ব্যবসা পরিচালনার কতটা বৈধতা আছে সেবিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেকার ভান করায় বছরের পর বছর ধরে এখানে বসে ব্যবসা পরিচালনা করছে কিছু ব্যবসায়ী।
দায়িত্বশীল সুত্র নাম প্রকাশ না করার মর্তে আরো জানায়, মহাসড়কের পাশে এবং রোড ডিভাইডারের উপর গড়ে উঠা এইসকল জায়গার মালিক সড়ক ও জনপথ বিভাগ হলেও প্রতিবছর বুড়িচং উপজেলা প্রশাসন দরপত্র আহবান করে বাৎসরিক লীজ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এদিকে মহাসড়কের ডিভাইডারের উপর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় কখনো কোন যানবাহন দূর্ঘটনা কবলিত বা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওইসকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে উপর উঠে পড়লে বড় ধরনের হতাহতেরও আশংকা রয়েছে। কিন্তু প্রকাশ্যে এই ব্যবসা পরিচালনা করা হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিরবতা সাধারন মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে।
এদিকে গত ৭ ডিসেম্বর সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মহাসড়কের পাশে স্থাপিত অনুমোদনহীন স্থাপনা অপসারণে বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি এ কে এম সহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি রায় দিলেও প্রায় দু’মাসেও সংশ্ল্ষ্টি কর্তৃপক্ষ মহাসড়কের পাশ সহ রোড ডিভাইডারের উপর থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
হাইকোর্টের নির্দেশ এবং মহাসড়কের পাশের জায়গা সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীন হলেও কিভাবে বুড়িচং উপজেলা প্রশাসন ইজারা দিয়ে কোটি কোটি টাকা নিচ্ছে জানতে চাইলে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাইফউদ্দিন জানান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন মহাসড়কের উপর ও পাশে স ও জ’র জায়গায় কোন ইজারা দেয়নি। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে এবং হাইকোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়নে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের কাছে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে লিখিত আবেদন করেছি।
এদিকে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলুল জাহিদ পাভেল বলেন, মহাসড়কের উপর ও রাস্তার পাশে হাটবাজার,দোকান অপসারণে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট অবৈধ দোকানীদের নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে উপজেলা প্রশাসন থেকে নিমসার বাজারের জন্য এক নং খতিয়ানভূক্ত জায়গা বাৎসরিক লিজ দিয়েছি। আর যারা অবৈধভাবে মহাসড়কের উপর ও পাশে দোকান-পাট বসিয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: