23 April 2017

অসহনীয় যানজটে বিপর্যস্ত কুমিল্লা নগরবাসীর জীবন


কুমিল্লা নগরের তিন প্রান্তে দুটি বাস টার্মিনাল ও একটি বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। এগুলোকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। ফলে শাসনগাছা, আশ্রাফপুর ও চকবাজার দিয়ে নগরের ভেতরে প্রবেশ করতে যাত্রীদের বেশ বেগ পেতে হয়।
তার ওপর নগরের ভেতরে অনুমোদনহীন অন্তত ১০ হাজার ইজিবাইক ও ১৫ হাজার রিকশা চলাচল করে। সরু সড়ক দিয়ে এসব বাহনকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এর বাইরে সড়কের মধ্যে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকান নিয়ে বসা ও সড়কের মধ্যে মাইক্রোবাস রেখে যানজট সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নাকাল হয়ে পড়েছে নগরবাসী।
সম্প্রতি সরেজমিনে এলাকাবাসী ও পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরের শাসনগাছা বাস টার্মিনাল এলাকায় যত্রতত্র বাস দাঁড়িয়ে থাকার কারণে যানজট দেখা দিচ্ছে। এর পূর্ব দিকে দুই বছর ধরে পদচারী-সেতু নির্মিত হচ্ছে। এ কারণেও যানজট হচ্ছে। নির্মাণাধীন পদচারী-সেতু থেকে আরও দুই কিলোমিটার পূর্ব দিকে চকবাজার এলাকা। সেখানে রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইকের চাপ বেশি থাকায় যানজট দেখা দিচ্ছে। নগরের গুরুত্বপূর্ণ আশ্রাফপুর বাস টার্মিনাল এবং এর লাগোয়া টমছম ব্রিজ এলাকায় প্রতিদিন বাস, ট্রাক, টেম্পো, বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা, রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনের জট লেগেই থাকে। এ কারণে দক্ষিণ কুমিল্লার ছয়টি উপজেলার বাসিন্দাদের শহরে ঢুকতেই বেগ পেতে হয়।সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, নগরের গণপূর্ত বিভাগের সামনের সড়কের দুই পাশে মাইক্রোবাস ফেলে রাখা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সামনে, ফৌজদারি মোড়, লিবার্টি মোড় ও কান্দিরপাড়ের রামঘাট এলাকায় যত্রতত্র যানবাহন রাখার কারণে যানজট বাড়ছে। একই অবস্থা বাদুরতলা এলাকার ওয়াইডব্লিউসিএ স্কুল ও নগরের নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকার কুমিল্লা মডার্ন হাইস্কুলের সামনে।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স ইন্সপেক্টর আতিকুর রহমান বলেন, নগরে ২০০৭-০৮ সালে ব্যাটারিচালিত ৩০০ অটোরিকশার (ইজিবাইক) লাইসেন্স দেওয়া হয়। পরে সেগুলো আর নবায়ন করা হয়নি। এরপর অবৈধভাবে এখনো ইজিবাইক নামানো হচ্ছে। প্রতিটি ইজিবাইক গড়ে পাঁচ হাত জায়গা দখল করে। এ কারণে মূল নগরের ১৮টি ওয়ার্ডের ১৪৭ কিলোমিটার রাস্তার যত দূর চোখ যাবে, কেবলই চোখে পড়বে ইজিবাইক আর ইজিবাইক। ইজিবাইকের দাপটে অস্থির কুমিল্লাবাসী। তিন চাকার ওই যানের কারণে নগরে যানজট লেগেই থাকে।
জানা গেছে, নগরের কান্দিরপাড়, পুলিশ লাইনস, শাসনগাছা, টমছম ব্রিজ, চকবাজার, রাজগঞ্জ, সালাউদ্দিন হোটেল এলাকা, আদালতপাড়া, মোগলটুলি, কাপ্তান বাজার ও ধর্মপুর এলাকায় রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইকের ভিড় লেগেই আছে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন বলেন, ‘সীমিত জনবল দিয়ে আমরা যানজট নিরসনের চেষ্টা করছি। কেবল মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন নয়, সড়কের প্রকৌশলগত ত্রুটি ও অব্যবস্থাপনার কারণে নগরে যানজট বাড়ছে। যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য সিটি করপোরেশনকে সবার আগে উদ্যোগ নিতে হবে।’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহারে যানজট নিরসনের কথা উল্লেখ করেছি। দায়িত্ব নেওয়ার পর স্থানীয় সাংসদ মহোদয়, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।