01 April 2017

কুসিক নির্বাচনঃ মোশতাকের কারণে নৌকা ডুবি ও নতুন সেলফি উৎসব


উৎপল চক্রবর্ত্তীঃ একজন মহামান্য বন্ধু নেমন্তন্ন করেছেন , উপলক্ষ নতুন ফ্ল্যাটে উঠা। অনেক রথী মহারথীকে বলতে গিয়ে তিনি যে আমায় ভুলে যান নি -সেজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলাম আমি। তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন -শাদা ভাত না পলাও ? আমি বিনীত জানিয়েছিলাম , একদা যেমন ওম্নিভোরাস অর্থাৎ সর্বভুক প্রাণী ছিলাম আমি , সাপ ব্যাঙ কুইচ্চা কোন কিছুতেই আপত্তি ছিল না আমার , আছি এখনও আগেরই মতন ! সাহস নিয়ে আবদার করেছিলাম যদি সম্ভব হয় -সর্ষে তৈলে আর কাঁচা পেয়াজ মরিচে আলুর ভর্তাটি রেখো । বন্ধুটি কথা দিয়েছিলেন , রাখবেন। সে যাই হোক আমাদের নেমন্তন্নটি ছিল লাঞ্চের , এবং দিনটি ছিল সরকারী ছুটির দিন। দুপুর দেড়টার দিকেই ফেসবুকে ভেসে উঠল বন্ধুর পোস্ট হাই গাইস ওই আর রেডি , তোমাদের পদ ধূলির অপেক্ষায় আমার নতুন ফ্ল্যাট সাথে নতুন ফ্ল্যাটের বেশ কয়েকটি ছবি । সুসজ্জিত দেয়ালে  এবস্ট্রাক্ট চিত্রকলা , বারান্দার টবে ঝুলছে ঝুমকোলতা জবা আর অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত ডাইনিং টেবিলে সাজানো হরেক রকম খাবার । আমি ডাইনিং টেবিলের ছবি , জুম করে করে দেখলাম , না অনেক খুঁজেও পেলাম না আলুভর্তার কোন ছবি ! কিন্তু খেতে বসতেই, বন্ধুটি নিজ হাতে আমাকে আলু ভর্তাটি সার্ভ করল। আমি জানতে চেয়েছিলাম -তবে যে ফেসবুকে ছবিতে আলু ভর্তাটি ছিল না হে ! হো হো হো শব্দে হেসে উঠেছিল বন্ধু -আরে বেটা , ফটো সেশানে আলু ভর্তাও ছিল ,ছবি তোলার পরে দেখলাম ঠিক যাচ্ছিল না , তোর ভাবী বলল -ধুর! আলুভর্তা ফর্তা দিও না তো , লোকে কী বলবে !
তাই তো ! বেঁচে থাকার নাম যখন ফেসবুক আর খাবারের নাম যখন আলুভর্তা , তখন প্রেস্টিজ পাংচার হলে এই জীবন দিয়ে আমি কী করবো ভাই ? মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তকাল , জীবনের শেষ গ্লাস পানি খেয়ে নেবার সময় হাই গাইস! লেটস কাম এন্ড এনজয় দ্য লাস্ট সেলফি অব মাই লাইফ, হা হা হা বলতে বলতে  পানি খেতে খেতে , মরে চেগাইয়া চিতপটাং  হয়ে শুয়ে পড়ুন বিছানায় ! অতঃপর  সুধীজনের শুরু হয়ে যাক  ক্রন্দন , শিয়ালের মতো মানুষের কান্না হুক্কা হুয়া হুক্কা হুয়া ! এবার কুসিক নির্বাচনে দেখলাম , ভোটারের নতুন এক সেলফি উৎসব ! সেই গল্প পরে হোক ।
তার আগে উপরে উল্লেখিত গল্পটি থেকে , আমরা দেখি খন্দকার মোশতাক আহমেদ-এর নৌকাডুবি উপপাদ্যটি  প্রমাণ করা যায় কিনা ! আসুন জেনে নেই খন্দকার মোশতাক আহমেদ কে ছিলেন?
১৯১৮ সালে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দির দশপাড়া তার গ্রামে তার জন্ম। ১৯৪২ সালে রাজনীতির শুরু , পরবর্তীতে অনেক হাতি ঘোড়া নিধন পূর্বক তিনি একজন মহামান্য হয়ে উঠেন । মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং  দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু সরকারে বিদ্যুৎ, সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত  বিশ্বাসভাজন , ছিলেন বাকশালের কার্যকরী কমিটির সদস্য , ১৯৭৫ সালে পেয়েছিলেন অর্থমন্ত্রীর ভার । ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তার প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ মদদে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় সপরিবারে, তারপর নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন তিনি । তার সহায়তায় , জিয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি পূর্বক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের পথ বন্ধ  করে দেন। জয় বাংলা শ্লোগানের নতুন নাম হয় বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। চার জাতীয় নেতাকে যখন হত্যা করা হয়, তখন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন তিনি। ১৯৯৬র  ৫ই মার্চ , মারা যান ,ইতিহাসের জঘন্য ও নিকৃষ্টতম কীট , খন্দকার মোশতাক আহমেদ ছিল তার নাম।
২০১৭ সালে কুমিল্লা না হয়ে ময়নামতি এবং কুসিক নির্বাচন সম্পর্কিত ক্যাচালে , বঙ্গবাসী আচমকা স্মরণ করতে লাগেন সেই কুখ্যাত মীরজাফরের নাম। সেই সাথে বঙ্গবাসী ভুলে যান কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাম -এদের কেউ ছিলেন শান্তি সুনীতি , ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত , কেউ ছিলেন শচীন দেব বর্মন , সুফিয়া কামাল , ফয়জুন্নেসা প্রমুখ । প্রশ্ন হচ্ছে কুমিল্লা নিয়ে কুক্যাচালে খন্দকার মোশতাক আহমেদের নামটি আসে কেন ? এই কলঙ্কের দায় , শুধুই কী কুমিল্লাবাসীর ?  ব্যাপারটির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কী ? এমন কী হতে পারে , মারা যাবার আগে টন টন ক্লোন মোশতাক , জন্ম নিয়েছিলেন কুমিল্লার ঘরে ঘরে ! বর্তমান কুমিল্লাবাসী সক্কলেই তার বংশধর ? নাকি কুমিল্লাবাসী মোশতাক এন্ড সন্স নামীয় ব্রিক ফিল্ড বা কোল্ড স্টোরেজের কর্মচারী ? বঙ্গবন্ধুর  টুংগীপাড়ায় সবাই কী তখন এবং এখন  ছিলেন সব  ফেরেশতা এক একজন ? কিংবা আপনারা যাহারা চিক্কুইরাচ্ছেন -আপনার জেলার সকলেই কী শিশুর মত সহজ সরল , আর ফুলের মত পবিত্র ? কুমিল্লা কী আউট অব বাংলাদেশ?
মুক্তিযুদ্ধে এই কুমিল্লা দিয়েই আপনার বাবা দাদা শরণার্থী শিবিরে গেছিল , মনে নাই , ভাই ! এখানেই ছিল দেশের বৃহৎ ক্যান্টনমেন্ট ! মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই-সংগ্রাম-মৃত্যু-বিজয় চিহ্ন বহন করছে জেলার প্রতিটি জনপদ ! বলি , আপনি তো আবালস্য পোলাপান নন,  আপনি শিক্ষিত , আপনি জ্ঞানী এবং আফটার অল আপনি নেতা না হলেও , অন্তত পাতি নেতা তো বটেই ! তাহলে নৌকার পরাজয়ের সাথে সাথে , আপনি কুমিল্লাবাসীকে মোশতাক মোশতাক বলে গালি দিচ্ছেন কেন ব্রাদার ? অশিক্ষিতের মত  আঞ্চলিকতায় দুষ্ট হয়ে, আপনি এমন ভাব দেখাচ্ছেন যেন , শুধু আপনারই বিবেকের দরোজা খুলে গেছে , আর কুমিল্লাবাসী ঢেউ টিনে মুড়ে রেখেছে তাদের হৃদয় ! বেহুদাই যে গালাগাল পাড়ছেন, মিস্টার ব্রাদার , আমরা কিন্তু ঠিক ঠিক বুঝে গেছি  আপনার সমস্যাটা আদতে কোথায় ! আপনি মূলত  দুইটি সমস্যা দ্বারা আক্রান্ত !

সমস্যা এক , আপনি রাজনীতির খেলাধুলা এবং কুমিল্লার ইতিহাস বইটি পড়েন নাই, এখনই পড়ে নিন প্লিজ।

সমস্যা দুই , আপনি চুলকানি রোগে আক্রান্ত, এই রোগ চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা টাউন হল মাঠে জলিলের ঢোল মলম পাওয়া যায়, তা সর্বাঙ্গে মেখে আপনার এখন রেস্ট নেওয়া  কিংবা অফ যাওয়া ভীষণ জরুরী,  ব্রাদার।

রাজনীতির খেলাধুলা এবং কুমিল্লার ইতিহাস

একদা কুমিল্লায় , মার্কা ছিল ধানের শীষ , কর্নেল আকবর হোসেন নামীয়,  প্রচণ্ড প্রতাপশালী এক নেতার বাস ছিল । তা তিনি দেখিতে কেমন ছিলেন  লম্বা না বাটিয়া,  ধলা না শ্যামলা কিংবা বলা যাইতে পারে বাস্তবে তিনি আসলেই ছিলেন কী ছিলেন না , তাহাই জানিত না কুমিল্লাবাসী । কর্নেল আকবর হোসেন ছিলেন তেমনি এক কিংবদন্তীর নাম এবং কেউ কেউ স্বীকার করিয়াছেন তাকে কদাচিৎ শহরে দেখিয়াছেন ! আদারওয়াইজ তিনি ভূত বা অদৃশ্য মানব হইলে , নিচ্চয় দ্বিতীয় থেকে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে , মোট পাঁচ মেয়াদে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইতে পারিতেন না।  ১৯৭৮ সালে পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ, ১৯৯৩ সালে বন ও পরিবেশ এবং ২০০১ সাল নৌ-পরিবহণ মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি। নির্বাচনে জিতিবার  জন্য তেনার মূল কাজ ছিল -জাস্ট ভোটে দাঁড়াইয়া পড়া । তাহাকে শহরে কেহ কেহ ভোটের যাদুকর বলিলেও , তিনি নাকি তাহা অস্বীকার করিয়াছিলেন, শোনা যায়। কোন নির্বাচনী হাঁকডাক ও ক্যাম্পিং ব্যতিরেকেই তিনি অতি সহজে প্রতিবার ভোটে পাশ করিয়া ফেলিতেন এবং মহাসমারোহে ! লোকাল লোকেরা  বলিত আকবর শব্দটি সন্ধি বিচ্ছেদ করিলে , আর+একবার হইতে ভোট দিলেই পাশ করিবেন আকবর হইয়া যাইতো ! তবে মহামান্য আকবর বলিতেন -ওসব যাদুফাদু কিচ্ছু নয় হে ! আমার দুইজন একনিষ্ঠ কর্মী আছেন , যদ্দিন তাহারা বাঁচিয়া থাকিবেন আফজল আর বাহার , ভোটে পাশ করা নিয়া , আর কী চিন্তা আমার ?
অধ্যক্ষ আফজল খান আওয়ামী লীগের একজন বর্ষীয়ান নেতা , যিনি ছাত্রাবস্থা থেকেই গভীর ভাবে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। কুমিল্লা শহরে একসময় তে আফজল খান এবং তে আওয়ামীলীগ বুঝত সবাই ।  ভাই ভাগিনা সন্তান সহ , শহরের অন্যতম প্রভাবশালী আওয়ামী পরিবারের তিনি ছিলেন প্রধান । জিয়া এরশাদ শাসন  আমলেও তিনি সাহসে , অতি দাপটে দাবরে বেড়িয়েছেন প্রকাশ্যে এবং আওয়ামীলীগের বিভিন্ন ক্রান্তিকালীন সময়েও তিনি ছিলেন পার্টির নিকট ঘনিষ্ঠজন।
আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বয়সে তরুণ, তখন তিনি হয়ে গেলেন কুমিল্লা শহরের ভীষণ এক জনপ্রিয় নেতা । সেটি ছিল পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বয়োজ্যেষ্ঠ আফজল খান ভোটে হেরে গেলেন তরুণ আওয়ামী নেতা বাহার এর কাছে । অতঃপর কুমিল্লা শহরবাসী জেনে গেলেন এবং বুঝে গেলেন  -পক্ষ যখন প্রতিপক্ষ হয় , তখন প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতিহিংসা কত প্রচণ্ড হতে পারে ! আর এভাবেই কুমিল্লার রাজনীতিতে একদিন পক্ষের নাম হয়ে যায় প্রতিপক্ষ  , এবং বিএনপির রাজনীতিতেও গ্রুপিং ব্যবস্থার  প্রচলন শুরু হয়ে যায় । ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাশ করে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার , বর্তমানে কুমিল্লা সদর আসনের মাননীয় সংসদ । দুই টার্ম ক্ষমতায় থেকে তিনি এখন কুমিল্লা শহরের আওয়ামী রাজনীতির প্রধান নিয়ন্ত্রক। ২০১২ সালের কুসিক নির্বাচনে আফজল খান হেরে গিয়েছিলেন , বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর কাছে  এবং ২০১৭ তে এসেও  সেই তিনিই আবার  মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন । আমাদের মনে রাখা উচিত দুই কালেই , আওয়ামী লীগ কিন্তু ক্ষমতায় !
২০১২  নির্বাচনে পরাজয়ের পর , নিজেকে রাজনীতি থেকে একপ্রকার গুটিয়ে নিয়েছিলেন আফজল খান , বর্তমানে তাঁর বয়স প্রায় আশি ! ২০১৭র কুসিক নির্বাচনে বাহার সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন মূলত আরফানুল হক রিফাতসেই মোতাবেক রিফাত কাজও করেছিলেন , কিন্তু দল মনোনয়ন দেয় অধ্যক্ষ আফজল কন্যা আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে। সীমা কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র। যদিও শহরবাসী মনে করে , জনপ্রিয়তায় তিনি তার পিতাকে অন্তত ছাড়িয়ে যেতে পেরেছিলেন! কিন্তু নির্বাচন করতে গেলে যে সাংগঠনিক শক্তিটি থাকা চাই ,সেটি তার ছিল না। তাই নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য কেন্দ্র থেকে আসলেন আওয়ামীলীগের রথী মহারথীরা । তারা আপ্রাণ চেষ্টা করে দুই পক্ষকে এক করলেন বটে , মাঠে নেমেছিলেন সাংসদ বাহার , মন্ত্রী মুজিবুল হক এবং মন্ত্রী লোটাস কামাল এর কর্মী বাহিনী । কিন্তু স্যরি এ যাত্রায় আর হল না । ধানের শীষ প্রতীকে মনিরুল হক সাক্কু পেলেন  ৬৮,৯৪৮ ভোট এবং নৌকা প্রতীকে আঞ্জুম সুলতানা সীমা ৫৭, ৮৬৩ ভোটব্যবধান প্রায় এগার হাজার । মোট ভোটারের প্রায় ৭০ শতাংশ ছিলেন আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের এলাকার , যেখানে প্রায় চার হাজারের প্লাস ভোট কম পেয়েছেন সীমা এবং ৩০ শতাংশ ছিলেন  মাননীয় সাংসদ ও মন্ত্রী লোটাস কামালের এলাকার যেখানে সীমা কম পেয়েছেন সাড়ে ছয় হাজার  ভোট । ২০১২র কুসিক নির্বাচনে  তার পিতা হেরেছিলেন , ভোটের ব্যবধান ছিল ২৯ হাজার ।
২০১২র নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১,৬৯,২৭৩ জন, ভোট পড়েছে  ১,২৭,০৭২, ভোট পড়ার হার ছিল ৭৫.০৬ শতাংশ । এবারের নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২,০৭,৫৬৬ জন , ভোট পড়েছে ১,৩২,৬৯০ অর্থাৎ ভোট পড়ার হার ৬৩.৯২ শতাংশ ।  অথচ নির্বাচন কমিশন বলেছিলেন ৮০ শতাংশ ভোট পড়বে । আওয়াজ ছিল যত বেশী , তারও বেশী হয়েছিল বাজার গরম ,কুকুর  কামড় দিয়েছিল ততই নরম !
আমরা সম্ভবত বলতে পারি, খন্দকার মোশতাক আহমেদ-এর  নৌকাডুবি উপপাদ্যটি এখন  প্রমাণিত হয়েছে।
এবারের কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন, কুসিক নির্বাচনে আমরা দেখেছি ভোটদাতার এক নতুন ধরনের সেলফি উৎসব ! প্রতীকে সীল মেরে , অতি গোপনীয় ব্যালটটি -বাক্সে ফেলবার আগে , বত্রিশ দাঁতে একখান ভেটকি সহকারে সেলফি  ! অনেক মহামান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এই কর্মটি সম্পাদন করে ফেসবুকে পোস্টায়েছেন। পার্টির প্রভাবশালী নেতা , পাতি এবং উঠতি নেতারাই এই কাজটি করেছেন বেশি।

কিন্তু কেন ?

কেন এই সেলফি তুলিবার সাধ জাগিয়াছিল তাহার ?


এই প্রশ্নের উত্তর খুব সিম্পল , সামহাও প্রমাণ করা আমি কিন্তু তোমাকেই দিয়েছিলাম ভোট ফেল করলে আমাকে আবার ভুল বোঝ না যেন! মানে তিনি ছিলেন সন্দেহভাজন , তার বিরুদ্ধে আপত্তি উঠতে পারে , তাই ইচ্ছার বিরুদ্ধেই অন্তত নিজের ভোটটি  মার্কায় দিয়ে তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন -তার দিল সাচ্চা হ্যায়! আরেক হতে পারে শখে কিংবা এমনি এমনি।
"আমার ভোট আমি দেব , যাকে খুশি তাকে দিব
ভোট নাগরিকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধিকার , কিন্তু নাগরিক যখন সীল সহ ব্যালট যা অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয় , সেটির ছবি জনসম্মুখে প্রকাশ করে দেন , তখন নাগরিক নিজেও বোঝেন না , নিজের অজান্তেই তিনি একটি ভুল কাজ সম্পাদন করে ফেলছেন। একজন ভোটার কাকে ভোট দিয়েছেন , এই তথ্যটি গোপন রাখাও ভোটারের অন্যতম দায়িত্ব। সাধারণ বিবেচনা বলছে , সীল সহ ব্যালটের ছবি অবশ্যই অপ্রকাশযোগ্য ! কিন্তু এই বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বিধিমালায় সুস্পষ্ট কিছুই বলা নেই  । তাই এই জাতীয় অত্যন্ত গোপনীয় তথ্য জনসম্মুখে  সেলফি সংযোগে প্রকাশ , রহিত করা অতি প্রয়োজন।
এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করছি ।

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: