কুমিল্লা রিপোর্ট২৪ ডেস্কঃ পোস্ট করা তিনটি ছবির ছেলেই কু.বি’র বিবিএ’র ছাত্র। যথেষ্ট মেধাবী না হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে চান্স পাওয়া কষ্টসাধ্য। ছেলেগুলো যেমন ছিল মেধাবী তেমন ছিল শাররিক গঠনের দিকদিয়ে সুঠাম। এদের প্রথমজন (যিনি ওপারে চলে গেছেন) স্কুল শিক্ষকের সন্তান। দ্বিতীয় জন ক্যাডেট কলেজের সুইপারের সন্তান, তৃতীয় জন চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজের পিয়নের সন্তান। প্রথম জন কবরে।
দ্বিতীয় আর তৃতীয় জন খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে জেলে। শেষের দুইজন নিয়েই কিছু বলাঃ
সুইপারের ছেলে সুইপারই হয়। এটাই এ দেশে প্রচলন। অথচ, বিপ্লবের পিতা বাবুল দাস তার আদরের সন্তানের হাতে ঝাড়ুর পরিবর্তে কলম তুলে দিয়েছিলেন। ঠিকভাবেই চলছিল সব। কিন্তু মেধাবী ছাত্র বিপ্লব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে ভর্তি হয়ে অসৎ সঙ্গে পড়ে কলমের পরিবর্তে হাতে অস্ত্র তুলে নেয় এবং মার্ডারে জড়িয়ে পড়ে। বিপ্লবের শাস্তি হবে নিশ্চিত। কিন্তু তার দরিদ্র পিতার কি হবে? তার পিতা এখন হয়তো আফসোস করে বলছে, আমি সুইপার/ঝাড়ুদার হয়েও কেন আমার ছেলের হাতে ঝাঁড়ু তুলে না দিয়ে কলম তুলে দিলাম! এ কি ছিল আমার অপরাধ? হায়রে নিয়তি।
সরকারি কলেজের পিয়ন পরেশ বাবু কত টাকাই বেতন পান? ঘর-সংসার সামলে ছেলেকে দিয়েছেন কুমিল্লার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে। অথচ, আজ আদরের সন্তান জেলে। পরেশ বাবুর এক আত্মীয় বলল ছেলেকে জেলে দেখতে আসতে ভাড়া যোগায় করতেও নাকি তার কষ্ট হয়। পরেশ দেবনাথের স্বপ্ন ছিল আমি পিয়ন কিন্তু আমার ছেলেটা পড়ালেখা শেষ করে যেন অফিসার হতে পারে তাই সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছি। ভাগ্যর কি নির্মম পরিহাস, আমার মেধাবী ছেলে আজ জেলে।
আরেকটু বলি, স্কুল-কলেজের ঝাড়ুদার আর পিয়নের সন্তান মিলে খুন করল ভার্সিটির ছাত্রকে। আবার ঐ ভার্সিটির ছাত্র একজন স্কুল শিক্ষকের সন্তান। কোথায় যাচ্ছি আমরা? এ দেশের ক্ষেত্রে রাজনীতিকে বলা হয় রাজার নীতি। অর্থাৎ রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সব কিছুই এ দেশের উঁচু শ্রেণীর জন্য। তাহলে আমি পিয়ন, দারোয়ান, সুইপার ও দরিদ্র কৃষকের সন্তান হয়ে কেন পেশীশক্তি নির্ভর রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছি? আমি কেন আরেক ধনকুবের সন্তানের ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যাবহার হচ্ছি? আমি কেন পড়া-লেখার সুযোগ পেয়েও আমার দরিদ্র পিতার স্বপ্ন-স্বাদ ভেঙ্গে চুরমার করে দিচ্ছি? এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক হবে। আমরা আর কোন খালিদ-রুপম-বিপ্লবের পিতার বুকফাটা আর্তনাদ শুনতে চাই না।
0 facebook: