09 August 2016

কুমিল্লা বিশ্বরোডে নতুন মরণফাঁদ- অপরিকল্পিত ইউটার্ন


কুমিল্লা রিপোর্ট২৪ ডেস্কঃ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে নির্মানাধীন অপরিকল্পিত ইউটার্ন মরণফাঁদে পরিণত হচ্ছে। ইউটার্নটির কারণে এটি একটি যানজটের নির্ধারিত পয়েন্টেও পরিণত হয়ে ওঠছে।
ফলে কুমিল্লা, নোয়াখালী , দেশের পূর্বাঞ্চলের ১১ টি জেলার শতাধিক রুটসহ ওই মহাসড়কে যাতায়াতকরী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাজার হাজার গাড়ি ওই মরন ফাঁদের শিকার হবে। এতে জান-মালের ব্যপক হানির আশংকাও রয়েছে।
জানা গেছে, জাতীয় অর্থনীতির সোপান হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে যানজট এবং রেল লাইন এড়াতে এখানে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ হাতে নেয় সরকার। এটি পদুয়াবাজারের পশ্চিমে শ্রীভল্লবপুর এলাকা থেকে পূর্বে উত্তর রামপুর পল্লী বিদ্যুত অফিস পর্যন্ত নেয়ার পরিকল্পনা ছিল। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-ফেনী অঞ্চলের গড়িগুলো ফ্লাইভরের উপর দিয়ে অনায়াসে চলে যেতে পারত।
পরবর্তীতে ওই ফ্লাইভারটিকে সংক্ষিপ্ত করে শুধুমাত্র রেলওয়ে ওভারপাস হিসেবে ৯৫ কেটি টাকা ব্যয় করে একটি ছোট ফ্লাইওভার তৈরী করা হয়। এটিকে গর্তে সাপ রেখে গর্ত ভরাটের মত মনে করছেন এ মহাসড়কে যাতায়াতকারী বিভিন্ন যানবাহণের চালকরা।
কারণ, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডের মূল চৌমুহনী বাদ দিয়ে এ ফ্লাইওভার নির্মাণ করায় রেল লাইন পেরুতে পারবে ঠিকই, তবে চৌমুহনীতে এসেই যানজটের কবলে পড়তে হবে যানবাহনকে। আর তাই এটি হয়ে উঠবে একটি যানজটের বিষফোঁড়া।
এখন বাস্তবতার নিরিখে এখানে স্থায়ীভাবে যানজটের সমস্যা নিরসনের প্রশ্ন ওঠলে বর্তমানে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে পদুয়াবাজার চৌমুহনীতে কুমিল্লা-নোয়াখালী-চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর সড়কে সরাসরি যাতায়াত বন্ধ করে প্রায় আধা কিলোমিটার দীর্ঘ রোড ডিভাইডার স্থাপন করে একটি ইউটার্ন নিমার্ণ করা হচ্ছে।
এই ইউটার্নের মাধ্যমেই কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুরসহ কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন  জেলার ৪০টি রুটে প্রতিদিন শত শত  যানবাহনকে কুমিল্লা-ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচল করতে হবে।
এর ফলে ইউটার্নের পশ্চিম পাশে ফ্লাইওভারের নিচে দিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও পূর্ব পাশে ইউটার্ন ঘুরে যানবাহন চলাচল করার সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটসহ বিভিন্ন রুটে যাতায়াতকারী যানবাহনকে যানজটের গ্রাসে পড়তে হবে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকাগামী কাভার্ডভ্যান চালক আলেক হোসেন, বলেন, একানে গাড়িগুলো হঠাৎ করেই ইউটার্নে ঢুকে যায়। ফলে দ্রুত গতিতে আসা সরাসরি গাড়িগুলো ব্র্যাক নিয়ে থামাতে অনেক সমস্যা হয়। একটি গাড়ি ইউটার্ন পার হতে লম্বালম্বিভাবে রাস্তা থাকায় মহাসড়ক পুরোপুরি বন্ধ থাকে। ফলে যজান-মাল নিয়ে শংকা দেখা দেয়।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী একটি বিলাশবহুল বাসের চালক মিজুনুর রহমান বলেন, ফ্লাইওভার থেকে নেমে দ্রুত গতিতে ইউটার্নের কাছে এলেই কোন না কোন গাড়ি এপার থেকে ওপাড়ে যায়। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সরাসরি রুটের গাড়িগুলোকে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
কুমিল্লা থেকে নোয়াখালীগামী একটি যাত্রী পরিবহনের চালক মো. হারুনর রশিদ বলেন, ইউটার্নে এলে চালকদের আতংিেক থাকতে হয়। এখানে একটানে গাড়ি ওপার নেয়া যায়না। দ্রুতগতির গাড়িগুলো যেকোন সময় আমাদের গাড়িতে ধাক্কা লেগে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পরে। তিনি বলেন, ফ্লাইওভারটি অবশ্যই ইউটার্ন পার করে নেয়া উচিৎ ছিল। তাহলে সকল ঝামেলা মিটে যেত।
কুমিল্লার লালমাই ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক ফারুক আহমেদ বলেন, প্রতিদিন শত শত গাড়ি এভাবে ইউটার্ন পার হবার সময় এখানে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। আর সেই সাথে দুর্ঘটনারও সম্ভাবনা রয়েছে শতভাগ। সেই সাথে স্বাভাবিক গতি নষ্ট হয়ে এবং যানজটে আটকা পড়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে আমদানী রপ্তানী বাণিজ্যে চরম ব্যঘাত ঘটবে। এতে দেশের অর্থনীতির ক্ষতির সম্মুখিন হবে। তিনি বলেন, পদুয়ার বাজার ফ্লাইওভারটি পূর্বের পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্মাণ করা এখন সময়ের দাবি। তিনি বলেন, বর্তমান বাস্তবতার আলোকে পদুয়ার বিশ্বরোডে নির্মানাধীন ফ্লাইওভারটি উত্তর রামপুরে পল্লী বিদ্যুত সমিতি পর্যন্ত নেয়া প্রয়োজন দেশ ও জাতির স্বার্থে।
এ ব্যাপারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ফোর লেইন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. মাসুম সারওয়ার বলেন, ২০১৩-‘১৪ সালে এ ফা¬ইওভারটি উত্তর রামপুর কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুত সমিতি পর্যন্ত নেয়ার পরিকল্পনা ছিল। ব্যয় বেড়ে যাবার কারণে  তা সংক্ষিপ্ত করা হয়। তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত অবগত রয়েছেন। ইউটার্নের জায়গায় যানজট যাতে কম হয় সেজন্য মহাড়কের অংশ চওড়া করা হয়েছে।

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: