06 July 2016

কুমিল্লার ১২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির ঈদ স্মৃতি


ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদ-উল ফিতর। দেশ জাতি ভেদে ঈদ উদযাপনে রয়েছে ভিন্নতা। কালের বির্বতনে আমাদের দেশেও ঈদ উদযাপনে পুরনো অনেক সংস্কৃতি এখন নেই বললেই চলে। ঈদ উদযাপনে অতীত ঐতিহ্য ভুলে গা ভাসিয়েছেন পাড়া-মহল্লার মুরুব্বিরা। তবে বুকে জমা নিজের শৈশব কৈশোরের ঈদ উদযাপনের স্মৃতি ভুলে যাননি। কথায় কথায় অতীত বর্তমানের পার্থক্য খুঁজে নেন তারা। স্মৃতির ডায়রি হাতড়িয়ে খুঁজে নেন সেই পৃষ্ঠা। যেখানে লেখা রয়েছে নিজের অতীতের ঈদ উদযাপনের নানান স্মৃতি কথা। কুমিল্লার ১২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির ঈদ স্মৃতি তুলে ধরেছেন মাহফুজ নান্টু
কুমিল্লার উন্নয়নে নিজের ভিতরে ঈদের আনন্দ অনুভব করি
মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে হাজারো শুকরিয়া আদায় করছি। তিনি আমাদেরকে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার তৌফিক দান করেছেন। সামনে আসছে ঈদ। ঈদ-শ্বাশত আনন্দের। প্রতি বছরে ঈদ আসে অনেক স্বপ্ন নিয়ে। যখন শৈশবে মানে ছোটবেলায় ঈদ উদযাপন করতাম তখন শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবতাম। ঈদের আনন্দটা নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। নিজের নতুন জামা, নতুন জুতো, সালামী আর কত কি। অনেক আনন্দ করতাম।  কিন্তু যখন থেকে রাজনীতি শুরু করেছি তখন থেকে ঈদ উদযাপন আর নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন এই কুমিল্লার মানুষের সুখই আমার ঈদ। আনুষ্ঠানিক কিংবা রুটিন বাঁধা জীবনের বাইরে গিয়ে ঈদ-গাহে ঈদের নামাজ শেষে সবার সাথে কোলাকুলি করার মাঝে স্বর্গীয় অনুভূতি কাজ করে। তবে সত্যিকার অর্থে মানুষের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যে কি যে আনন্দ আর ভাল লাগা কাজ করে তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। যখন কুমিল্লার উন্নয়নে কোন স্থাপনার ভিত্তি উদ্বোধন করতে পারি তখনই নিজের ভিতরে ঈদের আনন্দ অনুভব করি। আমার স্বপ্ন আপনাদের নিয়ে। আপনারা আমার পাশে থাকবেন। আপনার-আমার আশা আকাংখার প্রিয় কুমিল্লাকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। কুমিল্লা এগিয়ে গেলে এগিয়ে যাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ। সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। সবাইকে পবিত্রঈদুল-ফিতরের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
হাজী আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার
সংসদ সদস্য, কুমিল্লা-৬।
ঈদগাহে কোলাকুলির দৃশ্যটি স্বর্গীয়
শৈশবের ঈদের অনুভূতিটা খুবই আনন্দের। তবে এ বছর আমার ঈদের আনন্দের পাশাপাশি হারানোর বেদনাও থাকবে। কারণ প্রতিটা ঈদের নতুর পাঞ্জাবি পাজামা পরে আম্মা ও আব্বাকে ছালাম করে ঈদের নামাজ পড়তে যেতাম। কিন্তু এ বছর আমার আম্মাকে সালাম করতে পারবো না, কারণ তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। আম্মাকে সালাম না করে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া কতটা কষ্টের হবে তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আমি ছোট-বেলার সবচেয়ে বেশী ঈদ উদযাপন করেছি চাঁদপুর। সে সময় পাড়া প্রতিবেশী বড় ছোট সবার সাথে একটা নিবিড় সর্ম্পক ছিল। এতে ঈদের একটা অন্যরকম আমেজ পাওয়া যেত।  শৈশবের একটা স্মৃতি আমাকে এখন অনেক আনন্দ দেয়। ঈদে আমরা বন্ধুরা যে যার  বাবা-চাচাদেরকে সালাম করতাম। উনারা যে সালামি দিত তা দিয়ে সকল বন্ধুরা মিলে ফানটা কিনে খাওয়ার মজাই অন্যরকম ছিল। তবে অনেক মুরুব্বি সালামি হিসেবে চকলেট দিত। এছাড়া ঈদ আসলে সেই স্কুল জীবন থেকে আমার একটা অভ্যাস, যা এখনো আছে। তা হল ঈদ সংখ্যা সংগ্রহ করা। এ ঈদে দু’টি জাতীয় পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় আমার লেখা থাকবে।
ঈদগাহে সব সময় যে বিষয়টা অনেক ভালবাসার, ভাললাগার তা হল ঈদের নামাজ শেষে শ্রেণী বৈষম্য ভুলে সবাই যখন বুকে বুক মিলিয়ে কোলাকুলি করে সে দৃশ্যটি স্বর্গীয়। আমি যখন নামাজ শেষ করে কোলাকুলি করি তখন এক ধরনের পুলক অনুভব করি। নিরেট এক ভাললাগা ছেয়ে যায় দেহ মন। কুমিল্লাতে গত যে কয়টি ঈদ করেছি ঈদের নামায পড়েছি, সেখানে মাননীয় সংসদ সদস্যসহ ঈদগাহে নামাজ পড়তে আসা মুসুল্লিদের সাথে কোলাকুলি করে আত্মার শান্তি পেয়েছি। সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ্য থাকবেন। আমার বাবা-মা যেন জান্নাতবাসী হয় সবাই দোয়া করবেন। সবাইকে পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের নিরন্তর শুভেচ্ছা।
মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল
জেলা প্রশাসক, কুমিল্লা।
ঈদ আনন্দ একাত্ম হয়ে যায় মানুষের আনন্দানুভূতিতে
শৈশব ও কৈশোরের দুরন্তপনা, স্বপ্নের সাথে বসবাস, মুক্ত বিহঙ্গের মতো উম্মুক্ত আকাশে ঘুড়ি উড়ানো, কাঁদামাখা মাটিতে কিংবা হাঁটুজলে খেলার সাথীদের সংগে দুষ্টুমী, নদীতে, খালে বিলে, পুকুরে সাঁতার, জাল টেনে মাছ ধরা, ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন বাঙালি ঐতিহ্যপনায় দলবদ্ধ অংশগ্রহণ সবই সোনালী অতীত। তবে ঈদ উদযাপনের আড়ম্বরতার অন্যরকম বিশেষত্ব ছিলো। যৌথ পরিবারে সবার স্বল্পতেই সন্তুষ্টি ছিলো। একটি ঈদের জামা কখনো বা সংগে এক জোড়া জুতো পেলেই মনে হতো এক বিশাল প্রাপ্তি! নতুন সাবান দিয়ে স্নান সেরে ভোর বেলাতেই দলবদ্ধভাবে ঈদগাহে জামাতে চলে যাওয়া, নামাজ শেষে সবাইকে সালাম ও সালামী গ্রহণ। পিঠা, সেমাই ও আতিথেয়তায় প্রতিবেশীদের সংগে একাত্মতা, বিকালে বন্ধুদের সাথে সিনেমা দেখা, সিনেমা শেষে হৈ হুল্লোড় ও মিষ্টির দোকানে ভীড় করাৃ. এ সবই যেন অন্যরকম সুখ স্মৃতি হিসেবে আজো তাড়িত করে আমাকে।
এই মধ্যবয়সে এসে গুরুত্বপূর্ণ সেবাধর্মী পেশায় নিয়োজিত থেকে ঈদের আনন্দের অনুভূতিটা ভিন্নতর। জনগণ নিরাপদে, নির্বিঘ্নে, নিশ্চিন্তে পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ আনন্দ যেন উদযাপন করতে পারি সে লক্ষ্যে আমার প্রিয় সহকর্মীদের নিয়ে সকলের কল্যাণে নিজেদের ঈদ আনন্দ একাত্ম হয়ে যায় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর হাসি ও আনন্দানুভূতিতে।
আত্মসংযম, আত্মশুদ্ধি ও ধর্মীয় মূল্যবোধ চর্চার পাশাপাশি মানবিক চেতনার উন্মেষে আনন্দ, কল্যাণ, শান্তি, সহিষ্ণুতা ও সম্প্রীতির মেলবন্ধনে বিশ্বজনীন মমতার হৃদয়ানুভূতির প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত হলেই আমি ঈদ আনন্দের পূর্ণতা খুঁজে পাবো। সবাইকে ঈদের নিরন্তর শুভেচ্ছা।
মো.শাহ আবিদ হোসেন
পুলিশ সুপার, কুমিল্লা।
কুমিল্লার মানুষ যেন সুখে ঈদ উদ্যাপন করতে পারে
আজ বাদে কাল অথবা পরশু উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদ-ফিতর। মহান রাব্বুল আলামিন মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার জন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে পুরস্কার হিসেবে  ঈদ বা আনন্দময় একটি দিন উপহার দিয়েছেন। সেই ছোট বেলা থেকে এখন পর্যন্ত কত ঈদ পার করেছি। কালের বির্বতনে ঈদ উদযাপন এসেছে নতুনত্ব। আমাদের দল বেঁধে শৈশবে ঈদ-উল-ফিতরের চাঁদ দেখা কত আনন্দের ছিল। ঈদের আগের রাতে মেহেদী দেয়া। সকালে সবার সাথে হাতে বানানো সেমাই-পায়েশ খাওয়া। বিকেলে দলবেঁধে পাড়া মহল্লায় ঘুরতে যাওয়া, বড়দের কাছ থেকে সালামি পাওয়া, সেই সালামির টাকা দিয়ে চকলেট আইসক্রীম কিনে খাওয়া। সে সব এখন শুধুই স্মৃতি। কত ঈদ জীবন থেকে গত হয়ে গেছে, সাথে কত প্রিয়জন চলে গেছে পরপারে। দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতি করছি। এখন আমার প্রাণের কুমিল্লার মানুষ যেন সুখে ঈদ উদ্যাপন করতে পারে। যদিও দেশের মানুষ খুব একটা সুখে নেই। তবুও মহান আল্লাহ পাকের কাছে দোয়া করি তিনি যেন সবাইকে সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপনের তৌফিক দান করেন। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
বেগম রাবেয়া চৌধুরী
সভাপতি, দক্ষিণ জেলা বিএনপি।
এটা ফুল না হাফ প্যান্ট !
শৈশবে ঈদের আনন্দ অনুভবে টান পড়ে বুকের গভীরে। স্মৃতি রোমন্থন করলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে আমার বাবার কথা। বাবার হাত ধরে ঈদ-গাহে যাওয়া ছিল অন্যরকম একটা অনুভূতি। শৈশবে মা-চাচিরা ঈদের দিন বিভিন্ন বাড়ি থেকে আসা পাড়া প্রতিবেশী আর দূরের আত্মীয় স্বজনদের আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে যেতেন । মোরগ পোলাউ, শিন্নি পায়েশের সুস্বাদু গন্ধে আমোদিত হয়ে যেত পুরো বাড়ি। এখনো হয় তবে সেই স্বাদ গন্ধ পাই না। শৈশবের একটা মজার স্মৃতি এখনো মনে পড়লে নিজের অজান্তেই হেসে ওঠি। একবার ঈদে আমার একটা ফুল প্যান্ট  বড় হয়ে যাওয়ায় তা কেটে সমান করার জন্য আমার খালাম্মাকে বলেছিলাম। উনি প্যান্ট কাটলেন। সেলাই করলেন। যখন পরেছি তখন প্যান্টের অবস্থা দেখে আৎকে উঠলাম। এটা ফুল না হাফ প্যান্ট কোনটাই হয়নি। সে কথা মনে পড়লে এখনো হাসি পায়। সবাই ভাল থাকবেন। কুমিল্লাসহ দেশবাসীকে জানাই পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান
সাবেক সভাপতি, কুমিল্লা সচেতন নাগরিক কমিটি।
এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের জন্য অনেক মায়া হয়
আমরা যখন ছোট ছিলাম মানে আমাদের শৈশব, কৈশোরের ঈদ ছিল শুধুই আনন্দময়। মায়ের হাতের সেলাই করা ঈদের জামা আমাদের সে আনন্দ আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিতো। আমাদের নানু ঈদের জামায় কুশী কাটার লেইচ কেটে দিয়ে আমাদের মনটা খুশীতে ভরিয়ে দিতেন,চোখ বুজলে এখনো সেই নতুন জামার গন্ধ অনুভব করি, পুরো রোজায় কোরআন পড়ার ফাঁকে ফাঁকে হাতে কেটে চুটকি সেমাই বানাতাম ভাইবোনরা মিলে,ঈদের দিন সে সেমাইয়ের জর্দা তৈরি হতো, দুধ সেমাই, মুরগীর কোর্মা আর পোলাওয়ের মৌ মৌ গন্ধে সারা বাড়ি মাতোয়ারা থাকতো। রাত ভর জেগে ঘুড়ির রঙ্গিন কাগজ কেটে ঘর সাজাতাম। আম্মাকে ঘিরে আমাদের সাত ভাইবোনের সেকালের ঈদ অনেক আনন্দের ছিল। এই প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের জন্য অনেক মায়া হয়,কত কিছুই না ওরা মিস করছে জীবনে।  বটগাছের তলায় বসা মেলার সেই বাঁশির সূর আজো আনমনা করে গ্রামের ঈদের মিলন মেলার কথা ভেবে। আজকালের ঈদের আনন্দ নিরানন্দ ছাড়া কিছুই নয়, শহুরে জীবন আমাদের অনেক আবেগ কেড়ে নিয়েছে, বেগের ঘূর্ণি চাকায় ঈদ এখন আমাদের জন্য শুধুই পণ্য দাসত্ব। ভোগ বিলাসের সামগ্রী মাত্র। রাত ভর ফেইসবুক আর স্ক্যাইপির হুড়াহুড়ি,দিনভর সেলফি আর ছুটাছুটি। মধ্যে দিয়ে পরিবারের বন্ধন আর বাঙালিয়ানাটা হারিয়ে যেতে বসেছে। জীবনের চাকা এতো ঘুরেছে কিন্তু আজও মনের মধ্যে দাগ কেটে আছে কৈশোরের ঈদের আনন্দছটা।
রাশেদা আক্তার
ভাইস চেয়ারম্যান, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা পরিষদ।
সবাইকে নিয়ে ঈদ উদযাপনের মাঝে আনন্দ খুঁজি
একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান যখন মাসব্যাপী সঠিকভাবে সিয়াম সাধনা করে থাকেন, মূলত ঈদের আনন্দ তাদের কাছে সবচেয়ে বেশী হয়। জনপ্রতিনিধির বাইরে বলতে গেলে আমি একজন মানুষ। আমাকে যিনি সৃষ্টি করেছেন উনার আদেশ পালন করা আমার জন্য ফরজ। সে হিসেবে আমি মহান আল্লাহ পাকের কাছে শুকরিয়া আদায় করছি মহান আল্লাহপাক  ভালভাবে সিয়াম পালন করার তৌফিক দান করেছেন। আর পুরস্কার হিসেবে রেখেছেন ঈদ। সামনে এখন ঈদ উদযাপনের সময়। তবে সময়ের বিবর্তনে ঈদের আনন্দে অনেক পরিবর্তন এসেছে। মনে পড়ে শৈশবে ঈদে কত মজা করতাম। নতুন পোষাক পরে বাবার সাথে ঈদ-গাহে যাওয়া, নামাজ পড়া। নামাজ শেষে সব ভাই বোনেরা মিলে খাবার খাওয়া। পরে  বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া। একটা নিরেট ভালবাসা ভাল লাগা কাজ করতো তখন। এখন সে স্মৃতি মনে পড়লে নিজের অজান্তেই চোখের কোনে পানি জমে যায়। বাবা-চাচাদের কাছ থেকে ঈদের সালামি নেয়া। সালামির টাকায় বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়াতাম। ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা নিয়ে যে কৌতূহল কাজ করতো তা এ প্রজন্মের কারোর মধ্যে তেমন দেখি না। আমাদেও সময়ে আকাশে মেঘ থাকলেও ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে কৌতূহলের কমতি ছিলো না। এখন আকাশে মেঘ জমে থাকলেও সমস্যা নেই। কারণ মেঘবৃষ্টিহীন গুগলের আকাশে ইন্টারনেটে নামক দূরবীনে চোখ রেখে চাঁদ দেখে ফেলে। অথবা  হাতের র্স্মাট ফোনে চলে আসে ঈদের চাঁদের খবর। আমাদের সময় ঈদের চাঁদ দেখলে ফটকা ফোটানো একটা রেয়াজে পরিণত হয়েছিল। এখন ঈদ আসে ঈদ যায়। কিন্তু আমার ছোট বেলার ঈদের স্মৃতি ভুলতে পারি না। তবে ব্যক্তিগত ভাল লাগার অনুভূতির চেয়ে এখন সবাইকে নিয়ে ঈদ উদযাপনের মাঝে আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করি। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে সাধারণ মানুষের সুখ দেখলেই ঈদ আনন্দ অনুভূত হয়। সবাই যেন ভালভাবে ঈদ করতে পারে সে প্রচেষ্টা সব সময়ের। সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা।
মোঃ মনিরুল হক সাক্কু
মেয়র, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন।
সুখ-শান্তিতে ভরে উঠবে কুমিল্লা
কুমিল্লা ঠাকুরপাড়া হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা হলেও ছোট বেলায় ঈদ-উল ফিতরে অনেক মজা হত। পারিবারিক অনুশাসনে বেড়ে ওঠেছি। তাই দুষ্টমি করলেও তা যেন সীমা অতিক্রম না করে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতাম। ছোট বেলায় ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে হাতে বানানোর সেমাইয়ের কত চাহিদা ছিল। কালক্রমে ঈদ উদযাপনে পরিবর্তনের  ছোয়া লেগেছে। আমাদের সময়ে রেডিমেট শার্ট প্যান্ট ছিল না। বাবা আমাদেরকে নিয়ে রাজগঞ্জ থেকে কাপড় কিনে দিতেন। পরে রামঘাট এলাকায় দর্জির দোকানে গিয়ে মাপ দিয়ে আসতাম। দর্জি লোকটিকে খালু বলে সম্বোধন করতাম।  তারপর থেকে নতুন পোষাকটি পেতে ক্ষণ গণনা শুরু হতো। বাড়ি থেকে বের হলে বাবা বকা দিবেন সে ভয়ে লুকিয়ে এসে দর্জি দোকানের খালুর কাছে জানতে চাইতাম খালু আমার পোষাকটা কি বানানো হইছে। খালু বলত না,দু’এক দিন পরে হবে। তারপর আবার যেতাম দর্জি খালুর কাছে। কখনো নতুন তৈরি করা জামাটি ঈদের আগে কাউকে দেখাতাম না। কত স্মৃতি শৈশবের। ছোট বেলায় বাবার হাত ধরে ঈদগাহে নামাজ পড়তে যাওয়া কতই না আনন্দের ছিল। সেই শৈশবের  ঈদ উদযাপনের মজার স্মৃতি আজও মনে পড়ে। তবে বিশেষ করে এবছর অনেক বেশি শূন্যতা অনুভব করব কুমিল্লার অভিভাবক আমাদের সবার প্রিয় সদর উপজেলার চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবদুর রউফ ভাইকে । দোয়া করি আল্লাহ যেন রউফ ভাইকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করেন।
এখন স্বপ্ন দেখি । একটি সুন্দর স্বপ্ন। ঈদ আসলে কোথাও কোন মানুষ বিশেষ করে আমার জেলা আমার প্রাণের শহর কুমিল্লাতে যেন কোন মানুষ অন্য কারো কাছ থেকে সাহায্য চেয়ে নিয়ে ঈদ করতে না হয়। সবাই যেন স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে। হাসি-খুশি আর সুখ-শান্তিতে ভরে উঠবে কুমিল্লা। সবাই ভাল থাকবেন,সুস্থ থাকবেন। সবাইকে জানাই ঈদ মোবারক।
আলহাজ্ব ওমর ফারুক
প্রশাসক, জেলা পরিষদ, কুমিল্লা।
মিলেমিশে ঈদ উদযাপন করতে পারলেই সুখ অনুভব করি
ঈদ শ্বাশত সুখের। মহান সৃষ্টিকর্তা মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর ঈদকে আনন্দ উদযাপনের উপলক্ষ হিসেবে আমাদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই যে শৈশব থেকে এখন পর্যন্ত আমার প্রিয় কুমিল্লায় আমি সবচেয়ে বেশীবার ঈদ উদযাপন করেছি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বেশ কয়েকবার ঈদ উদযাপনের সুযোগ হলেও কুমিল্লায় ঈদে যে আনন্দ পাই তা আর কোথাও পাই না। একান্নবতী  পরিবারের প্রতিটি ঈদে কত মজা হয় তা বলে বোঝানো যাবে না। ছোট বেলায় ঈদের নামাজ শেষে বড় চাচার বাসায় সব ভাই বোনেরা মিলে খাবার খাওয়া,তারপর জিলা স্কুলের সামনে বসে আড্ডা দেয়া। কত রঙ্গিন ছিল শৈশবের ঈদ। দিনভর হৈ-হুল্লুর। পাড়া মহল্লায় ঘুরে বেড়ানো। ঈদে সালামি যা পেতাম তা আম্মুর কাছে জমা রাখতাম। এখন সংসারি হয়েছি। বাবা হয়েছি। আমার শৈশবের আনন্দ এখন আমার সন্তানের চোখে উপলব্দি করতে চেষ্টা করি। শৈশবের অনেকে এখন আর নেই। শৈশবের কথা মনে হলে এখন বুকের ভিতর একটা হাহাকার অনুভব করি। এখন অনেক প্রসারিত হয়েছে ঈদ উদযাপন। রাজনীতি করি । সবার সাথে মিলেমিশে ঈদ উদযাপন করতে পারলেই হৃদয়ে পরম সুখ অনুভব করি। তবে কিছু প্রিয় মানুষ আজ নেই। খুব মনে পড়ে তাদের। ঈদের নামাজ শেষে তাদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে জিয়ারত করি। আল্লাহ যেন উনাদেরকে জান্নাত দান করেন। ভাল থাকবেন। সবাইকে পবিত্র ঈদুল-ফিতরের শুভেচ্ছা।
মাসুদ পারভেজ খান ইমরান
পরিচালক, এফবিসিসিআই।
আগে ঈদ উপলক্ষে গ্রামের বাড়ি যাওয়া হতো
সব কিছুতেই বিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। রোজা ও ঈদও এর বাইরে নয়। আমরা ছোটবেলায় দেখতাম রোজার প্রথম জুমায় মসজিদের বাইরে বিভিন্ন মাদ্রাসা এতিমখানার ছাত্ররা সেহেরি ইফতারের সময়সূচিসহ তাদের মাদ্রসা-এতিমখানায় যাকাত ফেৎরা দেয়ার আবেদনপত্র বিলি করতো। এখন দেখি রোজার সময় জুমার দিনে মসজিদগুলিতে বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্টের ইফতারের ম্যানু ও প্যাকেজ সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করা হয়। আগে মহল্লার মসজিদগুলিতে প্রতিদিন এলাকাবাসীর পাঠানো ইফতার দিয়ে মুসাফিররা ইফতার করতেন। সে রেওয়াজও এখন আর শহর নগর কোথাও দেখা যায় না।
আগে ছিল ঈদে নতুন পোষাক কেনা, পরা। এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরাও ঈদে শুধু পোষাক নয়, যার যার সাধ্য অনুযায়ী ঈদ উপহারও চায় এবং পায়।
আগে পেশাগত কারণে শহরে থাকা পরিবারের সদস্যদের ঈদ উপলক্ষে বেড়ানোর জায়গা বা উদ্দেশ্য ছিল গ্রামের বাড়ি যাওয়া। আর এখন ঈদ উপলক্ষে ট্যুারিজম কোম্পানীগুলি দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা করে থাকে। জনগণও সাধ আর সাধ্যের মধ্যের প্যাকেজটি গ্রহণ করে, সাথে যদি থাকে  লম্বা ছুটি আর পকেট ভর্তি বোনাস।
বাকীন রাব্বী
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, সাপ্তাহিক আমোদ।
সীমান্তে বিজিবি স্বজন ছাড়াই পার করে দেয় ঈদ
প্রতি বছর ঈদ আসে অনাবিল আনন্দের বারতা নিয়ে। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর নির্দিষ্ট একটি দিন আর সন্ধ্যার মধ্যিখানে পশ্চিম আকাশে এক ফালি বাকা চাঁদ দেখার আনন্দ কি আর ভাষায় প্রকাশ করা যায়। ছোট বেলায় করা  ঈদ-উল ফিতর নিয়ে অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম ছিল। এখনো স্মৃতি রোমন্থন করি। আমাদের শৈশব,কৈশোরে ঈদে কতই না মজা হতো। একটি শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান আমি। আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী মো:শামসুল  হক একজন কলেজ শিক্ষক ছিলেন। আমরা ৯ ভাই। একজন মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়েছেন। ঈদ ছাড়া আমরা অন্য কোন উপলক্ষ্যে একসাথে হতে পারতাম না বলে অন্যদের তুলনায় আমাদের ভাইদের আনন্দ একটু বেশী ছিল।  শৈশবে ঈদ উপলক্ষে যখন বড় ভাইরা বাড়িতে আসতেন এমন খবরে জামালপুরে গ্রামের বাড়ির পাশে নদী পাড়ে বসে থাকতাম। দূর থেকে ভাইয়াদের বহন করা নৌকা যখন দেখতাম সেই নৌকা নদীর পাড়ে আসা পর্যন্ত সেকি উত্তেজনা, কত কি ভাবনা দোলা দিত মনে। নৌকা তীরে ভীড়লে ভাইদেরকে জড়িয়ে ধরা,তাদের সাথে থাকা ব্যাগ কিংবা আমাদের জন্য কিছু নিয়ে আসার ব্যাগটা নিয়ে যাওয়ার জন্য মনের ভেতর কত আগ্রহ ছিল বলে বোঝানো সম্ভব নয়। প্রতি ঈদে গভীর শূন্যতা অনুভব করি আমার শহিদ ভাইয়ের জন্য। এখন পেশার কারণে, অর্পিত দায়িত্বের কারণে সব ভাইদের নিয়ে একসাথে ঈদ উদযাপন করা হয় না। এখন বাহিনীর সদস্যদের সাথে ঈদ করি। তাদের সাথে কেটে যায় আমার ঈদ। একটা  টান অনুভব করি বুকের গভীরে, বিজিবির সেসব সদস্যদের  জন্য।  যারা আমার সেক্টরের  অধীন কুমিল্লা, ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও ফেনী জেলাসহ পুরো দেশের সীমান্তে স্বার্ভভৌমত্ব ও বহি:শত্রুর হাত থেকে নিজ দেশকে সুরক্ষায় পাহাড় জঙ্গল কিংবা খোলা প্রান্তরে নির্ভৃতে পায়ে হেটে,বাহনে চড়ে কিংবা দূরবীনে সীমান্তের ওপারে চোখ রেখে, অস্ত্র উচিয়ে বুকের ভিতর একরাশ কষ্ট চেপে রেখে বীর দর্পে স্বজন ছাড়াই পার করে দেয় ঈদ। মহান আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সুস্থ রাখুন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ আজিজ আহমেদ, পিএসপি,জি. এর পক্ষ থেকে  স্বদেশ প্রেমে  বলিয়ান সকল জোয়ানসহ দেশবাসীর প্রতি রইল ঈদের শুভেচ্ছা।
কর্নেল গাজী মোঃ আহসানুজ্জামান, জি
সেক্টর কমান্ডার, বিজিবি কুমিল্লা।
ঈদ ছাড়া আড়ি ভাঙ্গার নিয়ম নেই!
ঈদ আনন্দের। ঈদ খুশির। তবে প্রতিটি বছরেই  পরিবর্তনের ধারায় পরিবর্তিত  হচ্ছে  ঈদ উদযাপন। এখন নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা নানান আয়োজনে ঈদ উদযাপন করে। তবে মনে পড়ে আমাদের শৈশবে আমরাও কত মজা করে ঈদ উদযাপন করেছি। বছরান্তে দু’টি উৎসবের মধ্যে ঈদ-উল ফিতরে আমরা যারা ছোট ছিলাম তারা একটু বেশী আনুষ্ঠানিকতা পালন করতাম। যেমন ঈদুল-ফিতর উপলক্ষে বন্ধুদের মধ্যে আড়ি ভাঙ্গা একটা বিষয় ছিল। কখনো কোন বন্ধুর সাথে ঝগড়া করে কিংবা অন্য কোন কারণে মনোমালিন্য হয়ে বন্ধুর সাথে দীর্ঘ দিন কথা না বলে থাকা মানেই আড়ি কাটা বলা হতো। আড়ি কাটার পদ্ধতি ছিল নিজেদের বানানো। যখন মান-অভিমানে কোন বন্ধুর সাথে কথা বলব না তখন তার ও নিজের হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল বাকা করে একটু জোরে স্পর্শ করে ছেড়ে দিলে আড়ি কাটা হয়ে যেত। তারপর থেকে ওই বন্ধুর সাথে আর কথা বলা হতো না। শুধুমাত্র ঈদ ছাড়া আড়ি ভাঙ্গার কোন নিয়ম নেই। তাই ঈদের জন্য অপেক্ষা।  ঈদ আসলে রাগ অভিমান ভুলে আড়ি কাটা বন্ধুর সাথে কথা বলতাম। এমন অনেক হয়েছে, যে বন্ধুর সাথে আড়ি ভেঙ্গে কথা বলতাম সে সবচেয় ভাল বন্ধুতে রুপান্তরিত হয়ে যেত। আরো কত শত স্মৃতি জমে রয়েছে মনের কোঠরে। ঈদুল-ফিতরে লোহার মেশিন দিয়ে সেমাই বানাতাম। ঈদের দিন খুব ভোরে মানে ফজরের আযানের আগেই ঘুম থেকে উঠে বন্ধুরা একসাথে হয়ে যেতাম। পাড়াগুলোতে ঘুরে ঘুরে গান গাওয়ার মাধ্যমে সবাইকে জাগিয়ে দিতাম। কি যে আনন্দ কি উত্তেজনায় কেটে যেত ঈদ বলে বোঝানো যাবে না। সবাই দল বেঁধে ঈদ গাহে যেতাম।  বড়দের কাছ থেকে সালামি হিসেবে যে পয়সা পেতাম ঘরের ভিতর বাঁশের পালায়  পরিমাণ মত ছিদ্র করে জমা করতাম। অনেকে আবার সালামি হিসেবে চকলেট দিত। কে কত টাকা সালামি পেতাম তা নিয়ে ভাই বোনদের সাথে প্রতিযোগিতা হত। শৈশবে আমার কাছে ঈদের আনন্দ মূলত ঈদের দু’একদি আগেই ভাল লাগতো। কারণ ঈদের আনন্দ উপভোগ করা উপলক্ষে অপেক্ষা করার মজাই ছিল অন্য রকম। কারণ ঈদের দিন শুরু হওয়া মানে সন্ধ্যায় শেষ হওয়া।  বিয়ের প্রথম কয়েক বছর ঈদের সময়ের কিছু স্মৃতি এখনো উজ্জ্বল হয়ে আছে। কম আয় বলে ঈদে সবার জন্য কেনাকাটা করতে একটি তালিকাকে কতবার যে কাটাকাটি করেছি। এমন অনেক হয়েছে যে নিজের জন্য বরাদ্দ করা টাকা বাদ দিয়ে অন্য কারো জন্য তালিকায় নাম যোগ দিতাম। এখন আর নিজ কেন্দ্রীক  ঈদ-উদযাপন করা হয় না। সবাইকে নিয়ে সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারলেই ভাল লাগে। সবাই ভাল থাকুন,সুস্থ  থাকুন। ঈদ মোবারক।
ডা. ইকবাল আনোয়ার
শিশু রোগ বিশেজ্ঞ।

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: