নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনুহত্যাকাণ্ড নিয়ে তার পরিবারের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুঃখজনক তনু হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের তদন্ত কার্যক্রম চলমান এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ তদন্তে আন্তরিক সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছে।
সকল দেশবাসীর মতো দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীও চায় প্রকৃত হত্যাকারীরা দ্রুত সনাক্ত হোক এবং তাদের গ্রেফতারের মাধ্যমে যথাযথ বিচারের সম্মুখীন করা হোক। এতে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে তনুর পরিবারের ভিত্তিহীন ও অসংলগ্ন অভিযোগ করা হয়েছে, যাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবার অবকাশ রয়ে যাচ্ছে। সেনানিবাসের অভ্যন্তরে বসবাসরত অন্যান্য সকল পরিবারের মতই তনুর পরিবারকে সব রকম সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।
তাদের স্বাধীন চলাচলের কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়নি। হত্যাকাণ্ডের পর প্রাথমিকভাবে নিরাপত্তা ও তদন্তের স্বার্থে তাদের বসবাস এলাকায় প্রহরী নিয়োগ করা হলেও পরবর্তীতে তা নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি সাপেক্ষে তুলে নেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া, নিরাপত্তার স্বার্থে সেনানিবাসের অভ্যন্তরে গমনাগমনের জন্য সবাইকে পরিচয় নিশ্চিত করার জন্যজিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এই সামরিক রীতি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে হেয় করা বা কারো ব্যক্তি স্বাধীনতাকে খর্ব করার জন্য নয়।বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তনুর পিতা ইয়ার হোসেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের একজন কর্মরত সদস্য, যিনিঅন্যান্য সকলের মতোই সেনানিবাসের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা পাচ্ছেন।তাকে বাস বা মোটর সাইকেল চাপা দিয়ে হত্যা প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ একটি ধারণা প্রসূত ব্যাপার, যে ব্যাপারে তনুর পরিবার কাউকেই এ পর্যন্ত কোনো কিছুঅবগত করেনি।
এ ব্যাপারে ইয়ার হোসেনকে তার উপরস্থ কর্মকর্তা ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) (যিনি বেসামরিক প্রশাসন হতে প্রেষণে নিয়োজিত একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা) জিজ্ঞাসাবাদ করলে ইয়ার হোসেন নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য প্রদানে ব্যর্থ হন। তাছাড়াতিনি এ ব্যাপারে এতদিনে সেনা কর্তৃপক্ষ বা তদন্তকারী কাউকেই অভিযোগ করেনি যা গুরুত্ব বিবেচনায় অসংলগ্ন প্রতিপন্ন হয়।গত ২০ জুনতনুর বাবাকে গাড়ি ও মোটরসাইকেল চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টাকরা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেনতনুর মা আনোয়ারা বেগম।
তাদের সেনাবাহিনীর নজরদারিতে রাখা হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। ওইদিন দুপুরে কুমিল্লায় গণজাগরণ মঞ্চ আয়োজিত তনু হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তনুর পরিবার সেনাবাহিনীর অন্যান্য সকল পরিবারের মতো এখনওসেনানিবাসের ভেতরে বসবাস করছেন। সেনা কর্তৃপক্ষ তনু হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তসহ তনুর শোকাহত পরিবারকে সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদানে বদ্ধ পরিকর।প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ রাতে তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় তনুর বাড়ির ২০ গজ দুরে জঙ্গলের মধ্যে থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের বাড়িতে তনুকে দাফন করা হয়।এ ঘটনায় ২১ মার্চ তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।২৯ মার্চ তনু হত্যা মামলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়। এ ঘটনায় সিআইডি ৫ সেনা সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। তনুর প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়ধর্ষণের আলামত নেই, মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের ভিত্তিতে ৩০ মার্চ বেলা পৌনে ১২টায় তনুর লাশ উত্তোলন করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করে ওই দিনই পুনরায় দাফন করা হয়। ১২ জুন সকালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দেনময়নাতদন্তকারী বোর্ড কর্তৃপক্ষ। মৃত্যুর আগে ধর্ষণনয় তার সঙ্গে ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স’ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।এছাড়া মৃত্যুর কারণ জানতে পুলিশকে অধিকতর তদন্তের পরামর্শ দেন দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামদা প্রসাদ সাহা।এদিকে মৃত্যুর ২৫ বছরের মধ্যে ময়না তদন্ত করলেও মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করা সম্ভববলে জানান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাবেক পরামর্শক অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক। এদিকে, তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তার পরিবার।
0 facebook: