14 June 2016

তনু হত্যা: ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে হতবাক-ক্ষুব্ধ মানুষ



কুমিল্লা রিপোর্ট২৪ ডেস্কঃ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর মরদেহের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক কামদা প্রসাদ সাহা বলেছেন, অপরাধী সনাক্তে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের প্রয়োজন হয় না। কিভাবে অপরাধ হয়েছে তার জন্য ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, জনগণের ধারণা দিয়ে তো আর বিজ্ঞান চলে না। বিজ্ঞানে বিচার বিবেচনা কার্যকর হয় না। দশ দিন পর পঁচা দেহে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় নি এটি বিজ্ঞান। এটা বিশ্বাস যোগ্যতার ব্যাপার না।
হত্যার দশ দিন পর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে যৌন সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া গেলেও নিহত হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে করা প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ধর্ষণ বা যৌন সম্পর্কের তথ্য পাওয়া গেল না কেন এ প্রশ্ন করা হলে ডা. কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, প্রথম ময়নাতদন্তের বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে পারবো না।
ডা. কামদা প্রসাদ সাহা আবারো বলেন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে অপরাধি সনাক্ত করতে হবে। দশ দিনের পঁচা বডি থেকে তো কোন কু দিতে পারি নি।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, মনে করেন ৬ মাস আগে কোন লোককে পেটে ছুরি ঢুকিয়ে হত্যা করা হলো। ৬ মাস পর নিহত ব্যক্তির হাড়গোড় তুলে ময়নাতদন্ত করা হলো। এখন হাড়গোড়ে তো ছুরির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেল না। কিন্তু যে ছুরি মেরেছে সে ধরা পড়েছে এবং সে স্বীকার করেছে সেই মেরেছে। এখন প্রশ্ন হলো তাহলে কি ঐ অপরাধীর বিচার হবে না?
অপর দিকে নিহত তনুর বাবা এয়ার হোসেন আবারো ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের প্রতিবেদন মিথ্যা বানোয়াট উল্লেখ করে অভিযোগ করেছেন অর্থের বিনিময়ে অথবা প্রভাবিত হয়ে এই প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। আমি এখন সিআইডিকে ধরবো। তারা কি প্রতিবেদন দিল ? কোনটা সত্য ? আমি কোন প্রতিবেদনকে সঠিক বলে ধরবো।
তনু মা আনোয়ারা বেগম জানান, সেনাবাহিনীর কোন কর্মকর্তার মেয়েকে যদি এভাবে ধর্ষণের পর হত্যা করা হতো তাহলে অপরাধীদের ধরতে এতো সময় নিতো কিনা? আজ আমি সাধারণ মানুষ বলে মেয়ে হত্যার বিচার পাবো না? উল্টো আমাদেরকেই অপবাদ দেয়া হচ্ছে।
এ দিকে তনুর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কুমিল্লা বিভিন্নস্তরের মানুষ ও নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি এ্যাডভোকেট নাজমুল আলম চৌধুরী নোমান বলেন, একজন মৃত ব্যক্তির চরিত্রহননের দৃষ্টতা দেখিয়ে ঘৃণ্য কাজ করেছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা। এ ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ জানিয়ে তিনি বলেন তাদের চাকুরিচ্যুত করে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।
তিনি বলেন, তনুর প্রথম ময়নাতদন্তকারী প্রথম চিকিৎসক শারমিন সুলতানা ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক। ঐ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে তিনি প্রথম প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় প্রতিবেদনও ঐ বিভাগীয় প্রধানের হাত দিয়ে হয়েছে। তারা একে অপরকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। তার মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছেন।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, তনুর মরদেহের বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন দিয়ে কুমিল্ল মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ আজ প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের যে কোন ময়নাতদন্তই এখন বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। তারা যে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকে এটি এখন আর মানুষ বিশ্বাস করবে না। এখানে সরকারের তদারকি যে নেই সেটি আরো স্পষ্ট।  তনু ধর্ষিত হোক বা না হোক হত্যার বিষয়ে এখনও কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেপ্তার করা যায় নি এটি আরো দুর্ভাগ্যজনক।
সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব শাহ মো: আলমগীর খান বলেন, এখন সিআইডিকেই দায়িত্ব নিতে হবে। মনে করতে হবে তনু তাদের কন্যা। আমাদের বিশ্বাস তারা তদন্ত করে দায়িদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। এটাতো পরিস্কার যে তনুকে হত্যা করা হয়েছে এবং যৌন নির্যাতন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কুমিল্লা কোতয়ালী থানার সাবেক কমান্ডার মোতাহের হোসেন বাবুল বলেন, বাংলাদেশে দুই কলঙ্কিত সাহা আছে। একজন ভিকারুন্নেসা স্কুলের পরিমল সাহা আরেকজন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের কামদা প্রসাদ সাহা। এই দুই জনকে জাতি ঘৃণার সাথে মনে রাখবে। তারা যা করেছে তা বিবেকবান মানুষ কোন দিন গ্রহণ করবে না। এই দুই সাহা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
বাংলাদেশের কমিউন্ষ্টি পার্টির সাধারণ সম্পাদক পরেশ কর বলেন, কারো চাপ থাকলে ঐ চিকিৎসকদের উচিত ছিল বিব্রতবোধ করে সরে যাওয়া। তারা তা না করে কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। 

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: