বিশেষ প্রতিবেদনঃ ৪ ডিসেম্বর কুমিল্লর দেবিদ্বার মুক্ত দিবস। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশের যে কয়টি স্থান বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য দেবীদ্বার তার অন্যতম।তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান সেনা ছাউনি কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাস অতি সন্নিকটে হওয়াতে দেবীদ্বার ছিল অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। খুব সহজেই হানাদাররা দেবীদ্বার আক্রমণ চালাতে পারতো। এ কারনে এখানকার নিরীহ বাঙালি নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছিলো। আবার এসব কারনেই দেবীদ্বারবাসীকে হতে হয়েছিলো তীব্র প্রতিরোধী। স্বাধীনতা সংগ্রামে হানাদার বাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ছোঁয়া লাগেনি এমন গ্রাম দেবিদ্বারে নেই। সংগ্রামে দেবিদ্বার বাসীর অবদান ছিল প্রশংসনীয়। পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আপামর জনতা। যুদ্ধে বারেরা গ্রামের ৩৩ জন, বারুর গ্রামের ৭ জন শহীদ হন। সেদিন ধামতী ও ভূষনা গ্রামের ৬জন নিরীহ বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো হানাদাররা। মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদারদের বরবরতার আরেকটি নির্মম স্বাক্ষর দেবিদ্বারের ‘গণকবর’। উপজেলা সদরে ১৯ জন বাঙ্গালীকে ব্রাশফায়ার করে নির্মমভাবে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়া হয়। এছাড়াও অসংখ্য হত্যাযজ্ঞের নিরব স্বাক্ষী এই দেবীদ্বার।মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন দিতে প্রাসী সরকারের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য (একমাত্র জীবীতসদস্য) ন্যাপ প্র্রান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদের নিজ বাড়ি এলাহাবাদ গ্রামে ন্যাপ, সিপিবি, ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা প্রশিক্ষণক্যাম্প এবং ফতেহাবাদ গ্রামের ‘নলআরা’ প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ঘিরে দেবীদ্বারে মুক্তিযুদ্ধ অনেকদূর এগিয়ে যায়। সংরক্ষণের অভাবে এস্থানগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে হয়েউঠছে অচেনা। ১৯৭১ এর সেই রক্তঝরা দিনগুলোতে ধাপে ধাপে হানাদার মুক্ত হয়েছিল কুমিল্লার বিভিন্ন অঞ্চল। তারই ধারাবাহিকতায় মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর যৌথ আক্রমণে ৪ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়েছিল দেবীদ্বার। ৩ ডিসেম্বর মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে এ রাতেই হানাদাররা দেবিদ্বার ছেড়ে কুমিল্লা সেনানিবাসে পালিয়ে যায়। ৪ ডিসেম্বর দেবিদ্বারে উল্লসিত জনতা স্বাধীন বাংলার লাল সবুজ পতাকা নিয়ে বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠেন। দেবিদ্বার উপজেলা প্রেস ক্লাব সভাপতি এবিএম আতিকুর রহমান বাসার বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও অনাদরে অবহেলায় ধ্বংস হতে বসেছে এখনকার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি গাঁথা। স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদদের স্মরনে দেবিদ্বার নিউমার্কেটে নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা চত্তরসহ সারা দেবিদ্বারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি আজও চরম ভাবে অবহেলিত।’ নিউমার্কেটে নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা চত্তরটি ঢেকে গেছে বহু রাজনৈতিক নেতাদের পোস্টার আর বিশালাকার বিলবোর্ডে। দেখে মনে হবে এই মুক্তিযোদ্ধা চত্তরটির চাইতে তাদের বিলবোর্ডের মূল্য অনেক বিশি। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন দেশে যে অসুস্থ্য রাজনীতির সংস্কৃতি চালু হয়েছে, এ অসুস্থ সংস্কৃতির ধারারই বহি:প্রকাশ এটি। তাই তারা নিজেদের ব্যাক্তিগত প্রচারের হাতিয়ার দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা চত্তরটি ঢেকে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। এমন অসুস্থ রাজনীতির ধারা থেকে বেরিয়ে এসে মুক্তযুদ্ধের চেতনাকে লালন করা উচিৎ বলে মনেকরেন স্থানীয়
04 December 2015
Author: নতুন প্রজন্ম কুমিল্লা
কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।
0 facebook: