নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চিকিৎসক সংকটে ভেঙে পড়েছে মহানগরীসহ কুমিল্লার ১৬ উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা। সংকট রয়েছে চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদির। নিয়োগকৃত চিকিৎসকরা গ্রাম-গঞ্জের কর্মস্থলে থাকতে অনীহার কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ভুক্তভোগী রোগীসহ সাধারণ মানুষ।
ফলে চিকিৎসাসেবা নিতে রোগীরা ছুটছেন কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। সাধারণ রোগীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের অভিযোগ, চিকিৎসকরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগ নিয়ে কুমিল্লা মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা সদরে গিয়ে প্রাইভেট প্যাকটিস করেন। তারা স্বাস্থ্যসেবার নামে ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ছেন।
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মজিবুর রহমান জানান, কুমিল্লায় মঞ্জুরিকৃত ৪৭৯ পদের মধ্যে বর্তমানে ৫৭ চিকিৎসক নেই। এ সংকট নিরসনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরের চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন অফিসের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিসংখ্যান সূত্রে দেখা গেছে, ৩ হাজার ৮৭.৩৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ জেলায় স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক জনবল সংকটসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামাদি না থাকায় রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। প্রায় ৫৭ লাখ জনসংখ্যার এ জেলায় ৪২২ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে মহানগরীসহ কুমিল্লার ১৬ উপজেলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা। এখানে ওএসডি ডাক্তার ১৫৬ জন। এ ছাড়া ২য় শ্রেণীর কর্মচারীর ৫৮টি, ৩য় শ্রেণীর কর্মচারীর ৪৫৬টি এবং ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীর ১০৩টি শূন্যপদ রয়েছে।
এদিকে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ব্যবসায় নামে-বেনামে জড়িয়ে আছেন সরকারি হাসপাতালের অধিকাংশ ডাক্তার। সরকার গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ডাক্তারদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ের কমর্রত চিকিৎসকরা বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালে এক্স-রে মেশিনসহ স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিভিন্ন জিনিসপত্র দিনের পর দিন বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লায় ১৬ উপজেলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার ৪৪৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছে। জেলা সদরের বাইরের ১৫ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে ৩১ শয্যা ৯টি, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো হচ্ছে- চৌদ্দগ্রাম, মুরাদনগর, লাকসাম, দেবিদ্বার, হোমনা, লাঙ্গলকোট, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া।
এর মধ্যে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাঝে মধ্যে রোগীদের অপারেশন কার্যক্রম চলে। অপর ৫টি হাসপাতালে ওটি ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি থাকলেও এগুলো নামে আছে, কাজে নেই। এ ছাড়া বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলে কুমিল্লা জেলায় ২০ শয্যাবিশিষ্ট ৬টি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। এ সব হাসপাতালে প্রতিটিতে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ৬ জন ডাক্তার ও ৫ জন নার্সসহ ২১টি পদ সৃজন করা হয়।
সরকার কোটি কোটি টাকা স্বাস্থ্যসেবার জন্য এ সব হাসপাতালে ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় এ সব হাসপাতাল স্থাপনা অবহেলায় পড়ে আছে। অধিকাংশ হাসপাতালের মূল্যবান স্থাপনার দরজা-জানালা খুলে নিয়ে গেছে দুষ্কৃতকারীরা।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মো. মজিবুর রহমান বলেন, সার্জারি ডাক্তার ও এনেসথেসিয়া ডাক্তার সংকটের কারণে উপজেলা হাসপাতালগুলোতে অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ভুয়া ডাক্তার এবং ক্লিনিক, প্যাথলজির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে বলেও তিনি জানান।
