21 December 2015

নিমসার মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ পাইকারি আড়ত !


সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীঃ ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের চার লেনের কুমিল্লার নিমসার এলাকায় রোড ডিভাইডারে(সড়ক দ্বীপ) রকমারি সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের পাইকারি আড়ত পরিচালনা করছে বেশ ক’জন ব্যবসায়ী। ফলে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতা।
প্রতিদিন দেশের ব্যস্ততম এই মহাসড়কের মাঝখানে গড়ে উঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সহ সড়কের পাশে থাকা কাচাঁমালের এইসব দোকানে গভীর রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা।
মহাসড়কের মাঝখানে অবৈধভাবে গড়ে উঠা এইসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যে কোন মুহুর্তে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কোন যানবাহন দুর্ঘটনা কবলিত হলে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে মহাসড়কের পাশে অবৈধ দোকান-পাট বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও সেটাও এখানো কার্যকর হচ্ছে না।
সরেজমিন মহাসড়কের নিমসার এলাকায় গড়ে উঠা বাজার ঘুরে দেখা যায়, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের নিমসার এলাকায় ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশে বিগত শতাব্দীর শেষ দিকে একটি কাচাঁবাজার গড়ে উঠে। সময়ের বিবর্তনে বর্তমানে বাজারটি দেশের অন্যতম বৃহৎ কাচাঁবাজারে পরিণত হয়।
প্রতিদিন নিমসারের আশপাশের গ্রাম, জেলার বিভিন্ন উপজেলা সহ গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, যশোহর, নওগাঁ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জয়দেবপুর, গাজীপুর, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, লক্ষèীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সারা বছর উৎপাদিত নানা জাতের তরকারী ছাড়াও মৌসুমী ফল কৃষক সহ পাইকাররা এই বাজারে নিয়ে আসে বিক্রির জন্য।
পরবর্তীতে খুচরা ও পাইকাররা সেখান থেকে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লা মহানগরী.জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ রাজধানী ঢাকা,চট্রগ্রাম,সিলেট সহ বিভিন্ন জেলায়। ফলে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে এই বাজারের ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। রাত যত গভীর হয় নিমসার বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কেনা-বেচাঁ তত জমে উঠে। এক সময় রাত পেরিয়ে সকালের পর দিনের আলো বাড়ার সাথে সাথে বাজারের কর্মব্যস্ততা শেষ হয়।
স্থানীয় দায়িত্বশীল একাধিক সুত্র জানায়, দেশের প্রধান ব্যস্ততম এই মহাসড়কে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০/২২ হাজার ভারী ও হালকা সহ বিভিন্ন শ্রেণীর যানবাহন চলাচল করে। যেই মহাসড়কে প্রতি মিনিটেই একাধিক গাড়ি পারাপার হচ্ছে সেই মহাসড়কের পাশে এতদিন ছিল এই নিমসার বাজারের কার্যক্রম।
সম্প্রতি দেশের পাইপ লাইন খ্যাত প্রধান এই মহাসড়কটিতে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হলে রাস্তার পাশে থাকা পাইকার ও খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো স্থান পরিবর্তনে বাধ্য হয়। তবে কিছু ব্যবসায়ী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে চার লেনের মাঝখানে ডিভাইডারের উপর দোকান-পাট গড়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। পাশাপাশি মহাসড়কের দু’পাশেও কোল ঘেষে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
Comillaস্থানীয় একাধিক সুত্র জানায়, মহাসড়কের ডিভাইডারের উপর গড়ে উঠা তরকারির পাইকার আড়তে শত শত পাইকার, খুচরা বিক্রেতারা ভিড় করেন প্রতিদিন। এসকল আড়তের পাশে মহাসড়কের উপর যানবাহন রেখে ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আসা মালামাল প্রতিদিন জমা করছে তাদের দোকানে।
পরবর্তীতে আবারো বিভিন্নস্থান থেকে আসা ক্রেতারা ক্রয় শেষে ট্রাক, পিক-আপ, নসিমন, করিমন, ভটভটি, রিক্সাভ্যান সহ বিভিন্ন যানবাহনে করে নানাস্থানে নিয়ে যাচ্ছে। এই সময় ব্যস্ততম মহাসড়ক পার হতে হয় এসকল ক্রেতা-বিক্রেতাদের। পারাপারে ঝুঁকিপূর্ণ,মহাসড়কে যানবাহন রেখে লোডিং আনলোডিং এর ফলে মহাসড়কের এই স্থানে যানজটও লেগে থাকে রাতভর।
সুত্রমতে ,ব্যস্ততম এই জাতীয় প্রধান মহাসড়কের মাঝখানে রোড ডিভাইডারের উপর গড়ে উঠা এই আড়তগুলোতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বা দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে কোন যানবাহন উঠে পড়লে সেখানে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে নিমসার এলাকায় শুধু রোড ডিভাইডারের উপরই না মহাসড়কের দু’পাশে কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু তরকারীর আড়ত। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত এসকল আড়তে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আসা মালামাল নামানো ছাড়াও স্থানীয় সহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ক্রেতারা মালামাল ক্রয় করে সেগুলো ট্রাক, কাভার্ডভ্যান বা পিক-আপে করে নিয়ে যাচ্ছে। তখন দীর্ঘ সময় এসকল গাড়িগুলো রাস্তার উপর অপেক্ষমান থাকায় মহাসড়কের এই এলাকায় সৃষ্টি হয় প্রতিদিন যানজট।
সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় মহাসড়কের পাশে অবৈধ দোকান-পাট ব্যবসা-বানিজ্য পরিচালনা নিষিদ্ধ করলেও এখানে সেটাও মানা হচ্ছেনা। এছাড়াও মহাসড়কে চলাচলের নিষিদ্ধ শত শত নসিমন, করিমন, ভটভটি, ট্রাক্টর, রিক্সা ভ্যান যোগে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তরকারি যেমন নিয়ে আসছে তেমনি পাইকার বা খুচরা ক্রেতারা এখান থেকে তরকারী ক্রয় করে নিষিদ্ধ নসিমন করিমন যোগে জেলার বিভিন্নস্থানেও নিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রেও নিষিদ্ধ যান চলাচল বন্ধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা বিআরটিএ, হাইওয়ে বা থানা পুলিশ।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, দেশের প্রধান জাতীয় এই মহাসড়কের সড়ক দ্বীপে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরী করে কেনাবেচাঁ করা বৈধ না। দিনের পর দিন এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা পরিচালনা দায়িত্বশীল প্রশাসন কেন দেখেও না দেখার ভান করছে সেটা আমার বোধগম্য না।
মহাসড়কের চার লেনের ডিভাইডারে গড়ে উঠা তরকারির আড়তের বিষয়ে নিমসার বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, প্রশাসন থেকে বাজারের জন্য কোন নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় ব্যবসায়ীরা মহাসড়কের পাশে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনকস্থানে দোকান-পাট বসিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। আর বিগত সময়ে প্রশাসনও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিতে তেমন কোন চাপ প্রয়োগ করেনি।
বিষয়টি জানতে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলুল জাহিদ পাভেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডিভাইডারে দোকান-পাট পরিচালনা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমি কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফউদ্দিনকে সাথে নিয়ে কিছুদিন পূর্বে নিমসার বাজার এলাকায় গিয়ে মহাসড়কের পাশে থাকা ব্যবসায়ীদের দোকান পাট সরিয়ে নেওয়ার জন্য ১৫ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছি। ওই সময়ে মধ্যে সরিয়ে না নিলে তাদের উচ্ছেদ করা হবে।

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: