কুমিল্লা রিপোর্ট২৪ ডেস্কঃ কুমিল্লার ১০৯ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে গত এক দশকে সাতটি রেলস্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব রেলস্টেশনের মধ্যে এখন চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ। এ ছাড়া অনেক স্টেশন ব্যবহার হচ্ছে গরু-ছাগল বাঁধার কাজেও। লোকবল সংকটসহ নানা কারণে এসব স্টেশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকার যাত্রীরা দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তিতে রয়েছে। লাকসাম রেলওয়ে জংশন সূত্র জানায়, বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব রেলস্টেশনের মধ্যে কয়েকটিতে নামমাত্র ট্রেন থামে। এ ছাড়া বেশির ভাগ স্টেশনগুলোই দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ। আংশিক এবং পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টেশনগুলো হলো লাকসাম-নোয়াখালী রেলপথের লাকসামের দৌলতগঞ্জ স্টেশন, মনোহরগঞ্জে খিলা স্টেশন, একই উপজেলার নাথেপেটুয়া স্টেশন ও বিপুলাসার রেলস্টেশন, লাকসাম-চট্টগ্রাম রেলপথের নাঙ্গলকোটের নাওটি রেলস্টেশন, লাকসাম-আখাউড়া রেলপথের কুমিল্লার সদর দক্ষিণের আলী শহর স্টেশন এবং সদর উপজেলার ময়নামতি রেলস্টেশন। এ ছাড়া বর্তমানে আরো পাঁচ থেকে ছয়টি স্টেশন বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জনবল সংকটের কারণে বেশির ভাগ রেলস্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া ট্রেনে সেবার মান কমে যাওয়ায় যাত্রীরা রেল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তবে বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব স্টেশন যদি আবারও আধুনিকভাবে চালু করা যায়, তাহলে এ অঞ্চলে রেলকে লাভজনক ও জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব হবে। দীর্ঘদিন ধরে ওই রেলস্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় স্টেশনের মালামাল ইতিমধ্যে চুরি হয়ে গেছে। এ ছাড়া স্টেশনের অনেক সম্পত্তিও ক্রমে দখল হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিভিন্নভাবে এসব সম্পত্তি দখল করে নিচ্ছে। গত শুক্রবার বিকেলে আলী শহর রেলস্টেশন এলাকায় গিয়ে জানা যায়, স্টেশনটি প্রায় এক দশক ধরে বন্ধ। ওই স্টেশনের প্লাটফর্মে স্থানীয়রা ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ করছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রায় সব স্টেশনের একই অবস্থা। কোনো কোনো স্টেশন স্থানীয়রা গরু-ছাগল বাঁধার কাজে ব্যবহার করছে। আলী শহর রেলস্টেশনসংলগ্ন বাড়ির বাসিন্দা দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘যোগাযোগের সুবিধার জন্য স্টেশনের পাশে বাড়ি করেছিলাম। আগে এ স্টেশনে লম্বা হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন থামত আর ছাড়ত। যাত্রী ওঠানামায় এলাকা সরগরম হয়ে উঠত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে স্টেশনটি বন্ধ। তাই বাড়ির পাশে রেললাইন ও স্টেশন থাকলেও এখন আর ট্রেনে ভ্রমণ করা হয় না। এটি ফের চালু হলে এলাকাবাসী উপকৃত হবে।’ মনোহরগঞ্জের খিলা রেলস্টেশন এলাকার বাসিন্দা জাফর আহমেদ বলেন, ‘আগে এ অঞ্চলের সব শ্রেণির মানুষের চলাচলের প্রধান মাধ্যম ছিল রেল। কিন্তু কালের আর্বতনে এ অঞ্চল থেকে রেল চলাচল হারিয়ে গেছে। এ ছাড়া আমাদের রেলস্টেশনটিও দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে।’ তিনিও বন্ধ হয়ে যাওয়া রেলস্টেশনটি ফের চালুর দাবি জানান। লাকসাম-নোয়াখালী রেলপথের বিপুলাসার রেলস্টেশন এলাকার নূরে আলম বলেন, ‘আগে আমাদের এ স্টেশনে বিভিন্ন ট্রেন থামত। আমরা খুব সহজে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করতে পারতাম। কিন্তু এখন আগের মতো ট্রেন থামে না। ফলে আমাদের ভোগান্তিও বেড়েছে।’ স্টেশনটি চালু হলে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে রেলওয়ে কুমিল্লার সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কিছু স্টেশন জনবল সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বলে শুনেছি। তবে এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত বলতে পারব না।’ লাকসাম রেলওয়ে জংশনের পরিবহন পরিদর্শক মাসুদ সরওয়ার জানান, বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব রেলস্টেশনে কোনো স্টেশন মাস্টার নেই। নেই কোনো লোকবল। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই স্টেশনগুলো বন্ধ হয়েছে। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ করে স্টেশনগুলো আবার চালু করা গেলে রেলকে আরো লাভজনক করে তোলা সম্ভব হবে।
-সূত্র দৈনিক কালের কণ্ঠ

0 facebook: