09 October 2015

কুমিল্লা মহানগরীসহ জেলার সর্বত্রই বেড়ে চলেছে অবহেলিত শিশুদের সংখ্যা


মো. জাকির হোসেনঃ যাদের দেখভালো বা নিয়ন্ত্রনের কথা ছিল শিশু শ্রম, টোকাই বা মাদক সেবী শিশুদের নিয়ন্ত্রনে রাখার তাদের কোন খেয়াল নেই । আর তাইতো কুমিল্লা মহানগরীসহ জেলার সর্বত্রই বাড়ে চলেছে অবহেলিত এসকল শিশুদের সংখ্যা। সরকার যখন প্রানান্ত চেষ্টা চালাচ্ছে সবার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা চালুতে, সেখানে নানা কারণে কর্মজীবি বা মাদকাসক্ত শিশুর সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও সংশ্লিষ্ট প্রশসনের খেয়াল নেই। ফলে পরিবহনের মত বিপদজনক যানবাহনে ঝুলে প্রতিদিনই শিশুরা বিভিন্ন শ্রেনীর পরিবহনে সহকারীর কাজ করছে ঝুঁকি নিয়ে। পাশাপাশি ওয়েল্ডিং, হোটেল বয়, রিক্সা-ভ্যান সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দিন দিন বাড়ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা। এতে সরকার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছঁতে সফল হতে পারছে না।
সরেজমিন ঘুরে সংশ্লিস্ট দায়িত্বশীল ভিন্ন সুত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, সরকার সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করলেও কুমিল্লায় সেটা কার্যকর হচ্ছে না। দিন দিনই মহানগরী সহ জেলার বিভিন্নস্থানে নানা কর্ম ক্ষেত্রে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। কুমিল্লা মহানগরী সহ পুরো জেলায় যানবাহনে বাড়ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে। দেশের প্রধান ব্যস্ততম মহাসড়ক ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের চৌদ্দগ্রাম, মিয়ারবাজার, সুয়াগঞ্জ, পদুয়ারবাজার, ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট, চান্দিনা, মাধাইয়া, ইলিয়টগঞ্জ, গৌরীপুর ছাড়াও লাকসাম বাইপাস, লালমাই, মুদাফফরগঞ্জ, কংশনগর, দেবিদ্বার, কোম্পানীগঞ্জ, মুরাদনগর, হোমনাসহ জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত জনপদ সমূহে ইজিবাইক, রিক্সা, ভ্যান, সিএনজি অটোরিক্সা চালানো ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে চলাচলরত যাত্রীবাহী ফিটনেসবিহীন মাইক্রোবাস,সম্প্রতি মহাসড়কে সিএনজি অটোরিক্সা বন্ধের পর যাত্রী পরিবহনে চালু হওয়া লক্কর-ঝক্কর মার্কা ট্রাকের উপর পলিথিন,বাশঁ বেধেঁ কাঠের টেবিল দিয়ে সীট বানানো যাত্রীবাহী যানবাহনের সহকারী হিসেবে শিশুদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। জেলার সর্বত্র হোটেল সহ চা দোকানে রয়েছে শত শত শিশু শ্রমিক। একইভাবে বিভিন্ন মিল-কারখানায় সকাল-সন্ধ্যা কাজ করছে অনেকেই। নগরীর শাসনগাছা এলাকার একটি ওয়ার্কশপে কর্মরত শিশু আরাফাত (ছদ্মনাম) জানান,তার বাবার সামর্থ নেই স্কুলের লেখাপড়ার খরচ চালানো। তাই সে পরিবারের আয় রোজগার বাড়াতে এই কাজ বেছে নিয়েছে। একইভাবে কথা হয় মাইক্রোবাস চালকের সহকারী জয়নাল,রেজাউল,সবুজ (সবগুলো ছদ্মনাম) । তারা জানায়,পরিবারের স্বচছলতার জন্য তারা ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজ বেছে নিয়েছে। প্রতিদিন এজন্য তারা দুপুরে চালকের কাছ থেকে খাওয়ার টাকা ছাড়াও ১ থেকে দেড়’শ টাকা করে পাচ্ছে। এছাড়া মহানগরী সহ জেলার বিভিন্নস্থানে ওয়ার্কশপগুলোতে কাজ করছে শত শত শিশু। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা পরিশ্রম করে কেউ পাচ্ছে মাস শেষে ১ দেড় হাজার টাকা সাথে নাস্তা। দুপুরের খাবারও তাদের আনতে হয় বাড়ি থেকে। অথচ এই সকল শ্রম সম্পূর্ণই নিষিদ্ধ । এগুলো দেখভালোর জন্য রয়েছে সরকারের সংশ্লিস্ট বিভাগ। অভিযোগ রয়েছে সরকারের যে বিভাগের এই শিশু শ্রম নিয়ন্ত্রনের কথা রয়েছে সেই বিভাগের সংশ্লিস্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা শিশু শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া প্রতিষ্ঠান থেকে মাস শেষে হাতিয়ে নিচ্ছেন নির্দিস্ট হারে মাসোহারা। সরকারের তাই বছর শেষে শিশু শিক্ষার যে লক্ষ্য সেটা বাস্তবায়নে সমর্থ হচ্ছে না। এদিকে শিশুরা অর্থনৈতিক রুটি-রজির দিকে ঝুঁকে যাওয়ায় তাদের মাঝে মাদকাসক্ত শিশুর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। প্রথম দিকে সিগারেট তারপর আস্তে আস্তে বিভিন্ন শ্রেনীর নেশাজাতীয় ট্যাবলেট,গাঁজা ছাড়াও কোডেকাফ জাতীয় সিরাপ সেবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠে। এছাড়াও বহু পথ শিশুদের বিভিন্ন মার্কেট বা পরিত্যক্ত ভবনের ছাদ সহ নিরাপদ স্থানে পলিথিনের ভিতর গাম রেখে মুখ দিয়ে নেশা করতে দেখা যায়।  এদিকে প্রতি বছর যখন শিশু অধিকার দিবস আসে তখন প্রশাসনের সর্বস্তরের লোকজন নড়েচড়ে বসে শিশুদের জয়গান করতে। পরদিনই যেন সব কিছু অতীত হয়ে যায়। শিশুদের কথা নিয়ে কেউ আর ভাবেনাুপথ শিশু বা টোকাই সহ জেলাজুড়ে যখন প্রতিদিনই বাড়ছে শিশুর সংখ্যা তখন সংশ্লিস্ট প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তা ভাবিয়ে তুলেছে সরকারের সবার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম কতটা নিরাপদ। সবার জন্য শিক্ষা যেখানে বাধ্যতামূলক,শিক্ষা যেখানে অধিকার। সেখানে কিভাবে জেলার সর্বত্র প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক শিশু স্কুল ফেলে নানা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। জেলা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কুমিল্লা অঞ্চলের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটা অংশের ঝড়ে পড়া শিশুরাই মূলত পরিবারের হাল ধরতে বিভিন্নস্থানে কাজ করছে।
সমাজ সেবক হুমায়ূন কবীর জানান, প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ার পরও কিভাবে হাজার হাজার স্কুলগামী শিশু স্কুলে না গিয়ে নানা কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকে পড়ছে সেটা নিয়ে সমাজের দায়বদ্ধতা কমে যাওয়ায় এই অবস্থা। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিশুদের পরিবারের অবস্থা জেনে সামাজিকভাবে সাহায্যের পাশাপাশি সংশিষ্ট প্রশাসনের নজরদারী বাড়ানো হলে এবং নিয়োগ দেওয়া প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হলে কর্মক্ষেত্রে পথ শিশুর সংখ্যা কমে যাবে।
এ প্রসঙ্গে জেলা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক মোঃ জাকির হোসেন জানান, আমি মাত্র কয়েক দিন হলো কুমিল্লায় যোগদান করেছি, সেহেতু বিভিন্ন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানে শিশু শ্রম নিয়ন্ত্রন খোজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী শিশু শ্রম বন্ধে জেলা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর যথাযথ প্রদক্ষেপ গ্রহন করবেন বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: