সৈয়দ মোঃ ইব্রাহীম খলিলঃ প্রাচীন আর সমৃদ্ধশালী জেলাগুলোর নাম বললে কুমিল্লার নামটা একদম উপরের দিকেই আসে, আর এ কারণে কুমিল্লা জেলাকে নিয়ে দেশের মানুষের একটা আলাদা আগ্রহ আছে । কুমিল্লা জেলাতে ঘুরে দেখার কি আছে এ নিয়ে হরহামেশাই প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয় ,কিভাবে আসবো কুমিল্লা ? ঘুরে দেখার জায়গাগুলোতে কিভাবে যাবো ? খাবো কোথায় ?
প্রথমেই আসি কুমিল্লাতে দেখার মতো কি আছে যার টানে আপনি কুমিল্লা আসবেন ? অনেক জায়গা আছে যা দেখার জন্য আপনি রসমলাই এর জন্য বিখ্যাত কুমিল্লা জেলায় ঘুরে আসতে পারেন। তাহলে শুরু করা যাক ? আজকে ৫ম পর্বে আপনাদের সাথে আলোচনা করব লালমাই পাহাড় চূড়ার চণ্ডীমুড়া নিয়ে।
কুমিল্লায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যে কয়েকটি
তীর্থস্থান রয়েছে তার মধ্যে চণ্ডীমুড়া ঐতিহ্য
অন্যতম। কুমিল্লার আঞ্চলিক ভাষায় অপেক্ষাকৃত
ছোট পাহাড়কে মুড়া বলা হয়। পাহাড়ের গায়ে
সিমেন্টের সিঁড়ি বেয়ে শীর্ষে উঠে মন্দির দেখার
আনন্দই আলাদা। এটি কুমিল্লার অন্যতম একটি
দর্শনীয় স্থান। চণ্ডীমুড়ায় ২টি মন্দির পাশাপাশি
অবস্থিত। দক্ষিণ পাশের মন্দিরটি চণ্ডী মন্দির ও
উত্তর পাশের মন্দিরটির শিব মন্দির। মন্দির দুটো
সপ্তম শতাব্দীতে নির্মিত। সপ্তম শতাব্দীর খড়গ
বংশীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাজা দেবখড়গের রানী
প্রভাবতী একটি হিন্দু মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেবী
সর্বাণীর মূর্তি স্থাপন করেছিলেন। রানী প্রভাবতী
হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন। চণ্ডীমুড়ার উচ্চতা প্রায়
১৫০ ফুটের উপরে। এর চূড়ায় অবস্থিত এই মন্দির। নিচ
থেকে এতে উঠতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৮০টি সিঁড়ি
আছে। সমুদ্র বেষ্টিত পলল গঠিত চত্বর সমভূমি রূপে
উদ্ভাসিত মহাতীর্থ চণ্ডীমুড়া, সপ্তম শতাব্দীতে
বৌদ্ধরাজ দেবখড়গের স্ত্রী প্রভাবতী দেবী
অমরকীর্তি স্থাপনে বদ্ধপরিকর হয়ে ২টি মন্দির
স্থাপন করেন। একটি চণ্ডী মন্দির, অপরটি শিব মন্দির।
চণ্ডী মন্দিরে অষ্টভুজা সর্বাণী মহা সরস্বতী,
অপরটিতে শিবমূর্তি স্থাপন করেন। অদূরে দক্ষিণ-পূর্ব
দিকে এক বিশাল দিঘি খনন করেন। বরুড়া থানার
অন্তর্গত গোষণা গ্রামের স্বামী আত্ননন্দ গিরি
মহারাজ স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে পরিত্যক্ত মন্দিরগুলো
পুনঃসংস্কার করেন। বর্তমানে সনাতন ধর্মালম্বী
ছাড়াও নানা ধর্মের পর্যটক প্রতিদিনই এই মন্দির
পরিদর্শনে আসেন। সরেজমিন দেখা যায়, চণ্ডী
মন্দিরের পেছনের দেয়ালে লম্বালম্বিভাবে বেশ
বড় ফাটল ধরেছে। মন্দির দুইটিতে নতুন রং করা
হলেও ফাটল মেরামতের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া
হয়নি। এখানকার কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে
জানা যায়, প্রতি বছর তিনবার চণ্ডীমুড়ায় ভক্তবৃন্দের
সমাবেশ ঘটে। কার্তিক মাসের কালীপূজার সময়
দেওয়ানি উৎসব, পৌষ-মাঘ মাসে গীতা সম্মেলন
এবং ফালগুন-চৈত্র মাসে বাসন্তী মহাঅষ্টমী।
আশ্রমের লোকজনসহ আগত ভক্তবৃন্দের বিশ্বাস-মা
চণ্ডী দেবীর কৃপা থেকে কেউ খালি হাতে ফেরে
না। ১৯৫৫-৫৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান
সরকারের প্রত্নতাত্তি্বক বিভাগ লালমাই-
ময়নামতিতে জরিপ চালিয়ে কুমিল্লার
প্রত্নতাত্তি্বক যে ৫৪টি স্থান সংরক্ষণের জন্য
নির্দিষ্ট করে তার মধ্যে চণ্ডীমুড়া অন্যতম।যেভাবে যেতে হবেঃ কুমিল্লা শহরের প্রায় ১৩ কিলোমিটার পশ্চিমে কুমিল্লা-চাঁদপুর-বরুড়া সড়কের সংযোগস্থলে দেড়'শ ফুট পাহাড়ের উপরে অবস্থিত চন্ডীমুড়া মন্দির। কুমিল্লা পাদুয়ারবাজার বিশ্বরোড থেকে বাস অথবা সিএনজি যোগে যেতে পারেন।
কোথায় থাকবেনঃ কুমিল্লা শহরে অনেকগুলো ভাল মানের হোটেল আছে। সেখানে থাকতে পারেন। বার্ড খুব কাছে। বার্ডে যোগাযোগ করলে সেখানেও থাকতে পারেন।