12 October 2015

ফুটবল ঐতিহ্যের কুমিল্লা


বিশেষ প্রতিবেদনঃ পাকিস্তান আমল বা স্বাধীনতার পর আশির দশক পর্যন্ত দেশের ফুটবলে এবং ক্রিকেটে কুমিল্লার ছিল প্রচণ্ড দাপট। কুমিল্লার ফুটবলার ছাড়া জাতীয় দল গড়া অসম্ভব হয়ে পড়ত। আর ক্রিকেট ইতিহাস বলছে ১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় ক্রিকেট লিগের চ্যাম্পিয়ন দল ছিল কুমিল্লা। গত কয়েক দশকে কুমিল্লায় ক্রিকেট নিষ্প্রাণ হয়ে গেলেও বিপিএলের এই আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস্ নামে কুমিল্লার একটি দল হওয়ায় পুরনো গৌরব ফিরে আসবে বলে আশা করছেন সবাই।
ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডানে সেরা একাদশে ঠাঁই পেতেন অধিকাংশ কুমিল্লার ফুটবলাররা। ফুটবলের ইতিহাস ঘটলে বের হয় এমন তথ্য। কুমিল্লার সূর্য চক্রবর্তী অল ইন্ডিয়া ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন।
আশরাফ চৌধুরীর মতো তুখোড় স্ট্রাইকার এখনো সৃষ্টি হয়নি। ষাট দশকে ঢাকা মোহামেডানের হয়ে প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে এক মৌসুমে ৫২ গোল করেন তিনি। এই রেকর্ড এখনো কারও পক্ষে ভাঙা সম্ভব হয়নি।
গোলাম সারোয়ার টিপু, কায়কোবাদ, বাদল রায়ের মতো মাঠ কাঁপানো ফুটবলার কুমিল্লারই ছেলে। এ তিনজনই ছিলেন ফুটবলে উজ্জ্বল নক্ষত্র। মোহামেডানে কুমিল্লার ফুটবলার বেশি ছিল বলেই অনেকে আবার ঐতিহ্যবাহী দলটির নাম দিয়েছিলেন ‘কুমিল্লা স্পোর্টিং ক্লাব।’
সত্তর দশকে মধ্যমাঠের সেরা খেলোয়াড় প্রণব কুমার দে ভানুও কুমিল্লার ছেলে। জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করা শফিকুল ইসলাম মানিক, রঞ্জিত সাহা, হরে কৃষ্ণ, নিজাম উদ্দিন মজুমদারতো আছেনই। দেশসেরা গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্যও কুমিল্লার গর্বিত সন্তান। জাতীয় দলের অধিনায়কও ছিলেন তিনি।
জাতীয় দলে খেলা এনামুল হক শরীফও কুমিল্লার ছেলে। এগুলোতো পরিচিত মুখ। এক সময় কুমিল্লায় ফুটবলারের অভাব ছিল না। শুধু কি ফুটবলার, অনেক খ্যাতনামা সংগঠকও ছিলেন কুমিল্লার।
যে জেলা ফুটবলের জন্য বিখ্যাত ছিল সেই কুমিল্লা এখন সেভাবে ফুটবলার দেখা মিলছে না। বলা যায় ফুটবলে ক্রান্তিকাল চলছে। কথা হচ্ছে কেন এ অবস্থা?
এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেলা ক্রীড়াসংস্থার সহ-সভাপতি শিবলী নোমানী বলেন, দ্রুত নগরায়নের কারণে কুমিল্লার মাঠ শূন্য হয়ে পড়েছে। ছেলেরা খেলবে সে ধরনের উপযুক্ত মাঠ খুঁজে পাচ্ছে না। আগে লিগ ছাড়াও কুমিল্লায় ফুটবলে আরও টুর্র্নামেন্ট হতো। এখান থেকেই প্রতিভার সন্ধান মিলতো। বাদল, মানিক, বিপ্লবরা এভাবেই উঠে এসেছিল। কুমিল্লায় অনেক সুপরিচিত ক্লাবও ছিল। ঢাকার আগে ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। স্টেডিয়ামও চালু হয়েছিল ১৯৩৩ সালে। ছেলেরা খেলতে পারছে না বলে কুমিল্লায় যেমন প্রতিভাবান ফুটবলারের সন্ধান মিলছে না, তেমনিভাবে অনেক ক্লাব বিলুপ্তও হতে চলেছে।
সত্তর দশকে জাতীয় দলে খেলা প্রণব কুমার ভানু বলেন, আমরা পরিশ্রম করে ফুটবলার হিসেবে পরিচিত লাভ করেছি। কুমিল্লায় ফুটবলে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তা অবশ্যই কাটিয়ে তোলা সম্ভব। এ জন্য স্কুল লেভেল থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। লিগ হতে হবে নিয়মিত। এ ব্যাপারে ক্রীড়া সংগঠকদের উদ্যোগ নিতে হবে। খেলাধূলার জন্য অভিভাবকদের উৎসাহ দিতে হবে।
শফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, এখন শুধু কুমিল্লা কেন অধিকাংশ জেলাতেই ফুটবলের একই অবস্থা। তবে কুমিল্লার আলাদা একটা ঐতিহ্য ছিল। ঢাকা লিগে এ জেলার ফুটবলারদের দাপট ছিল তুঙ্গে। কথা হচ্ছে, এখন সে অবস্থা নেই কেন? দেখেন বলে সবাই লাথি মারতে পারে। কিন্তু প্রকৃত ফুটবলার হতে হলে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। আমরা এভাবেই ফুটবলার হয়েছি। খেলা থাকতে হবে মাঠে। কুমিল্লায় এসব সংকট প্রকট বলেই ফুটবলে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। সংগঠক উদ্যোগ নিলে আবার এ জেলার ফুটবলে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে। জেলার ফুটবল উন্নয়নে ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্ব অনেক। প্রতিটি জেলায় নিয়মিত লিগ হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা দরকার। আগে শেরেবাংলা কাপ জাতীয় ফুটবল হতো বলে নতুন নতুন খেলোয়াড়ের সন্ধান মিলতো। শুনেছি শেরেবাংলা কাপ আবার হবে। এটা হলে ফুটবল দারুণভাবে উপকৃত হবে। দেখা যাবে শুধু কুমিল্লা নয়, অনেক জেলাতেই প্রতিভাবান ফুটবলারের দেখা মিলবে। ফুটবলার তৈরির যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা কেটে যাবে।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।