28 October 2015

কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন এখন সময়ের ব্যাপার



সাইয়িদ মাহমুদ পারভেজ: কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব পেশ করার  সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুমিল্লার বিভাগ বাস্তবায়ন সম্পর্কিত কমিটি। মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় ঢাকায় উচ্চ ক্ষমতা সম্পর্ন্ন ওই কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সরকারের সমন্বয় ও সংস্কার কমিটির সচিব এবং কুমিল্লার বিভাগ বাস্তবায়ন সম্পর্কিত কমিটির আহ্বায় মো. নজরুল ইসলাম। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই কুমিল্লা বিভাগ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করছে সরকার নিয়োজিত কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন সম্পর্কিত কমিটি। আর এ প্রস্তাব পেশ হলেই কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
সূত্র জানান, কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নের বিষয়ে নানা যুক্তি উত্থাপন করে বৈঠকে কুমিল্লা বিভাগ বাস্তাবায়নের বিষয়ে সরকারে কাছে প্রস্তাব পাঠাতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেন। বৈঠকে উত্থাপিত যুক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল কুমিল্লার ঐতিহ্য, লোকসংখ্যা, উপজেলা-ইউনিয়ন ,আয়তন, সংসদীয় এলাকা, রেমিটেন্স, আয়করসহ নানা বিষয়। এসবের বিবেচনায় শুধুমাত্র কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ও চাঁদপুর জেলা নিয়েই কুমিল্লা বিভাগ গঠন করা যায়। আর তাহলে এ বিভাগ হবে সিলেট ও বরিশালের চেয়েও সমৃদ্ধ বিভাগ। তবে কমিটি কুমিল্লা বিভাগের সাথে ফেনী , নোয়াখালী ,লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া এ ৬ জেলা নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ গঠনের ব্যাপারে চুড়ান্ত মত পোষণ করা হয় বৈঠকে।
সূত্র জানায়, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল বৈঠকে কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নের ব্যাপারে জোড়ালে ভূমিকা রাখেন। তিনি কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নের পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। তাঁর তুলে ধরা যুক্তিগুলো কমিটি আগ্রহের সাথে শুনেন এবং সর্বসম্মমভাবে সমর্থন করেন।
বৈঠকে আরো জানানো হয় কুমিল্লায় এখনই বিভিন্ন বিভাগের ৩০টিরও বেশি বিভাগীয় অফিস রয়েছে। ফলে কুমিল্লা বিভাগ প্রতিষ্ঠার জন্য বেশি বেগ পেতে হবেনা। প্রাচীনকাল থেকেই কুমিল্লা একটি সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী জনপথ। অতীতের সমতট রাজ্যের রাজধানী ছিল কুমিল্লা। যার আওতায় বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা ছিল। সমতট রাজ্য ভাঙ্গার পরও  কুমিল্লার অধীনে ছিল বৃহত্তম নোয়াখালী জেলা। বৃটিশ আমলে কুমিল্লা কোতয়ালী থানার অধীনে ছিল নোয়াখালীর প্রশাসনিক কার্যক্রম। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হতো প্রশাসনিক ব্যবস্থা। সেই সাথে বর্তমান অবস্থায় চট্টগ্রামের চাইতে কুমিল্লার সাথে বৃহত্তম নোয়াখালীর দূরত্ব অনেক কম। যোগাযোগ ব্যবস্থাও খুব ভাল। চট্টগ্রামের সাথে বৃহত্তম নোয়াখালীর ৩ জেলার দূরত্ব ১০২ থেকে ১১৬ কিলোমিটার। আর কুমিল্লার সাথে এ দূরত্ব ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটারের মধ্যে। এসব বিচারে কুমিল্লাকে বিভাগ করা সময়ের যৌক্তিক দাবি বলে কমিটি মনে করেছে।
সূত্র আরো জানান, কুমিল্লা বিভাগ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব প্রতিশ্রুতি। প্রতিশ্রুতি বাস্তায়নের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী খুবই সচেতন। তাই অন্য জেলা আসুক বা না আাসুক বৃহত্তর কুমিল্লার ৩ জেলা নিয়ে হলেও কুমিল্লা বিভাগ বাস্তায়ন হবে।
সূত্রমতে, গতকালের ওই বৈঠকের পর কুমিল্লা বিভাগ বাস্তায়নের বিষয়টি অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কুমিল্লা বিভাগ প্রতিষ্ঠা এখন সমেয় ব্যাপার মাত্র। 

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: