08 September 2015

পাঁচ দশকেও পূর্ণতা পায়নি কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরী

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রতিষ্ঠার পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও অবকাঠামো উন্নয়ন হয়নি কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরীর। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে বরাদ্দকৃত প্লটগুলোয় আশানুরূপ উৎপাদন হচ্ছে না। অনেকে তাদের শিল্প প্লট আবাসিক ভবনে পরিণত করেছেন। ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত উদ্যোক্তারা। ব্যবসায়ীরা জানান, সামান্য বৃষ্টিতেই শিল্পনগরীটি পানিতে তলিয়ে যায়। জলাবদ্ধতা এখানে নিত্যদিনের। ফলে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন কার্যক্রম। এছাড়া সংস্কারের অভাবে ভেতরের রাস্তার অবস্থাও বেহাল। তবে রাস্তা ও ড্রেন সংস্কারের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে বিসিক কর্তৃপক্ষ। কুমিল্লা বিসিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিল্পের প্রসার ও বেকার সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে ১৯৬০-৬১ সালে শহরের অশোকতলার ৫৪ দশমিক ৩৫ একর জমিতে বিসিক শিল্পনগরীটি স্থাপন করা হয়। এখানে ১৪২টি শিল্প প্লট রয়েছে। এসব প্লটে কারখানা চালু আছে ১২৯টি। রুগ্ণ এবং বন্ধ কারখানার সংখ্যা ১০টি। এছাড়া দুটি উৎপাদন উপযোগী কারখানা খালি রয়েছে। বর্তমানে কুমিল্লা বিসিকের শিল্প- কারখানাগুলোয় প্রায় সাত হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। বছরে এখানে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হয়। সরকারের রাজস্ব আহরণ হয় প্রায় ১৮ কোটি টাকা। বিসিক ঘুরে দেখা যায়, ক্ষুদ্র কারখানার পাশাপাশি বেশকিছু রফতানিমুখী বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানও এখানে গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে ফরিদ ফাইবার, পাবন টেক্সটাইল, পাবন ফুডস, টিএন প্যাকেজ, বিসমিল্লাহ টাওয়েল, রেনাটা ফার্মা, মেট্রিক্স ফুডস লি, রূপসী টেক্সটাইলস, আমেনা অ্যালুমিনিয়াম, এস আলম অটোরাইস মিল প্রভৃতি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরীর বেশকিছু প্লটের মালিকানা অবৈধভাবে কয়েক দফায় হাতবদল হয়েছে। এছাড়া অনেক শিল্প মালিক প্লটে নামমাত্র কারখানা তৈরি করে অবশিষ্ট অংশে আবাসিক ভবন নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। এসব অবৈধ আবাসিক ভবন উচ্ছেদ এবং ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা রেকর্ড নেই। প্রশাসনিক নির্লিপ্ততা ও কার্যকর পদক্ষেপ না থাকার কারণে ক্রমেই কুমিল্লা বিসিক মুখ থুবড়ে পড়ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিসিক কর্মকর্তা জানান, প্লট নিয়ে যারা আবাসিক ভবন গড়ে তুলেছেন, তাদের নোটিস দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিসিকের সমস্যাগুলো সমাধানে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার একটি সংস্কার মেরামত প্রকল্পের আওতায় রাস্তা ও ড্রেনের কাজ চলছে। অন্যদিকে পানি-বর্জ্য নিষ্কাশন প্রকল্প মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন। শিল্পালয় ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক অ্যাডভোকেট মাহবুবা আক্তার ও বিসমিল্লাহ ফুড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক মো. শামছুল হক ভূঁইয়া জানান, বিসিকের পক্ষ থেকে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়। এ সমস্যা সমাধানে স্থানীয় প্রশাসনের নজর দেয়া জরুরি। কুমিল্লা বিসিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইফতেখার খান বলেন, সহজ কিস্তি ও সুদের হার কমিয়ে ঋণ এবং মালিক-শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে বিসিকের কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে। কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুম পারভেজ খান ইমরান বলেন, অবকাঠামোর উন্নয়ন না হওয়ায় বিসিকে ব্যবসায়ীদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তবে রাস্তা ও ড্রেন সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া পানি ও বর্জ্য নিষ্কাশন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে সমস্যার অনেকাংশই সমাধান হবে বলে আশা করছি।

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।