সাইয়িদ মাহমুদ পারভেজঃ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ওষুধ প্রশাসনের নির্দেশকে অমান্য করে কুমিল্লার ফার্মেসিগুলোয় নিষিদ্ধঘোষিত ফুড সাপ্লিমেন্ট ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। এতে রোগীরা প্রতারিত হচ্ছেন এবং স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন। কতিপয় চিকিৎসক আর্থিক ও উপঢৌকনের লোভে এসব ফুড সাপ্লিমেন্ট প্রেসক্রাইব করে থাকেন। আর এ খাত থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বাজারজাতকারী নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানগুলো।
ফুড সাপ্লিমেন্ট হলো বিকল্প খাদ্য, কিন্তু ওষুধ নয়। যাতে থাকে ভিটামিন, ক্যালমিয়াম, প্রোটিন, আয়রন, পটাশিয়াম ও মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার। এগুলো ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল আকারে তৈরি করা হলেও ওষুধের দোকানে বিক্রি নিষিদ্ধ।
সরকারি একটি সূত্রে জানা গেছে, মাত্র ছয় মাস আগে ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি পরিপত্র জারি করে। তাতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধ্যাদেশ ১৯৮২-এর ১৪(এ)(১) ধারাতে উল্লেখ রয়েছে কোনো রেজিস্ট্রেশনবিহীন ওষুধ ও তথাকথিত ফুড-সাপ্লিমেন্ট দেশের সব রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে না লেখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। কোনো ফার্মেসিতেই এসব ফুড সাপ্লিমেন্ট প্রদর্শন, মজুদ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তার পরও কুমিল্লার ওষুধের দোকানগুলোয় প্রকাশ্যে এসব বিক্রি করা হচ্ছে।
কুমিল্লা নগরীর বড়বড় ওষুধ মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি ফার্মেসিতে এসব প্রকাশ্যে কেনাবেচা হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। এ ছাড়া যেসব চিকিৎসক ফুড সাপ্লিমেন্ট প্রেসক্রাইব করছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের আশপাশের ফার্মেসিতেই ফুড সাপ্লিমেন্ট বেশি পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় ১০ থেকে ১৫টি বিভিন্ন নামে আমদানিকারকের ব্যানারে প্রায় তিনশর বেশি আইটেম কুমিল্লার ওষুধের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে।
কয়েকজন ফার্মেসি মালিক জানান, যারা ফুড সাপ্লিমেন্ট সরবরাহ করছেন, তারা কাউকেই তোয়াক্কা করে না। তাদের মতে, স্বাস্থ্য প্রশাসন ও ওষুধ প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তারা এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তা ছাড়া বেশ কয়েকজন চিকিৎসক প্রেসক্রাইব করার ফলে অনেক ফার্মেসি মালিকই প্রেসক্রাইব ফলো করতে তারা এসব ফুড সাপ্লিমেন্ট বাধ্য হয়ে বিক্রি করে থাকেন।
ফুড সাপ্লিমেন্ট সম্পর্কে এজন বিশেষজ্ঞ জানান, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, মিনারেল, পটাশিয়ামসমৃদ্ধ তথাকথিত ফুড সাপ্লিমেন্ট রোগীর জন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তা ছাড়া আমাদের দেশীয় ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও মিনারেল থাকে। দুধ ও ডিমে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন পাওয়া যায়। মাছ, মাংস, ডাল এ আছে প্রোটিন। প্রতিটি মানুষ তার ক্যালরি অনুপাতে এগুলো প্রতিদিন নিয়ম করে খেলেই তা পূরণ হয়ে যাবে। ওষুধ খেয়ে এগুলোর অভাব পূরণের প্রয়োজন পড়ে না।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন মুজিবুর রহমান জানান, ফুড সাপ্লিমেন্ট স্বাস্থের জন্য খুব ঝুঁকিপূণ। এগুলো ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে বাইরে থেকে আমদানী হয়। কিন্তু বিক্রি হয় ওষুধের দোনে। এগুলো গ্রহণ না করাই উচিত। তিনি বলেন, কোনো চিকিৎসক তার ব্যবস্থাপত্রে ফুড সাপ্লিমেন্টের নাম লিখতে পারেন না। কারণ এটি আইন সিদ্ধ নয়।