30 August 2015

কুমিল্লায় অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিকের ছড়াছড়ি

কুমিল্লায় অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি। উপজেলা পর্যায়েও ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠেছে চিকিৎসা দেয়ার নামে নানা প্রতিষ্ঠান। দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর থেকে হোমনা সড়কের প্রায় ৩ কিলোমিটারের মধ্যে কমপক্ষে ৭৫টি ক্লিনিক রয়েছে। এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বেশির ভাগেরই অবস্থা বেহাল। এসব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গেলেই সন্ধান মিলে ভুয়া বিশেষজ্ঞ- সার্জারি চিকিৎসক, প্যাথলজিস্ট, সনোলজিস্ট টেকনিশিয়ান, নার্স ও আয়ার। জটিল রোগের অপারেশনে পিছিয়ে নেই বাহারি পদবির বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নামধারী ভুয়া চিকিৎসকরা। মহানগরসহ উপজেলা পর্যায়ের বেসরকারি কিছু হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পরিদর্শন দলের আগমনের খবর পেয়ে ভুয়া ডাক্তার দৌঁড়ে পালানোর ঘটনাও ঘটেছে। প্রায় দেড় বছরে শতাধিক ক্লিনিক ও কমপক্ষে ৩৫ জন ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জানা যায়, জেলা ক্লিনিক পরিদর্শন টিম সম্প্রতি আনোয়ারা সেন্ট্রাল হসপিটাল, মুক্তি মেডিক্যাল সেন্টার, গৌরীপুর আধুনিক হাসপাতাল, গৌরীপুর মডার্ন ডায়াগনষ্টিক অ্যান্ড ডেন্টাল সেন্টার ও লাইফ হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ ৫টি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছে। ফৌজিয়া জামান, সুষমা খানম, খোরশেদ আলমসহ ৩ ভুয়া জাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এসএসসি পাস করা ফাজিলা আজিজ নামের এক ভুয়া ডাক্তারকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। জেলার তিতাস উপজেলার আসমানিয়া এলাকার মুক্তি হসপিটালে অভিযান চালিয়ে পিসি সাহা নামে এক ভুয়া ডাক্তারকে শনাক্ত করা হয়েছে। পিসি সাহা ওই হাসপাতালে চেম্বার খোলে নিজেকে এমবিবিএস, গাইনোকোলজিস্ট ও এনেসথেসিওলজিস্ট সাইনবোর্ড লাগিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। পরে একই হসপিটালে পরিদর্শন টিমের আগমনের খবর পেয়ে অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) টেবিলে রোগী ফেলে পালিয়ে যান সাদিয়া চৌধুরী সিম্মি ওরফে শাহনাজ আক্তার মনি, জয়, মঞ্জুরুল ইসলাম নামের ৩ ভুয়া ডাক্তার। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত শাহানাজ মনিকে ১ বছর কারাদণ্ড প্রদান করেন। জানা যায়, শাহানাজ আক্তার মনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের আহম্মেদ ক্লিনিকে ৭ বছর ধরে নার্সদের সঙ্গে থেকে সেবিকার কাজ শিখে এবং পরে ডাক্তার সাদিয়া চৌধুরী সিম্মি নাম ব্যবহার করে আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে তিতাসের মুক্তি হাসপাতালে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন। তিতাস ক্লিনিকের অভায়রণ্য হিসেবে পরিচিত। অবৈধ এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ও জটিল রোগ নিয়ে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হলেও প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা স্থানীয় ও প্রভাবশালী হওয়ায় এসবের প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ এলাকায় বালুর ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে কসাই পর্যন্ত হাসপতাল- ক্লিনিক ব্যবসায় জড়িত। চিকিৎসার নামে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসহায় রোগীদের ঠকিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয় এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে। একই অবস্থা জেলার অন্য উপজেলায়ও। সম্প্রতি ক্লিনিক পরিদর্শন টিম জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলায় লাইসেন্সবিহীন ৩টি অবৈধ ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে। ব্যবস্থা নিয়েছে তানবিরুল আবেদীন ও আশিষ কুমার ঘোষ ওরফে একে ঘোষ নামের ২ ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে। এমবিবিএস ডাক্তার না হয়েও তানবিরুল আবেদীন বিশেষজ্ঞ সার্জন হিসেবে ওই এলাকার বিভিন্ন ক্লিনিকে অপারেশন করে আসছিলেন। আর আশিষ কুমার ঘোষ ওরফে একে ঘোষ নিজেকে সহকারী অধ্যাপক (শিশু ও রক্ত রোগ) বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা- এ গায়েবি পদবি উল্লেখ করে চিকিৎসার নামে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। কুমিল্লা নগরীর জেনারেল (সদর) হাসপাতালের সামনের সড়কের পাশে অবস্থিত মেট্রোপলিটন হসপিটালে জেলা ক্লিনিক পরিদর্শন টিম অভিযানে গেলে মোজাহিদুল হক রিপন নামে এক ভুয়া ডাক্তার পালিয়ে যান। ওই ব্যক্তি নিজেকে এমবিবিএস, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করে ভিজিটিং কার্ড ছেপে ও সাইনবোর্ড লাগিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন। জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান জানান, যেসব ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশেরই লাইসেন্স নেই। অপারেশন চললেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। গাইনোকোলজিস্ট ও এনেসথেসিওলজিস্ট ডাক্তার নেই। পোস্ট অপারেটিভ রুম নেই। ডিউটি ডাক্তার নেই। ডিপ্লোমা নার্স নেই। এক্স-রে রুমে টিনের দরজা। প্যাথলজি টেকনিশিয়ান নেই। সনোলজিস্ট নেই।
 সূত্রঃ যুগান্তর


শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।