25 August 2015

কুমিল্লায় হাতে হাতে পিস্তল, সন্ত্রাস গোলাগুলি

কুমিল্লা শহরে বিভিন্ন এলাকায় এখন কিশোর, যুবক ও রাজনৈতিক কর্মীদের হাতে হাতে অবৈধ অস্ত্র। এসব অস্ত্র স্থানীয়ভাবে ‘বই’ নামে পরিচিত। আর গুলিকে বলা হয় ‘খানা’। ইদানীং যখনই কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে তখনই উঠতি সন্ত্রাসীরা ‘বই’ আর ‘খানা’ নিয়ে এসে হাজির। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রনেতা জানান, রাজনীতিতে এখন মোটরসাইকেল ও ‘বই’ওয়ালাদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। এ কারণে শহরে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও বেড়েছে। পাড়া- মহল্লায় ছোটখাটো ঘটনায় অস্ত্রের ব্যবহার এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে আসা ৩২ বোর বা নাইন পয়েন্ট নাইন বোরের পিস্তল ৩২ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় কেনা যায়। পয়েন্ট টু টু বোরের পিস্তল ২৫ হাজার টাকা আর লোকাল গান বা এলজি ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আর ছোট গুলি আড়াই শ টাকা, পয়েন্ট থ্রি টু বোরের গুলি তিন শ টাকা আর এলজির জন্য রাবার বুলেট বা বল গুলি আড়াই শ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া আধুনিক ভারতীয় পিস্তল ৪০-৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। কুমিল্লা শহরে এসব অবৈধ অস্ত্রের সংখ্যা কত-এ তথ্য আইন প্রয়োগকারী কোনো সংস্থার কাছেই নেই। গত দুই বছরে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংঘর্ষ বা ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্রের ছবি বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়। এসব ছবিতে দেখা যাওয়া অস্ত্রের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এ ছাড়া পাড়া-মহল্লায় ছিঁচকে সন্ত্রাসী, বখাটে বা ছিনতাইকারীদের কাছে রয়েছে আরো শতাধিক অস্ত্র। তবে নানা সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা শহর ও আশপাশের এলাকাগুলোতে দুই শতাধিক রিভলবার, পিস্তল, কাটা রাইফেল ইত্যাদি রয়েছে। এর মধ্যে সিক্স পয়েন্ট ফাইভ পিস্তল বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু এসব অবৈধ অস্ত্রের ১০ শতাংশও উদ্ধার করা যায়নি। জননিরাপত্তা হুমকির মধ্যে থাকলেও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার রয়েছে বিশেষ ঔদাসীন্য। তবে জুনে বিশেষ অভিযান চালিয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ তিনটি বিদেশি পিস্তল, সাতটি এলজি, একটি পাইপগানসহ ১৫টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এ সময় ১৫টি গুলিও উদ্ধার করা হয়। মামলা হয়েছে ১০টি আর গ্রেপ্তার হয়েছে ১৭ জন। কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ মো. আবিদ হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। ঈদের আগের বুধবার রাতে কুমিল্লা শহরের ডাক্তারপাড়া এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন কুমিল্লা ক্লাবের সদস্য প্রবাল শেখর মজুমদার মিঠু। অস্ত্রের মুখে তাঁর কাছ থেকে নিয়ে যায় ৪৩ হাজার টাকা, মোবাইল ফোনসেটসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। এ সময় ছিনতাইকারীদের একজনের হাতে একটি পিস্তল ছিল বলে তিনি জানান। অবৈধ অস্ত্রের জোরে কুমিল্লায় অপরাধমূলক কার্যকলাপ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। অথচ অস্ত্রবাজরা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনেক ক্ষেত্রে চিহ্নিত অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ধরা পড়লেও রাজনীতিবিদদের পৃষ্ঠপোষকতায় ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকে জেলে গিয়েও বেরিয়ে আসছে। এ অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্কে কাটছে কুমিল্লা শহরবাসীর দিনকাল। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা কুমিল্লার সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজমুল আলম চৌধুরী নোমান প্রশ্ন রেখে বলেন, কুমিল্লা শহরের প্রভাবশালী কার কাছে অবৈধ অস্ত্র নেই সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। তিনি বলেন, ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের মানসিকতা থাকতে হবে; কিন্তু আমরা তা দেখতে পাচ্ছি না।’ তিনি আরো বলেন, কুমিল্লায় যে অবৈধ অস্ত্রের একটি ছোটখাটো ঘাঁটি রয়েছে, সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখলেই বোঝা যায়। সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সভাপতি শাহ মো. আলমগীর খান বলেন, কুমিল্লার মানুষের স্বস্তি ও শান্তির জন্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার খুবই জরুরি। সেই সঙ্গে প্রয়োজন অবৈধ অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের হাতে সোপর্দ করা। শহরের সুজানগরের ঘটনায় দুটি এলজি উদ্ধারের বিষয় উল্লেখ করে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি খোরশেদ আলম বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্রের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আমরা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে মোটরসাইকেল ও সন্দেহজনক যানবাহন তল্লাশি করছি। তা ছাড়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টাও চালাচ্ছি।’ র্যাবের ক্রাইম প্রিভেনশন কম্পানি-২ কুমিল্লার কমান্ডার মেজর মো. খুরশীদ আলম বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্রের ব্যাপারে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। আমাদের কাছে কিছু তথ্য আছেও। আমরা তাদের নজরদারিতে রেখেছি। সময়মতো ধরা হবে।’ কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ মো. আবিদ হোসেন অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা যখনই তথ্য পাই তখনই অভিযান চালাই। আমাদের এ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।