26 July 2015

বুড়িচংয়ের গ্রামীণ সড়কগুলোর বেহাল দশা


বুড়িচং উপজেলার ৮ ইউনিয়নের গ্রাম-গঞ্জ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের সড়ক ও রাস্তা ঘাটের কার্পেটেনিং উঠে পলেস্তরা খসে গিয়ে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যানবাহন ও সাধারণ মানুষ চলাচলের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে করে এলাকার সড়ক-রাস্তা গুলো বেহাল অবস্থায় পরিনত হয়েছে। 

এলাকার জন সাধারণ যানবাহন নিয়ে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে নিত্যদিন  চলাচল করতে হচ্ছে। কোন কোন সড়কে যানবাহনের চালকেরা নিজেদের অর্থায়ানে সড়কের গর্তে শুরকি, কংকিট ও বালু ফেলে গর্ত ভরাট করে কিছুটা চলাচলের ব্যবস্থা করছে। আবার বৃষ্টি পানিতে সড়কগুলো ইট বালি সরে গিয়ে আগের অবস্থায় ফিরে আসছে।

সরেজমিনে এলাকা ঘুরে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলার বুড়িচং উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনসাধারণের চলাচলের সড়কগুলোর কার্পেটেনিং এবং কংক্রিট  সড়কের মধ্য থেকে উঠে গিয়ে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে বৃষ্টি পানি জমে গিয়ে সড়কগুলো মধ্যে খানে মিনি পুকুর সদৃশ মনে হয় । 

এছাড়া, ৮ ইউনিয়নের এ বিশাল জনপদে  গ্রামীণ জনপদের দুই শত বছরের ও পুরনো বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক স্কুল কলেজে পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রী চলাচল করলেও এখনো ওই সমস্ত রাস্তাগুলো কাঁচা রাস্তা হিসেবেই রয়ে গেছে।  

এ সমস্ত রাস্তা গুলো হলো: চড়ানল-লড়িবাগ-বারেশ্বর মাদ্রাসা রাস্তা - ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার নগড়পাড়-বারেশ্বর- সাহেবাবাদ বাজার সংযোগ রাস্তা। 

ওই সমস্ত গ্রামীণ রাস্তা গুলো দিয়ে প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী গ্রাম বারেশ্বর, লড়িবাগ, চড়ানল, পূর্ণমতি, টাকই, জিরুইন, ভরভাঙ্গাইন্না ও সাহেবাবাদ গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মোশারফ খান কলেজ, ব্রাহ্মণপাড়া ভগবান সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, সাহেবাবাদ ডিগ্রী কলেজ, সাহেবাবাদ লতিফা ইসলাইল উচ্চ বিদ্যালয়, সাহেবাবাদ ফাযিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা, বারেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়, বারেশ্বর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়দ্বয়, বারেশ্বর সাইয়্যেদ লোদীশাহ একাডেমী ,  বারেশ্বর মাদ্রাসা, লড়িবাগ উচ্চ বিদ্যালয় ও লড়িবাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়, চড়ানল মাদ্রাসা ও চড়ানল প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাচোঁড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে  রাস্তার মাটি ক্ষয়ে যাওয়ায় অনেক টাকা যাতায়াত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। 

এছাড়া, রাস্তা-সড়ক গুলো বেশির ভাগ ভাঙ্গা ও মাটি ক্ষয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারণ মারাত্ম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। 

অধিকন্তু, উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলো অবস্থা একেবারে নাজেহাল অবস্থায় পরিনত হয়েছে। অধিকাংশ  সড়কের অবস্থা এমন হয়েছে যে, ছোট খাট যানবাহন চলাচলের ও অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এলাকার ক্ষুব্ধ জনসাধারণ ৩-৪ বছর পূর্বে ভাঙ্গা সড়কগুলো সংস্কারের দাবীতে সড়কের মধ্যে ধানের চারা রোপন করে  প্রতিবাদ জানিয়ে ও ফল পায়নি। 

অপরদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়- এক শ্রেণির অসাধু বালু মাটি ব্যবসায়িরা গোমতি নদী চর এবং আশ পাশ এলাকা দিয়ে দৈনিক ২-৩ শ’ত  ট্রাক্টরে মাটি-বালি ভরাট করে সড়কের উপর দিয়ে আসা যাওয়ার ফলে ভগ্ন ও চলাচলের ঝুঁকি পূর্ণওই  সড়কগুলো র আরও বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এতে করে ওই সড়ক গুলো দিয়ে যানবাহন নিয়ে এলাকা জনসাধারণ চলাচল করতে পারছেনা। প্রায় সময় যাত্রী বাহি যানবাহন গুলো চলাচলের সময় সড়ক থেকে ছিটকে সড়কের পাশে পড়ে যায় এবং দূর্ঘটনার শিকার হয়। এতে করে প্রায় সময় জনসাধারণরে প্রাণ হানির মত ঘটনা ও অহরহ  ঘটছে। 

এছাড়া, প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাথে উপজেলার ভগ্ন সড়ক গুলোর যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকায় উপজেলা সদরের অফিস আদালতে, স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগী নিয়ে যাতায়াতে সময় ক্ষেপন সহ ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণির জনসাধারণ প্রতিদিনেই আসা যাওয়া করতে হয়। অনেক সময় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উপজেলা সদরে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য রোগি নিয়ে সিএনজি অটোরিক্সা যোগে আসতে দারুন সমস্যায়  পড়তে হয়। সড়ক গুলোর এমনি অবস্থা যে সমস্ত সড়কগুলো খানা খন্দে ভরে গিয়ে বেহাল অবস্থায় পরিনত হয়েছে । 

এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য সড়ক ও রাস্তাগুলো হলো:  বুড়িচং- গোবিন্দপুর-রামপুর পোষ্ট অফিস সড়ক- গোবিন্দপুর বাজার গোমতি প্রতিরক্ষা বাধ- কোমাল্লা সড়ক, বুড়িচং-আরাগ আনন্দ পুর- সাদকপুর, সাদকপুর- পীরযাত্রাপুর-গোবিন্দপুর সড়ক, সাদকপুর-মালাপাড়া-কংশনগর, বুড়িচং আগানগর-শিকারপুর-নানুয়ার বাজার, বুড়িচং- জগতপুর ঈদগা- পূর্ণমতি সড়ক।  

এছাড়া ষোলনল ইউনিয়নের প্রায় সড়কে বেহাল অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে বলে জানান ওই ইউপির চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল হোসেন। ওই ইউনিয়নের 

ভরাসার বাজার-ষোলনল-বাবুর বাজার, শিমাইলখাড়া-সোনাইসার-পূর্বহুরা, কাহেতরা-পূর্বহুরা সড়কের দীর্ঘদিন ধরে বেহাল দশা চলছে। বাকশীমূল ইউনিয়নের সীমান্ত অঞ্চলের প্রায় ১০-১২টি সড়কের অবস্থা ও একেবারে করুণ। এর মধ্যে কালিকাপুর-শ্রীমন্তপুর, কালিকাপুর-আনন্দপুর, ফকিরবাজার এলাকার কয়েটি সড়কের অবস্থা বেহাল দশা। রাজাপুর ইউনিয়নের সীমান্তের চড়ানল-নবীয়াবাদ-লড়িবাগ সংযোগ সড়ক, পাঁচোড়া-চড়ানল-লড়িবাগ-বারেশ্বর-নগরপাড়-সাহেবাবাদ সড়ক, বারেশ্বর চৌমুহনি-পাঁচোড়া সিন্দুরিয়া ব্রীজ- হায়দ্রবাদ পর্যন্তসড়ক। 


বাকশীমূল ইউনিয়নের ফকিরবাজার-আনন্দপুর- শ্রীপুর সড়ক ও ধর্মনগর- জামতলা- আজ্ঞাপুর এবং ছিনাইয়া ও কোঁদালিয়া সড়ক সহ বাকশীমূল হতে খাড়াতাইয়া- মহিষমারা কাঁচা রাস্তা বেহাল দশা। মোকাম ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাবেক চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির জানান- যে ওই ইউনিয়নের সড়কগুলো একেবারে করুন অবস্থায় পরিণত হয়ে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। 

সড়কগুলো হলো- নিমসার -কেদারপুর-বরুড়া সড়ক, নিমসার- ভারেল্লা-কংশনগর সড়ক, কোরপাই- আবিদপুর -ভারেল্লা সড়ক, কোরপাই-পিওর -চান্দিন-বড়কুট-পরিহলপাড়া সড়ক, পরিহল পাড়া- রোপদ্দি- পাঁচকিত্তা সড়ক, কাবিলা বাজার-বাড়াইর সড়ক, মোকাম গ্রামের  দক্ষিনাংশের দেড় কি: মি: সড়ক, মাধবপুর-নিমসার-শ্যামপুর বড় বাড়ী পর্যন্ত, কোরপাই-মিথলমা-আবিদপুর সড়ক পর্যন্ত। 

ময়নামতি ইউপির চেয়ারম্যান মো. লালন হায়দার জানান- ওই ইউনিয়নের কুমিল্লা-সিলেট  মহাসড়কের দেবপুড়-জিয়াপুর- চান্দসার, দেবপুর-কাছারীতলা-চান্দসার হাই স্কুল সড়ক, কুমিল্লা-–সিলেট মহাসড়কের বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল বাসার সড়ক- সিন্দুরীয়াপাড়া, নাজিরাবাজার-নারায়নসার-করিমাবাদ, কালাচকুয়া-করিমাবাদ সড়ক, হরিণধরা-দেবপুর সড়ক, চান্দসার-কাবিলা সড়ক, ময়নামতি সাহেব বাজার-সমেষপুর-সিন্দুরিয়াপাড়া সড়ক, ফরিজপুর-মিরপুর সড়কের বেহাল দশায় জনগণ ও যান বাহন চলাচলে ব্যাপক অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। 

বুড়িচং সদর ইউনিয়নের জগতপুর গ্রামের বিভিন্ন সড়ক, বিজয়পাড়া -জরইন সড়ক, পূর্ণমতি গ্রামের বিভিন্ন সড়ক। ভারেল্লা ইউনিয়নের পারুয়ারা আবদুল মতিন খসরু কলেজ সড়ক- কুসুমপুর-রামচন্দ্রপুর সড়ক-হাসনাবাদ সড়ক, রামপুর বিচারপতি মমতাজ উদ্দীন আহম্মেদ সড়ক- শোভারামপুর-ভারেল্লা সড়ক, রামপুর পোষট অফিস-ভারেল্লা সড়ক, ভারেল্লা-নারাচুর সড়ক সহ গ্রামীণ এলাকার  বিভিন্ন সড়ক। 

এদিকে এলাকাবাসী অভিযোগ বলেন-এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এলাকার ভাঙ্গাচোরা সড়কগুলোর সংস্কার না করার ফলে সড়কগুলো দিন দিন আরো  ভেঙ্গে গিয়ে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। 

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু তাহের জানান- উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গ্রামীণ সড়কগুলোর অধিকাংশ সংস্কার এবং অনেক নতুন সড়কের নির্মাণ কাজ  আমরা  সম্পন্ন করেছি। পর্যায়ক্রমে বাকী যে সড়কগুলো বেহাল অবস্থা রয়েছে সেগুলোর কাজ ও আমরা সম্পন্ন করবো।

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।