কুমিল্লা শহরের ধর্মসাগর পাড় ঘেষে বয়ে যাওয়া রাস্তার পাশে একটা জড়াজীর্ণ পরিত্যক্ত
টিনসেড চোখে পড়ে । তাতে এতদিন বস্তি হিসাবে একটা পরিবার বাস করত , এই বাড়ীটির
সামনে নারকেল গাছে প্যানাপ্লেক্সের ছিড়া একটা ব্যানারে লেখা ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ
দত্তের বাসভবন ।
একসময় এই বাড়িতেই বাস করতেন অকৃত্রিম দেশপ্রেমিক বাঙালী পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ
সদস্য শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ।
এই বাড়িটি নিয়ে বিগত দিন চলেছে অনেক আলোচনা । ধীরেন্দ্রনাথ
দত্তের স্মৃতিকে ধরে রাখতে এখানে নানা আয়োজন করার কথাও হয়েছে বহুবার ।
ভুমি দস্যুরা বারবার থাবা ফেলেছে এখানে, তখন কিছু
একটা করার নামে আন্দোলন হয়েছে পরিকল্পনা হয়েছে । বাংলাদেশে
থাকা তার নাতনী এরোমা দত্ত নিজেও বলেছেন এখানে একটা যাদুঘর করতে চান যাতে তার এই বাড়িটি
বাংলা ভাষা আন্দোলনের একটা স্মৃতিচিহ্ন হয়ে টিকে থাকে ।
কিন্তু সব পরিকল্পনা বাদ দিয়ে জানা গেল এই মহান বাঙালীর স্মৃতি বিজরিত বাসভবনটি
গ্রাস করেছে বৃত্তবান ভুমি দস্যুরা , তারা সহসা মুছে ফেলবে এই অকৃত্রিত বাঙালীর
সব স্মৃতিচিহ্ন তাই কুমিল্লাবাসীর প্রত্যাশা এই বাড়িটি সংরক্ষণ করে এখানে ধীরেন্দ্রনাথ
দত্ত স্মৃতি যাদুঘর গড়ে তোলা হোক , যাতে এই মহান বাঙালীকে মানুষ ভুলে না যায় ।
১৯৪৭ সালে যখন পাক ভারত বিভক্ত হয় তখন ধর্ম ভিত্তিতে দুই দেশের মানুষ যার যার
সুবিধাজনক স্হানে চলে যায় , এরমধ্যে পাকিস্তান থেকে অধিকাংশ হিন্দু ভারতে
চলে যায় এবং ভারত থেকে অধিকাংশ মুসলমান পাকিস্তান চলে যায় কিন্তু এই ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত
সেই মানুষটি যিনি ধর্ম ভিত্তিতে নয় বরং জন্মভুমি হিসাবে পুর্ব পাকিস্তানকে ভালবেসে
আজকের এই বাংলাদেশে রয়ে গেলেন ।
এই সময়ে তিনি পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সর্বপ্রথম পার্লামেন্টে
বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে বক্তব্য রাখেন।
বাস্তবিকপক্ষে তার এই উপস্হাপনাই বাংলা ভাষা আন্দোলনের প্রথিকৃৎ হিসাবে বিবেচিত
হয় ।
দেশ জন্মস্হান আর ভাষাকে ভালবেসে পুর্ব পাকিস্তানে থেকে যাওয়া এই মহান বাঙালী
প্রথম থেকেই পষ্চিমাদের কুদৃষ্টিতে পড়েন , বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি হিসাবে
তারা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময় তার বাসভবন থেকে ধরে কুমিল্লা সেনানিবাসে নিয়ে যান ।
বর্বর পাক সেনারা সেদিন বাংলা ভাষা আন্দোলনের চুলোয় সর্বপ্রথম অগ্নি প্রজ্জলনকারী
এই মহান বাঙালীকে ধরে নিয়েই নিমিশে হত্যা করেননি , তারা তাকে
নিষ্ঠুর বন্দিশালায় আটকে রেখে বেয়োনেটের নির্মম খুচায় তীল তীল যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা
করেন । পরে আর
কোনদিন তার মৃতদেহ পাওয়া যায়নি ।