গোমতী বিধৌত কুমিল্লার প্রাকৃতিক নিদর্শন, প্রত্নতত্ত্ব, জাদুঘর ও
ঐতিহাসিক স্থানসমূহ দেশ-বিদেশের জ্ঞানপিপাসু পর্যটকদের মুগ্ধ করবে। এ বছর
দেরিতে হলেও জেলার এসব পর্যটন স্থানসমূহ দর্শনার্থীদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে
উঠেছে। ঘর থেকে দু’পা বাইরে ফেলে দেখতে পারেন কুমিল্লাকে।
কুমিল্লায় রয়েছে প্রাকৃতিক ছায়াঘেরা লালমাই পাহাড়। এটি উত্তর-দক্ষিণে ১১
মাইল লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে ২ মাইল চওড়া। লাল মাটির এ পাহাড়ের সর্বোচ্চ
উচ্চতা ৫০ ফুট। লালমাই পাহাড় নিয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে। সেটি এরকম: লংকার
রাজা রাবণ রামের স্ত্রী সীতাকে হরণ করে নিয়ে গেলে রাম তার ভাই লক্ষণকে
নিয়ে উদ্ধার অভিযান চালান। এতে লক্ষণ আহত হলে কবিরাজ বিশল্যাকরণী গাছের
পাতা হিমালয় পাহাড় থেকে সূর্যোদয়ের পূর্বে এনে দেয়ার কথা বলেন। হনুমান
গাছটি চিনতে না পেরে পুরো পর্বত নিয়ে আসে এবং কাজ শেষে পাহাড়টি যথাস্থানে
রাখতে যাওয়ার সময় উক্ত স্থানে অনেকটা আনমনা হয়ে যায়। ফলে পাহাড়ের একাংশ লম
লম সাগরে পড়ে যায়। তাই এ স্থানের নাম লালমাই রাখা হয়।
রয়েছে
শালবন বিহার। পূর্বে এই প্রত্নস্থানটি ‘শালবন রাজাবাড়ি’ নামে পরিচিত ছিল।
এর আসল নাম ‘ভবদেব মহাবিহার’। এই বিহারে খননে পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ
প্রত্নবস্তু, যা এ বিহারের পার্শ্বস্থ ময়নামতি জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে।
রয়েছে ময়নামতি বৌদ্ধবিহার। এখানে অষ্টম শতকের পুরাকীর্তি রয়েছে। এখানকার
বিভিন্ন স্পটের মধ্যে শালবন বিহার ও বৌদ্ধ বিহার অন্যতম। শালবন বিহার
দেখার পর ৩ মাইল উত্তরে দেখতে আসুন কুটিলামুড়া ও রূপবান মুড়া। এখানে তিনটি
বৌদ্ধস্তূপ আছে। এর ভিত্তি বেদীগুলো চার কোণাকার।
কুটিলামুড়া দেখার পর এটি থেকে প্রায় দেড় মাইল উত্তর-পশ্চিমে কুমিল্লা
সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত চারপত্র মুড়া দেখুন। পাহাড়পুর বিহারের পরই এর
স্থান। যাদুঘরের পাশে বনবিভাগ ২টি পিকনিক স্পট করেছে।
রয়েছে দৃষ্টিনন্দন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড)। এটি বাংলাদেশের
পল্লী উন্নয়নের সূতিকাগার। বার্ডের ভিতরের শোভামন্ডিত নয়নাভিরাম রাস্তা
দিয়ে সামনে এগুলেই দেখতে পাবেন নীলাচল পাহাড়। দু’পাহাড়ের মাঝখানে দেখতে
পাবেন অনিন্দ্যসুন্দর বনকুটির। কুমিল্লার লাকসাম, বরুড়া ও সদর থানার
ত্রিমুখী মিলনস্থলে লালমাই পাহাড়ের শীর্ষদেশে ১৩শ’ বছরের ইতিহাসের নীরব
সাক্ষী চন্ডি মন্দিরদ্বয় অবস্থিত। এর নামানুসারে এলাকাটি চন্ডিমুড়া হিসেবে
পরিচিত।
রয়েছে দেশে-বিদেশে কুমিল্লার খ্যাতি অর্জনকারী বিজয়পুর মৃৎশিল্প। এখান থেকে
অল্প টাকায় মাটির তৈরি ফুলের টব, ফুলদানি, হাঁসটব, ছাইদানি, চায়ের কাপ,
প্লেট ও নক্শাদার বাতি স্ট্যান্ড ও শেড, মাছ, ক্যাঙ্গারুসহ অনেক কিছু কিনতে
পারবেন।
কুমিল্লায়
রয়েছে রাজেশপুর ফরেস্ট, নূরজাহান ইকো পার্ক, সম্রাট আওরঙ্গজেবের ভাই
শাহজাদা সুজার নাম অনুসারে নির্মিত শাহ সুজা বাদশাহ্ মসজিদ, রাজা
ধর্মমানিক্যের খননকৃত ২৩.১৮ একর আয়তনের ধর্মসাগর, ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ
দত্তের বাড়ি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ময়নামতি ওয়ার সেমিট্রি,
রাণীর বাংলো, ত্রিশ আউলিয়ার মাজার, নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃত্ নবাব
ফয়জুন্নেছার বাড়ি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহ
এবং কুমিল্লাবাসীর পরমাত্মীয়, সুখ-দুঃখের সাথী গোমতী নদী।
এছাড়া দেখতে পারেন কেটিটিসির পর্যটন কেন্দ্র। এখানে দেখে যেতে পারেন গান্ধী
ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো। নগরীর চর্থায়
সঙ্গীতজ্ঞ শচীন দেব বর্মণের বাড়ি, বাগিচাগাঁয়ে রয়েছে বৃটিশ খেদাও
আন্দোলনের অন্যতম নেতা অতীন রায়ের বাড়ি। দেখতে পারেন কুমিল্লা পৌর পার্ক,
চিড়িয়াখানা ও ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ।
ঢাকা থেকে কুমিল্লা আসার জন্য আপনি রেলপথ অথবা সড়কপথ বেছে নিতে পারেন।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে আসতে পারেন অথবা ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে
বাসে আসতে পারেন। এছাড়া চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে রেল বা সড়কপথে অনায়াসে আসা
যায় শান্ত সুনিবিড় জেলা, কুমিল্লায়।
0 facebook: