29 May 2017

শুভ জন্মদিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়


আজ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) দিবস। কুমিল্লা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে কোটবাড়ী শালবন বিহার এবং ময়নামতি জাদুঘর সংলগ্ন কুমিল্লার বিখ্যাত লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে ২০০৬ সালের ২৮ মে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের ২৬তম এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি। ঠিক এক বছর পরেই (২৮ মে ২০০৭) মাত্র সাতটি বিভাগ নিয়ে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম। এ বছর ২৮ মে রমজানের মধ্যে পড়ায় দিবসটি উদযাপনে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। মধ্য-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ এ বিদ্যাপীঠে বর্তমানে ১৯টি বিভাগে প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিভাগের পাঁচটি ব্যাচ বেরিয়েছে। তবে ১১ বছর পরও নানা সমস্যা আর অপূর্ণতার বেড়াজালে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। পর্যাপ্ত ভূমি না থাকা, আবাসিক ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা, চিকিৎসাসেবার দুর্বলতা, পরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নের অভাব, অপ্রতুল গ্রন্থাগার, সেশন জট, বিভিন্ন সময় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ, বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠাসহ নানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বার বারই ব্যাহত হচ্ছে।


এদিকে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি ১১তম বছরটি শেষ করল।
গত বছরের ১ আগস্ট প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছাত্রলীগ নেতা খালিদ সাইফুল্লাহ নিহত হন। হত্যাকাণ্ডের দুই মাস ২৬ দিন পরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেও এখন পর্যন্ত দোষীদের কোনো প্রকার শাস্তির আওতায় আনেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মনে করেন, আপরাধের জন্য শাস্তি না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হচ্ছে। গেল ১৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বাসায় হামলার ঘটনার পরপরই শিক্ষক সমিতির লাগাতার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচিতে বেশ কয়েক দিন অচল থাকে বিশ্ববিদ্যালয়। চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি এক শিক্ষার্থীর হাতে লোক প্রশাসন বিভাগের এক শিক্ষক লাঞ্ছিত হলে প্রক্টরিয়াল বডির প্রাথমিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওই শিক্ষার্থীকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন হলেও তদন্ত কার্যক্রম ছাড়াই ২০ মার্চ উপাচার্য ওই ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেন।


এর আগে ১৬ ডিসেম্বর ইংরেজি বিভাগের ইভিনিং মাস্টার্স (ইএমএ) প্রোগ্রামের প্রশ্ন মডারেশনকে কেন্দ্র করে ইংরেজি বিভাগের সভাপতি এম এম শরীফুল করীম একই বিভাগের শিক্ষক অবুল হায়াতকে লাঞ্ছিত করেন ও মারতে উদ্ধত হন। ১৮ ডিসেম্বর লাঞ্ছনার উপযুক্ত বিচারের জন্য উপাচার্যের কাছে আবেদন করেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক। তবে সে ঘটনারও কোনো বিচার হয়নি। চলতি বছরের ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের হাতে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ লাঞ্ছিত হয়েছেন-এমন অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন শিক্ষক সমিতির দুই নেতা। সেই ঘটনারও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। সম্প্রতি ১৩ মে ছাত্রলীগের সম্মেলন শেষে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে কয়েকজন সাংবাদিক লাঞ্ছিত হন। বিষয়টির বিচারের জন্য সাংবাদিক সমিতি উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে। সাংবাদিক সমিতির আবেদনের বিষয়েও প্রশাসন ছিল নিশ্চুপ।


এ ছাড়াও অবৈধ নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ এনে চলতি বছরের ৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত করে শিক্ষক সমিতি। পরে ২০ মার্চ ছাত্রলীগ পেশিশক্তি প্রয়োগ করে উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষক সমিতির দেওয়া তালা ভাঙলে উপাচার্য তখন বীরের বেশে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। ছাত্রলীগের সহায়তায় উপাচার্য কার্যলয়ে প্রবেশের ঘটনায় ক্যাম্পাসজুড়ে তখন সমালোচনার ঝড় ওঠে।
সর্বশেষ অপরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুটি ছাত্র হলের লাগোয়া একটি ছাত্রী হল নির্মাণ করছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রী হল নির্মাণ বন্ধ করেনি। এ ছাড়াও ভর্তি পরীক্ষার টাকা বণ্টনে অনিয়ম, নিয়োগ-বিজ্ঞপ্তি নিয়ে নানা অসংগতিসহ বেশ কিছু ইস্যুতে আলোচনায় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির ১১তম বছরটি।
সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আশরাফ বলেন, ‘সীমাবদ্ধতা থাকবেই। আমরা তো পিছিয়ে নেই। ছাত্র-শিক্ষক সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করে আমারা আরও এগিয়ে যাব।’
সূত্রঃ thereport24

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: