06 March 2017

আখতার হামিদ খান


আখতার হামিদ খান (১৯১৪-১৯৯৯) সমাজবিজ্ঞানী, উন্নয়নকর্মী এবং কুমিল্লার বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড) এর প্রতিষ্ঠাতাতিনি ভারতের আগ্রায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩৪ সালে আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রি লাভ করে ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে (আইসিএস) যোগ দেনআইসিএস-এর শিক্ষানবিশ হিসেবে তিনি ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য এবং ইতিহাস অধ্যয়ন করেনএকজন আইসিএস অফিসার হিসেবে কর্মজীবনের অধিকাংশ সময়ই তিনি পূর্ববাংলায় চাকরি করেন১৯৪৩-এর মহা মন্বন্তরের সময় ঔপনিবেশিক শাসকদের উদাসীনতা তাঁকে এতটাই ব্যথিত করে যে তিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করেনএরপর আখতার হামিদ খান আলীগড়ের কাছে একটি গ্রামে একজন শ্রমিক ও তালাওয়ালা হিসেবে কাজ শুরু করেন

এই তলস্তয়সুলভ পরীক্ষা-নিরীক্ষা দুই বছর স্থায়ী হয়১৯৪৭ সালে তিনি দিল্লির জামেয়া মিলিয়াতে শিক্ষকতার কাজ নেন এবং তিন বছর কাজ করেনভারত বিভাগের পর তিনি করাচিতে অভিবাসিত হন এবং সেখান থেকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজএ অধ্যক্ষের চাকরি নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানএ আসেনতিনি এই কলেজে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত অবস্থান করেনএখানেই গ্রামের উন্নয়ন সম্পর্কে তাঁর গভীর আগ্রহ এবং তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়ন-সম্পর্কিত তাঁর বিপ্লবী ধারণার বিকাশ ঘটে১৯৫৮ সালে তিনি পল্লী উন্নয়নের বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি যানসেখান থেকে ফিরে এসে ১৯৫৯ সালে তিনি কুমিল্লায় বার্ড প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর প্রথম পরিচালক হনপরিচালক হিসেবে তিনি ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কাজ করেন
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সম্পর্কে সাধারণভাবে কুমিল্লা মডেল নামে পরিচিত বার্ড ধারণাটি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বহুলাংশে বাড়িয়েছেএই মডেলটি আখতার হামিদ খানকেও কিংবদন্তিতে পরিণত করে এবং তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি পাকিস্তানে চলে যান এবং প্রথমে লায়ালপুরস্থ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ফেলো হিসেবে কাজ করেন১৯৭৩ সালে তিনি একজন ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ফিরে যানসেখানে তিনি ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ছিলেন১৯৭৮-৭৯ সালে তিনি বগুড়ায় পল্লী উন্নয়ন একাডেমীতে একজন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেনতিনি সুইডেনের লুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উড্র উইলসন স্কুল, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন১৯৮০ সালে আখতার হামিদ খান করাচিতে ওরাঙ্গি পাইলট প্রজেক্ট (ওপিপি) প্রতিষ্ঠা করেনসেই থেকে ওপিপি এশিয়ার একটি বৃহত্তম ‘এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প’ হিসেবে চালু রয়েছেএর পরিচালক হিসেবে আখতার হামিদ খান একজন গতিশীল ও উদ্ভাবনী চিন্তামূলক নেতার স্বীকৃতি অর্জন করেনবার্ড-এর মতোই ওপিপি একটি আদর্শ সামাজিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেইংরেজি, বাংলা, আরবি, ফারসি, উর্দু ও হিন্দিতে ভাল জ্ঞানের অধিকারী আখতার হামিদ খান বিপুলসংখ্যক নিবন্ধ, প্রতিবেদন ও গ্রন্থ রচনা করেছেনসেসবের অধিকাংশই সাধারণভাবে পল্লী উন্নয়ন ও বার্ড কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলবার্ড তাঁর লেখাগুলিকে তিনটি খণ্ডে দ্য ওয়ার্কস অব আখতার হামিদ খান (১৯৮২) শিরোনামে প্রকাশ করেছেপল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাঁর অগ্রণী ভূমিকার জন্য তাঁকে সিতারা-ই-পাকিস্তান (১৯৬১) ও ম্যাগসেসেই পুরস্কার প্রদান করা হয়মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ও ১৯৬৪ সালে তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’তে ভূষিত করে



শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।