13 July 2016

অরক্ষিত ১২৫ কিলোমিটার কুমিল্লা সীমান্ত


কুমিল্লা রিপোর্ট২৪ ডেস্কঃ কুমিল্লার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের এপার-ওপারের চোরাচালানি সিন্ডিকেটগুলো যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কুমিল্লা সীমান্তের ৫ উপজেলার কমপক্ষে শতাধিক স্পট দিয়ে ভারতীয় পণ্যসামগ্রী দেশে আসছে। রাতে দু’দেশের সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি পয়েন্টে অনেকটা প্রকাশ্যেই ভারতীয় পণ্যসামগ্রী ও মাদক বিক্রি হয়ে থাকে। সীমান্তে চোরাই পণ্য পাচার, বহন, সংরক্ষণ ও বিপণন কাজে জড়িত রয়েছে এখানকার ৫ সহস্রাধিক নারী-পুরুষ। এছাড়া সীমান্ত এলাকার যে শিশুদের হাতে বই-খাতা থাকার কথা সেই শিশুরাও এখন অর্থের প্রলোভনে জড়িয়ে পড়ছে চোরাচালানে।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কুমিল্লার ১২৫ কিলোমিটার রয়েছে জেলার চৌদ্দগ্রাম, সদর দক্ষিণ, আদর্শ সদর, বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা। এ ৫টি উপজেলার সীমান্ত এলাকায় চোরাকারবারীরা তাদের ‘ব্যবসা’ চালিয়ে যাচ্ছে। অধিক হারে দেশে পাচার হয়ে আসছে মাদকসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। সূত্র জানায়, পাচারকৃত এসব মাদক ও মালামালের সিকি ভাগও ধরা পড়ে না বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের অভিযানে। বিজিবি দিন-রাত অভিযান অব্যাহত রেখে মালামাল উদ্ধার ও কিছু ক্ষুদে চোরাচালানি বা বহনকারীকে আটক করতে পারলেও সিন্ডিকেটগুলোর গডফাদাররা (হোয়াইট স্মাগলার) রয়ে যাচ্ছেন ধরা- ছোঁয়ার বাইরে।

সীমান্ত এলাকায় ঘুরে জানা যায়, কুমিল্লা সীমান্তে বর্তমানে চোরাচালানিদের বেশিরভাগই প্রভাবশালী এবং কেউ কেউ ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছে চোরাচালান। ফলে র্যাব-পুলিশ বা বিজিবি তাদের টিকিটিও ছুঁতে পারে না। বর্তমানে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে বিভিন্ন প্রকার মাদক, শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, কসমেটিকস ও গার্মেন্টস সামগ্রী তুলনামূলক বেশি আসছে। কুমিল্লাসহ অন্যান্য জেলার উপজেলা পর্যায়ের মার্কেটগুলোতেও অবাধেই বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় কাপড়। কুমিল্লা মহানগরীর অভিজাত মার্কেট থেকে শুরু করে ছোট ছোট মার্কেটেও বিক্রি হচ্ছে এসব। ফলে কুমিল্লার বিখ্যাত খাদিসহ দেশীয় বস্ত্রশিল্পের বাজার দখল করে নিচ্ছে ভারতীয় পণ্যসামগ্রী।

কুমিল্লা সীমান্তের ৫ উপজেলার কমপক্ষে শতাধিক স্পট দিয়ে এসব শাড়ি কাপড় ও মাদক দেদারছে দেশে আসছে। কুমিল্লা সীমান্তের উল্লেখযোগ্য স্পটগুলো হচ্ছে: চৌদ্দগ্রামের নাটাপাড়া, কাইচ্ছুটি, পদুয়া, দত্তসার, গাংরা, ফকিরবাজার, কেছকিমুড়া, ডিমাতলী, নানকরা, কালিকাপুর, বাতিসা, আটগ্রাম, চন্ডিপুর, ছফুয়া, সাতবাড়িয়া, মতিয়াতলী, রামড়াড, চক লক্ষ্মীপুর রোড, বালুজুড়ি, বীরচন্দ্রনগর, মতিয়াতুলী, খালাসী মসজিদ রোড, আমানগন্ডা, ঘোলপাশা, শালুকিয়া, বাবুর্চী, সোনাপুর, নোয়াবাজার, শিবের বাজার, সাবের টিলা, আড়াইলা টিলা, কৃষ্ণপুর, শীতলিয়া, চাঁন্দশ্রী ও সদর দক্ষিণের শুয়াগাজী, দড়িবটগ্রাম, বাণীপুর, চৌয়ারা-কনেশতলা রাস্তা, বলারডেবা, একবালিয়া, তালপট্টি, রাজেশপুর, মথুরাপুর, লালবাগ, জগপুর, ভাটপাড়া, যশপুর ও সুয়াগঞ্জ। আদর্শ সদরের সুবর্ণপুর, বিবির বাজার, সাহাপাড়া, নিশ্চিন্তপুর, তেলকুপি, গোলাবাড়ী, শাহপুর, অরণ্যপুর, নগরগ্রাম, কর্নেল বাজার, ব্রাহ্মণপাড়ার তেঁতাভূমি, নারায়ণপুর, সালদানদী, আশাবাড়ী, গঙ্গাসাগর, বুড়িচংয়ের বাঁশতলী, ভবেরমুড়া, ঘিলাতলা, পাহাড়পুর, সংকুচাইল, নবীয়াবাদ, আনন্দপুর ও হায়দরাবাদ।

সীমান্তের এসব পয়েন্ট দিয়ে ফ্রি-স্টাইলেই ভারত থেকে আসছে মাদকদ্রব্য, শাড়ি-কাপড়, থ্রি-পিস, সাইকেল, মোটরসাইকেল, গাড়ির যন্ত্রাংশ, প্রসাধনী, গরম মসল­া, কাঠ, গরুসহ বিভিন্ন সামগ্রী। দোকানপাট ও বিপণি বিতানে এসব চোরাচালানি মালামাল ও পণ্যসামগ্রী আটক করতে বিশাল এ সীমান্ত এলাকায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা বা চোরাচালানবিরোধী টাস্কফোর্সের তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। কুমিল্লাস্থ ১০ বিজিবি’র একজন কর্মকর্তা বলেন, চোরাচালান প্রতিরোধে সীমান্ত এলাকায় জনসচেতনতামূলক সভা এবং মাদক প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন বিজিবি সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করছে।

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: