কুমিল্লা রিপোর্ট২৪ ডেস্কঃ কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ফের ফাটল ধরেছে জেলা বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন এবং যুগ্ম সম্পাদক ও কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর সমর্থকদের মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গত কয়েক সপ্তাহ যাবত বিষয়টি মুখে মুখে থাকলেও শনিবার দুই গ্রুপের পৃথক কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে ফাটল অনেকটা প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। বিগত প্রায় দেড় বছর দলের বিভিন্ন কর্মসূচি একসঙ্গে পালন করে আসলেও কমিটিতে পদ-পদবী নিয়ে দু'গ্রুপের বিভক্তিতে হতাশায় পড়েছেন দলের ত্যাগী ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর কুমিল্লা টাউন হলে যুবদলের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মনিরুল হক সাক্কু ও হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিনের কর্মীদের মধ্যে নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় অস্ত্রের মহড়া ও সংঘর্ষ হয়। এরপর থেকে দীর্ঘদিন যাবত উভয়গ্রুপ পৃথকভাবে দলের কর্মসূচি পালন করে আসছিল। পরে ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কুমিল্লায় আগমনকে কেন্দ্র করে দলের শীর্ষ নেতারা জেলা বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নেন। ওই জনসভার এক সপ্তাহ আগে ঢাকায় দলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে বিবদমান ইয়াছিন ও সাক্কু গ্রুপ ঐক্যবদ্ধ হয়। এরপর থেকে দলের সব কর্মসূচি উভয়গ্রুপ একসঙ্গে পালন করে আসছিল। এদিকে কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে পুরনো বিরোধ। গত শনিবার কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় চার্জশিট দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ পৃথকভাবে পালন করে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদল ও কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদল। কুমিল্লা মহাগরীতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে নগরীর কান্দিরপাড় এলাকার দলীয় কার্যালয় থেকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি উৎবাতুল বারী আবু ও সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন কায়সারের নেতৃত্বে এবং বিকেলে কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের ব্যানারে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপুর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে। সমাবেশে সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর অনুসারী জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, একটি মহল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিএনপিকে আবদ্ধ করতে চায়, তাদের এসব পকেট সিন্ডিকেটকে ভেঙেচুড়ে চুরমার করে দেয়া হবে। মহানগর কমিটিতে আমাকে (টিপু) আহ্বায়ক করা না হলে বিএনপি আবারও ভেঙে যাবে। আর যারা ষড়যন্ত্র করছে তারা কুমিল্লায় দাঁড়ানোর পথ খুঁজে পাবে না। খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপি এখনও ঐক্যবদ্ধ আছে, ষড়যন্ত্রমূলক কমিটি হলে আর ঐক্যবদ্ধ থাকবে না। সূত্র জানায়, কুমিল্লা মহানগর কমিটি অনুমোদন করার সিদ্ধান্তের জন্য সারাদেশের জেলা, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৫টি কমিটি আটকে আছে। এরই মধ্যে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন কায়সারকে প্রস্তাবিত নতুন কমিটিতে সভাপতি এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপুকে কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের আহবায়ক করে একটি তালিকা দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতৃবৃন্দের নিকট জমা দেয়া হয়েছে। শীঘ্রই এ কমিটির অনুমোদন দেয়ার কথা রয়েছে। এদিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন হওয়ার পর ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত ছাত্রদলের মহানগর কমিটি গঠন করা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একাধিক নেতা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দলের সাংগঠনিক বিভিন্ন কার্যক্রমে আমরা অংশগ্রহণ করলেও একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করে পকেট কমিটি তৈরি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা আগামী দিনে দলের সাংগঠনিক কর্মসূচিকে ব্যাহত করবে। জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে তাদেরকে বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে পাওয়া যায়নি। দলের দুঃসময়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করেছি, দল এ কাজের মূল্যায়ন করবে। এ বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিনের অনুসারী জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন কায়সারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মোবাইল বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
সুত্রঃ সমকাল
0 facebook: