23 January 2016

কুমিল্লায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম


বিশেষ প্রতিবেদনঃ দেশের সবজি চাহিদার সিংহ ভাগ জোগানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে কুমিল্লা। এ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষক সম্প্রদায় প্রায় সারা বছরই সবজি চাষাবাদে ব্যস্ত থাকেন। আর রবি মৌসুম আসলে-তো কথাই নেই। জেলার প্রতিটি উপজেলার ফসলী মাঠে কৃষকদের শীতকালীন হরেক রকম সবজির সমাহারে সবুজ বাংলা যেন তার চিরচেনা প্রকৃত রূপ ফিরে পাচ্ছে।
শীত কালীন বা রবি মৌসুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সবজির তালিকায় সিংহ ভাগ দখল করে রাখে ‘আলু’। দেশের সারা বছরের আলুর চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানী করার লক্ষ্যে এ বছর কুমিল্লার ১৬ উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর আবাদি জমিতে আলু চাষাবাদ করেছে সহস্রাধিক কৃষক। তবে জেলার দাউকান্দিতে সর্বোচ্চ এবং প্রায় সমপরিমান জমিতে আলু চাষাবাদ করেছে চান্দিনা, দেবিদ্বার ও বুড়িচং উপজেলার কৃষক। তবে অন্যান্য উপজেলায়ও কম বেশি আলু চাষাবাদ করে এ জেলার কৃষক।
পৌষ শেষে মাঘ শুরু। অগ্রহায়নের শেষ ও পৌষের শুরুতে এ জেলার কৃষকরা আলুর আবাদ শুরু করে। মৌসুমের শুরুতে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়া এবং আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় আলু ক্ষেতে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। কৃষকদের সঠিক পরিচর্যায় প্রতিটি আলু ক্ষেতে সবুজের মহারোহ দেখা দিয়েছে।
এ বছর সরকারী কঠোর ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রিত সারের দাম ও নিয়ন্ত্রিত কীটনাশক ব্যবহারে আলু চাষে খরচ কম হয়েছে বলে জানান কৃষক।
জেলার চান্দিনা উপজেলার তুলাতলী গ্রামের কৃষক ফরিদ উদ্দিন জানান, এ বছর আমি ৪৮ শতাংশে আলু চাষাবাদ করেছি। গত বছরের চেয়ে এবছর সারের দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ ছিল। আমার ৪৮ শতাংশে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে আল্লাহর রহমতে আমার জমির অবস্থা ভাল। শেষ পর্যন্ত এমন থাকলে প্রতি শতাংশে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে তিন মন আলুর ফলন হবে।
বাম্পার ফলনের সম্ভাবনাময় আলু ঘরে তুলতে জেলার সকল কৃষক কাক ডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি জমিতে অকান্ত পরিশ্রম করতে দেখা যাচ্ছে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে এখনও ঘন কুয়াসা বা সত্য প্রবাহ না হওয়ায় আগামী দিনগুলোর কথা মাথায় রেখে জমিতে শুধুমাত্র বালাই নাশক ছিঁটিয়ে বিপর্যস্ত আবহাওয়া মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে কৃষক ও সংশ্লিষ্ট কৃষি দপ্তর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, গত বছর এ জেলায় প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ হয়েছে। কিন্তু এবছর ১৫ হাজারেরও বেশি হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ করে ওই লক্ষ্যমাত্র অতিক্রম করেছে। আর ফলনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ মে. টন।
কিন্তু উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত ফলনের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কৃষকদের হিসাবে অনেক ফারাক রয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর প্রতি শতাংশে আলু ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২মন। আর কৃষকদের ধারণামতে প্রতি শতাংশে আলু উৎপাদন হবে সাড়ে ৩ থেকে ৪ মন। আর কৃষকদের তথ্যমতে এ জেলায় প্রায় ৪ লাখ মে.টন আলু উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আসাদুল্লাহ জানান, এ বছর আলু চাষে আবহাওয়া সম্পূর্ণ অনূকুলে রয়েছে। যে কোন মুহুর্তে প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবেলায় আমাদের জেলা ও উপজেলা কৃষি বিভাগ এবং মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাগণ কৃষকদের প্রস্তুত রেখেছেন।
তিনি বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ায় আলু গাছের ও আলুর পচন রোধে কি কি করণীয় এবং কি ধরনের ওষুধ ব্যবহার করতে হবে সে সম্পর্কে ইতিমধ্যে আমরা কৃষকদের অবহিত করে প্রস্তুত রেখেছি। এছাড়া কৃষি মাঠে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় কৃষি বিভাগ সজাগ রয়েছে।
বুধবার দুপুর থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে হালকা বৃষ্টি ও সূর্য্যরে লুকোচুরি খেলায় কনকনে আবহাওয়া আলু ক্ষেতের তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা দেখছেন না এই কৃষিবিদ। তিনি অত্যন্ত আস্থার স্বরে জানান দেন, জেলার প্রতিটি উপজেলায় আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: