06 December 2015

কুমিল্লায় প্রবাসীদের টাকায় গড়ে উঠছে নতুন নতুন ভবন


কুমিল্লারিপোর্ট২৪ ডেস্কঃ টানা এগার বছর জনশক্তি রপ্তানিতে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে কুমিল্লা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত কুমিল্লার দক্ষ শ্রমিকদের উপার্জিত আয় বিনিয়োগ হচ্ছে এখানকার আবাসন ও বাণিজ্যিক খাতে। উন্মোচন হচ্ছে নতুন দিগন্তের। দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে জাতীয় অগ্রগতিতেও ভূমিকা রাখছে কুমিল্লা। জনশক্তি রপ্তানিতে ২০০৫ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে শীর্ষে ছিল কুমিল্লা। ২০১৫ সালে এসেও শীর্ষে থাকার এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ কথা কোনভাবেই অস্বীকারের জোঁ নেই যে, প্রবাসীদের আয়ে বাংলাদেশে এক নম্বর অবস্থানে থাকা কুমিল্লায় গড়ে উঠছে অত্যাধুনিক বিপণী বিতাণসহ সুরম্য আবাসিক ভবন। কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার প্রবাসীর পরিবাররা আজকের সময়ে বিদেশে থাকা তাদের স্বজনের পাঠানো অর্থ বিনিয়োগ করছেন বাণিজ্যিক খাতে। কিনছেন ফ্ল্যাট-বাড়ি। কেউবা খালি জায়গা কিনে নির্মাণ করছেন সুরম্য ভবন। আবার কেউ কেউ দৃষ্টিনন্দন বাড়ি নির্মাণ করে পাল্টে দিচ্ছেন উপজেলার গ্রামীণ জনপদের চেহারা। এসবই সম্ভব হচ্ছে দক্ষতার সাথে অধিক বেতনে কুমিল্লার লোকজনের বিদেশে কাজ করার সুযোগ থাকায়। কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. সানাউল হক বলেন, কুমিল্লার হাজার হাজার লোক বিদেশে চাকরি করছে। অনেকে ৫ বছর, ১০ বছর ধরে এমনকি আরও বেশি সময় পর্যন্ত বিদেশে অবস্থান করে তাদের উপার্জিত অর্থ স্বজনদের কাছে পাঠাচ্ছে। আর এ অর্থ এখানকার ব্যবসা বাণিজ্যে বিনিয়োগ হচ্ছে এটা নির্ধিদ্বায় বলা যায়। গত ১০/১৫ বছরে কুমিল্লায় অসংখ্য বহুতল বিশিষ্ট মার্কেট, শপিংমল গড়ে উঠেছে। দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শপিংমল কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়ে নির্মাণ হচ্ছে। এখানেও কুমিল্লার অনেক প্রবাসী ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য তাদের আয় বিনিয়োগ করেছেন। কুমিল্লার ডেভেলপার কোম্পানি গোল্ড সিলভার হোমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক আলহাজ ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত যতোগুলো বহুতল আবসিক ভবন নির্মাণের কাজ করেছি এসবের বেশির ভাগ ফ্ল্যাটই কিনেছেন কুমিল্লার প্রবাসীরা। এছাড়াও অনেক প্রবাসী তাদের নিজস্ব জমিতেও বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। কুমিল্লার প্রবাসীদের আয়ের একটি বড় অংশ আবাসন খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে। কুমিল্লা বিভাগ হিসেবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলে এখানকার আবাসন শিল্পে আরও উন্নয়ন ঘটবে। উন্মোচন হবে নতুন দিগন্তের। বাড়বে প্রবাসী আয়ের বিনিয়োগ’। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সূত্রে জানা য়ায়, ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লা জেলার ৪৬ হাজার ৫৩৮জন লোক চাকরি নিয়ে বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশে গেছেন। তারমধ্যে নারী শ্রমিক রয়েছেন ৫ হাজার ৩২৯জন। গত ১১মাসে দেশের ৬৪ জেলা থেকে বিশ্বের ৯৩টি দেশে জনশক্তি রপ্তানির তালিকায় রয়েছে ৪৭ লাখ ৩ হাজার ৬২৭জন। আর এ তালিকায় জেলা ভিত্তিক এবারেও জনশক্তি রপ্তানিতে কুমিল্লা শীর্ষে রয়েছে। ২৭ হাজার ৮২৮জনের তালিকা নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। আর ২৭ হাজার ৩৫জন এবং ২৬ হাজার ২৯৪জনের তালিকায় তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে টাঙ্গাইল ও ব্রাক্ষণবাড়িয়া। জনশক্তি রপ্তানির মূল দেশগুলোর মধ্যে কুমিল্লার বেশিরভাগ লোকই অবস্থান করছেন সউদী আরব, দুবাই, কাতার, জর্দান, বাহরাইন, ওমান, মালয়েশিয়া, লেবানন, মালদ্বীপ, ব্রæনাই, মরিশাস, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশে। কুমিল্লার কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস কুমিল্লার ১৬টি এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়ার ৭টিসহ মোট ২৩টি উপজেলার বিদেশগামিদের সবধরণের সেবা প্রদানসহ বিদেশে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারদের দিচ্ছেন মৃত্যুজণিত ক্ষতিপূরণ, বকেয়া পাওনা এবং প্রবাসীর মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তির অর্থ। গত অক্টোবর মাসে কুমিল্লা অফিস বিদেশে নিহত ১৩ জনের পরিবারকে মৃত্যুজণিত ক্ষতিপূরণ ও বকেয়া পাওনা বাবদ ৯০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা এবং ৫৮জন নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ১ কোটি ৬৯ লাখ আর্থিক অনুদান প্রদান করেছে। এছাড়াও ২০জন প্রবাসীর মেধাবী সন্তানকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকার শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হয়েছে। কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস কুমিল্লার সহকারি পরিচালক মো: মাহমুদ উল্লাহ আকন্দ জানান, কুমিল্লা থেকে প্রতি বছরই বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাকরি নিয়ে গিয়ে থাকে। কাজের ক্ষেত্রে প্রধানত মেশিন অপারেটর, রংমিস্ত্রী, কার্পেন্টার, কনস্ট্রাকশন শ্রমিক, ইলেকট্রিক্যাল টেকনিশিয়ান, টেইলার, গৃহকর্মী, ওয়েল্ডার, পেইন্টার, পরিচ্ছন্ন কর্মী, ড্রাইভার, কৃষি শ্রমিক, লেবার, ওয়েটার, কিচেন শ্রমিক পদে উল্লেখযোগ্য শ্রমিক কুমিল্লা অঞ্চল থেকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বিদেশে চাকরি করছে। তারমধ্যে মহিলা শ্রমিকের সংখ্যাও কম নয়। তারাও কাজের ধরণ অনুযায়ি বিদেশে ভালো অবস্থায় চাকরি করছেন। 

দৈনিক ইনকিলাব

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: