স্থানে স্থানে খানাখন্দ, নড়বড়ে ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ, সব মিলিয়ে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে জনগুরুত্বপূর্ণ কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশটি। এ সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়শই।
বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ একাধিক ব্রিজের উপর দিয়ে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করছে অসংখ্য যানবাহন। এ সড়কে যাতায়াতকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রী সধারণের কাছে এ যেন এক আতঙ্কের রাস্তা।
চট্টগ্রাম বন্দরসহ বাখরাবাদ, গোপালনগর, বাঙ্গরা, তিতাস, হবিগঞ্জ প্রভৃতি গ্যাস ফিল্ডের সঙ্গে যোগাযোগে সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও সেতু, কার্লভার্ট, বেইলিসেতু এবং সড়কটি সংস্কারে সওজ উদাসীন। সড়কটি এ যেন দেখারও কেউ নেই।
এদিকে, ক্রমবর্ধমান ভারী যানবাহনের চাপে সড়কটিতে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী ও বিপদসঙ্কুল হয়ে ওঠেছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ মাস ছয়েক আগে সড়কটির সংস্কার করলেও ছ’মাস যেতে না যেতেই আগের অবস্থায় ফিরে আসে সড়কটি। কোথাও খানাখন্দে ভড়েওঠে। আস্ত ইট লাগিয়ে সেসব খানাখন্দ পুরণের চেষ্টা করে যাচ্ছে সড়ক বিভাগের লোকজন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে কসবার কালামুড়া ব্রিজ পর্যন্ত কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের ৩২ কিলোমিটার রাস্তার প্রায় পুরোটারই অবস্থা নাজুক। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সড়কটি আনুমানিক ৫০-৬০ বছর আগে নির্মিত হয়েছে। তখন যে পরিমাণ যানবাহন চলাচল করতো সে তুলনায় সড়কটি উপযুক্ত ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ের জন্য তা কোনোভাবেই উপযোগী না। তাছাড়া ভারী যানবাহনের সংখ্যাও বেড়েছে অনেক।
এদিকে, কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে অন্তত তিন ডজন ব্রিজ রয়েছে এর মধ্যে অর্ধডজন ব্রিজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো হলো- কাউতলী ব্রিজ, রামরাইল ব্রিজ, কালামুড়া ব্রিজ, তন্তর ব্রিজ, তিনলাখপীর ব্রিজ, উজানীসার ব্রিজ। এর মধ্যে কয়েকটির পুনর্নির্মাণ কাজ সম্প্রতি শেষ হলেও বাকিগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এসব পাকা ব্রিজের কোনটার উপর বসানো হয়েছে লোহার বেইলি সেতু। কোনটার পুরো ব্রিজটি জুড়েই স্থানে স্থানে বিশাল ছিদ্র। এগুলো স্টিলের পাতের পট্টি লাগানো। অথচ ‘ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ, ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ।’ ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলোর সামনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের লাগানো এ জাতীয় সাইনবোর্ড দীর্ঘদিন ধরে শোভা পাচ্ছে। এ জাতীয় সাইনবোর্ড লাগিয়েই দায় সেরেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সোলেমান নামে এক ট্রাক চালকের প্রশ্ন, যদি ঝুঁকিপূর্ণই হয় তাহলে আমরা গাড়ি চালাবো কীভাবে? এগুলো মেরামতে ব্যবস্থা নেয়া হয় না কেন?
মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এ সমস্ত ব্রিজ আর রাস্তার উপর দিয়েই চলাচল করছে যানবাহন। খুদ সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারাও এসব ব্রিজ নিয়ে আতঙ্কে ভোগেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।
যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে সীমাহীন দুর্ভোগের নিত্য সাথী ‘কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক’। মহাসড়কটির বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ময়নামতি ক্যান্টনম্যান্ট এলাকার অদূরে বুড়িচং উপজেলার দেবপুর অংশ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর পর্যন্ত ৬৬ কিলোমিটার সড়কের ৫০ ভাগই ভাঙা এবং খানাখন্দে ভরে আছে। ইতোমধ্যে সংস্কার কাজ হলেও সওজ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের নিম্নমানের কাজে কারণে জনদুর্ভোগ থেকেই যাচ্ছে।
প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে নির্মিত এই সড়কটিতে সময়ের ব্যবধানে দিন দিন হালকা ও ভারী যানবাহন চলাচলের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেলেও এ যাবৎকালে সড়কটির আধুনিকায়নে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো সংস্কার ও উন্নয়ন হয়নি। মাস ছয়েক আগে সড়কটির দায়সাড়া সংস্কার করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু ছ’মাস যেতে না যেতেই সড়কটি আগের অবস্থায় ফিরে আসে। কোথাও খানাখন্দে ভড়েওঠে। সড়ক বিভাগের লোকজন আস্ত ইট লাগিয়ে সেসব খানাখন্দ পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এ ব্যপারে সড়ক ও জনপথ (সওজ) কুমিল্লার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী (উপবিভাগীয় প্রকৌশলী) মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি চলতি দায়িত্বে আছি, আমার জানামতে আমাদের কাজ করা অংশে নতুনকরে কোনো ধরনের ইট লাগানো হচ্ছে না। তবে কোথাও কোনো গর্ত হয়ে থাকলে তা মেরামত করে দেয়া হবে, যেন রাস্তাটি যানচলাচলের উপযোগী থাকে। যদি কোনো ব্রিজেরও সাধারণ সংস্কারের প্রয়োজন হয় তাহলে তাও করা হবে।’
তথ্য সুত্রঃ বাংলামেইল২৪ডটকম