29 May 2015

এখনো উপেক্ষিত মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইল গ্যাসক্ষেত্র


কার স্বার্থে বাদ পড়ল শ্রীকাইল। কি কারণ, আর কে এর উদ্যোক্তা। কোন সদুত্তোর মিলছে না। অথচ এখন সবচেয়ে জরুরি শ্রীকাইলে কূপ খনন করা। খোঁজ নিতে গিয়ে পাওয়া যায় ভয়াবহ চিত্র। একই স্তর থেকে গ্যাস উত্তোলন করছে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি ক্রিস এনার্জি। 

দূরত্ব ৭ কিলোমিটারের মতো। অবস্থা এমন, যে আগে তুলবে সে বেশি গ্যাস পাবে। তাই ২০০৭ সাল থেকেই এ বিষয়ে সোচ্চার রয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা শ্রীকাইল থেকে দ্রুত গ্যাস উত্তোলনের দাবি জানিয়ে আসছেন। সমালোচকদের দৃষ্টি ফেরাতে ২০১৩ সালে শ্রীকাইল-৪ কূপ খনন করার ঘোষণা দেয় পেট্রোবাংলা। কিন্তু তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

উল্টো রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান গাজপ্রম শ্রীকাইল-৪ সহ রশিদপুর-৯, ১০, ১২ ও বাখরাবাদ-১০ খননের প্রস্তাব দিলে তা নাকচ করে দেয়া হয়। অন্যগুলো দেয়া হলেও শুধু শ্রীকাইলকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়।

অন্য ৪টি কূপ খনন করে নেয়ার জন্য আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগের উপ-সচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার। তবে শ্রীকাইল কেন বাদ দেয়া হচ্ছে সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই কর্মকর্তা।

শ্রীকাইল প্রশ্নে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে ভূল বোঝানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) নাজিম উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে পেট্রোবাংলা ভালো বলতে পারবে। কারণ তারা প্রধান কাজটি করে।

একই স্তর থেকে ক্রিস এনার্জি গ্যাস উত্তোলন করছে। বিলম্ব করলে বাংলাদেশের লোকসান বাড়বে। তারপরও কেন শ্রীকাইলকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে এ বিষয়ে পেট্রোবাংলাকে জিজ্ঞেস করার পরামর্শ দেন অতিরিক্ত সচিব।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স) সূত্র জানিয়েছে, জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গুরা ও শ্রীকাইল গ্যাসক্ষেত্র দুটির দূরত্ব মাত্র ৭ কিলোমিটার। গ্যাসক্ষেত্রটি মাটির ৩২ শ’ মিটার নিচে অভিন্ন ভূকাঠামোতে প্রায় ১৪০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত।

বাঙ্গুরা অংশ থেকে আইরিশ কোম্পানি টাল্লো ও কানাডীয় কোম্পানি নাইকো যৌথভাবে ২০০৬ সাল থেকে ৪টি কূপের মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে ১৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন অব্যহত রেখেছে। পরে গ্যাস ফিল্ডটি ক্রিস এনার্জির কাছে বিক্রি করে দেয় টাল্লো।

অন্যদিকে শ্রীকাইলে দেশীয় কোম্পানি বাপেক্স ২০১১ সালে একটি এবং ২০১৩ সালে আরেকটি কূপ খনন করে। এ দুটি কূপ থেকে দৈনিক ৪১-৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। অন্যদিকে সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি ক্রিস এনার্জির প্রায় তিনগুণ (১২০ মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস উত্তোলন করছে। পাশাপাশি ক্রিস উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আরো দুটি কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছে। রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান গাজপ্রমের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

এই অবস্থায় গ্যাসের উৎপাদন যখন বাড়ানো প্রয়োজন তেমন একটি সময়ে শ্রীকাইলে গ্যাজপ্রমের কূপ খনন প্রস্তাব আলোচনার টেবিল থেকেই বাদ দেয়া হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। যাদের প্রভাবে এবারও শ্রীকাইলে নতুন কূপ খনন প্রস্তাব বাদ পড়তে যাচ্ছে। খোদ পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এ বিষয়ে আগ্রহী নয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগ ক্রিস এনার্জির কাছ থেকে গ্যাস কিনতেই বেশি আগ্রহী। বাপেক্সের একজন সাবেক এমডি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ক্রিস এনার্জির কাছ থেকে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাস কেনা হচ্ছে প্রায় ৩ ডলার মূল্য দিয়ে। মাসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০ হাজার মিলিয়ন ডলার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম এক অনুষ্ঠানে বলেন, শ্রীকাইল ও বাঙ্গুরা ক্ষেত্র দুটি একই ভূ-কাঠামোয় হওয়ায় যারা বেশি কূপ খনন করবে তারাই বেশি গ্যাস তুলে নেবে। তাই শ্রীকাইলে যত বেশি সম্ভব (ম্যাক্সিমাম) কূপ খনন করে গ্যাস তোলা দরকার।

অন্যদিকে বি-বাড়িয়ার সালদা গ্যাসক্ষেত্রটির ভূকাঠামো সালদা নদীর তলদেশ দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন অবস্থায় বিস্তৃত। নদীর ওপারে ভারত অন্তত ১২টি কূপ খনন করে গ্যাস তুললেও নদীর এপারে বাংলাদেশ কূপ করেছে মাত্র দুটি। সালদা গ্যাসক্ষেত্রটিও বাপেক্স পরিচালিত। সেখানে কম কূপ খনন করায় এবং নতুন কূপ খননে দেরি হওয়ায় লোকসান হচ্ছে বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। 

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিষয়টি ভেবে দেখা হবে। শ্রীকাইল থেকে যাতে দ্রুত গ্যাস উত্তোলন করা যায় সে জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।