10 December 2013

কুমিল্লা বিভাগ চাই


বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ১৭৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত, গোমতী নদীর তীরে অবস্থিত প্রাচীন ও ঐহিত্যবাহী জেলার নাম কুমিল্লাযা দেশের দ্বিতীয় আবাসিক রাজধানী হিসেবেও ব্যাপক পরিচিতকিন্তু বর্তমানে দেশের অন্য অনেক জেলার তুলনায় উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে এই জেলাটি বৃহত্তর জেলা সিলেট ও বরিশাল এবং রংপুর বিভাগ হলেও এ সুপ্রাচীন জেলাটি এখনও বিভাগ হয়নি

বৃহত্তর কুমিল্লার প্রায় এক কোটি মানুষের প্রাণের দাবি, কুমিল্লা জেলাকে বিভাগ ঘোষণা করা হোকপ্রাচীন সমতট অঞ্চল যা বর্তমানে বৃহত্তর নোয়াখালী ও বৃহত্তর কুমিল্লা নামে পরিচিত, এই বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা ও বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা অর্থাৎ নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এই ছয় জেলা নিয়ে চাই কুমিল্লা বিভাগ গঠন।।এই ছয় জেলা নিয়ে কুমিল্লাকে বিভাগ করা হলে এই বিভাগের আয়তন হবে ১৩,৩০২ বর্গ কি. মি. যাহা আয়তনে সিলেট ও বরিশাল বিভাগের চাইতেও বড় হবেএই ছয় জেলা নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ গঠিত হলে এ প্রস্তাবিত বিভাগের জনসংখ্যা হবে প্রায় পৌনে দুই কোটি যাহা সিলেট ও বরিশাল বিভাগের জনসংখ্যার চেয়ে দুই গুনেরও বেশীআর তাছাড়া ১৮২৯ সালে যখন চট্টগ্রাম বিভাগ গঠিত হয় তখন বর্তমান বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ২ কোটির কাছাকাছিআর এখন শুধু বৃহত্তর নোয়াখালী ও বৃহত্তর কুমিল্লার জনসংখ্যাই হচ্ছে প্রায় পৌনে দুই কোটিসুতরাং বর্তমানে বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের এ বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে বিভাগীয় সেবা দিতে বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালীকে নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ গঠন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছেসর্বশেষ আদমশুমারী ২০১১ অনুসারে বরিশাল বিভাগের জনসংখ্যা মাত্র ৮৪ লক্ষ আর অথচ বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর জনসংখ্যা হচেছ ১ কোটি ৭০ লক্ষ, যাহা বরিশাল বিভাগের জনসংখ্যার দ্বিগুনমাত্র চারটি জেলা নিয়ে সিলেটকে যেখানে বিভাগ করা হয়েছে, সেখানে ছয়টি জেলা নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ গঠন অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত এবং সময়োপযোগী দাবি বটেসুতরাং জনসংখ্যা ও আয়তন উভয় দিক বিচারে বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালীকে নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ গঠন অত্যন্ত যুক্তিসংগত দাবিআর তাতে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে অত্র অঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষ খুব সহজে বিভাগীয় সেবা পেতে সক্ষম হবেনোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-এই ছয় জেলার মানুষকে বর্তমানে বিভাগীয় কাজকর্ম সারতে বহু কষ্ট এবং সময় ও অর্থ নষ্ট করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক ভোগান্তি সহ্য করে চট্টগ্রামে যেতে হয়, যা নিছক হয়রানি বটেউল্লিখিত ছয় জেলাকে নিয়ে কুমিল্লাকে বিভাগ করা হলে এ ছয় জেলার দুই কোটি মানুষকে চাকরির পরীক্ষাসহ বিভাগীয় অন্যান্য কাজে বহু কষ্ট করে সময় নষ্ট করে অর্থের অপচয় ঘটিয়ে চট্টগ্রামে যেতে হবে না
সুতরাং ভৌগলিক অবস্থান এবং উল্লিখিত ছয় জেলার মধ্যখানে বিবেচনায় কুমিল্লা বিভাগ গঠন এখন একান্তই যৌক্তিক দাবিবাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে দরকার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি, বেসরকারি তথ্য ও সেবা পৌঁছানোর প্রক্রিয়া বা মাধ্যম সৃষ্টি করাএর মধ্য দিয়ে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সুষম উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় এবং তৃণমূলের জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটেআর এই অঞ্চলের তৃণমূলের মানুষের ক্ষমতায়নের জন্যই বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের জনগণের বর্তমান সময়ের দাবি হচ্ছে, প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করাকুমিল্লাকে বিভাগ করা হলে অত্র উপকূলীয় অঞ্চল কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক জোন গড়ে উঠবে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দ্রুত হবে এবং এখানকার জনগনের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে বলে অত্র অঞ্চলের মানুষ মনে করেপরিশেষে জনসেবার জন্য প্রশাসন এবং জনমুখী প্রশাসন গড়ে তুলতে ঢাকা থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সুপ্রাচীন জেলা কুমিল্লাকে উল্লিখিত ছয় জেলা নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় যোগাযোগ ও রেলপথমন্ত্রী, এবং মাননীয় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সহ সংশিষ্ট সকল মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: