27 September 2013

চলো যাই ইতিহাসের শহর কুমিল্লায় [ রফিকুল ইসলাম সাগর ]

বৃহত্তর কুমিল্লার সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ইতিহাস। কুমিল্লায় আছে শত শত বছর পুরনো রাজা-প্রজাদের বাড়ি-ঘর, রাণীদের জন্য নির্মিত দিঘি ও পুকুর ঘাট, ব্রিটিশদের কবরস্থান, পুরাকীর্তি। একদিন হঠাৎ করে আমরা ক’জন বন্ধু একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঘুরে আসি কুমিল্লা থেকে। যানজট থেকে মুক্তি পেতে সকাল ৬টায় আমরা ঢাকা থেকে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে মাত্র দেড় ঘণ্টায় গিয়ে পৌঁছালাম কুমিল্লা নূরজাহান হোটেলের সামনে। নূরজাহান হোটেলে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল কুমিল্লার দুই বন্ধু। সকালের নাস্তা সেরে নিলাম সেখানে। সকালের নাস্তার সাথে নূরজাহান হোটেলের এক কাপ চা পান করে খুব তৃপ্তি পেয়েছিলাম। নাস্তা শেষ করে আমরা প্রথমে গেলাম ‘কুমিলাø বার্ড’ ঘুরে দেখতে। বার্ডে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ নিষেধ কিন্তু আমাদের কুমিল্লার দুই বন্ধুর পরিচিতিতে আমরা সেখানে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। ভেতরে সবকিছু সাজানো-গোছানো উঁচু-নিচু পথ, নানা রকমের গাছ-গাছালি, সবকিছুতেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মনোমুগ্ধকর ছোঁয়া। বার্ড থেকে বের হয়ে যাই কোর্টবাড়ি। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম কোর্টবাড়ি এলাকায়। কোর্টবাড়ি রুব্বান মুড়া গিয়ে দেখতে পাই পুরাকীর্তি। ধারণা করা হয় শত বছর আগে এখানে রাজা-প্রজাদের বাড়ি ছিল। বর্তমানে এই বাড়ির অর্ধেক মাটির নিচে দেবে গিয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় পুরোপুরি মাটির নিচে দেবে গিয়েছে। এখান থেকে সংগ্রহ করা হয় কিছু মূর্তি ও রাজা-প্রজাদের ব্যবহার করা জিনিসপত্র। বর্তমানে এগুলো জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত কবরস্থান ওয়ার সিমেট্রি দেখতে যাই। তখন একটু একটু বৃষ্টি হচ্ছিল। তারপরেও আমরা গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে প্রবেশ করলাম। মনে হচ্ছিল আমরা এখন অন্য কোনো দেশে অবস্থান করছি। ব্রিটিশদের কবরস্থানের সৌন্দর্য দেখে মনে হয়েছিল আমরা বিদেশেই আছি। কুমিল্লা মূল শহরের কাছাকাছি গিয়ে প্রবেশ করি ইপিজেড এলাকায়। সেখানে সরকারি হাসপাতালের পাশে কুমিল্লা বিমান বন্দর। কুমিল্লা বিমান বন্দরটি অনেক পুরনো তাই অনেকেই হয়তো জানো না এই বিমান বন্দরটির কথা। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় এখানে মিত্র বাহিনীর বিমান ও সামরিক ঘাটি ছিল। এখান থেকে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের অনেক অপারেশন চালানো হয়েছে বিশেষ করে বার্মা ও চীনে। অনেক যোদ্ধা এখানে নিহত হয়েছেন,আবার অনেক যোদ্ধা সুস্থ্য হয়েছেন কুমিল্লা সামরিক হাসপাতাল থেকে। যারা নিহত হয়েছেন তাদের অনেকেই শায়িত হয়েছেন কুমিল্লার ওয়ার সিমেট্রিতে। কুমিল্লা রেল স্টেশনের কাছে গিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম। কুমিল্লা থেকে ভারতের সীমান্ত কাছে, তাই সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত হলো। আমরা বড়জ্বালা সীমান্ত ফাঁড়ি পার করে ভেতরের দিকে যাই। সেখানে যারা বসবাস করেন তারা নাকি প্রায় সময় ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেন। গ্রামের একজনকে বললাম আমরা ভারতের সীমান্তে প্রবেশ করতে পারব কি-না। তিনি বললেন, না আপনারা যেহেতু এখানে অপরিচিত তাই ভেতরে প্রবেশ করা যাবে না। শুধু মাত্র পাসপোর্ট ভিসা থাকলে প্রবেশ করা যায়,তা নাহলে বিপজ্জনক। অবৈধ প্রবেশ হিসেবে গণ্য হবে। যেকোনো রকমের বিপদ হতে পারে। ভারতের সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর লক্ষ্য করলাম সাইনবোর্ডে লেখা আছে সামনে ভারতের সীমান্ত রেখা, অতিক্রম নিষেধ। সেখান থেকে কুমিল্লার এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিলাম। যেতে যেতে সন্ধ্যা নেমে এসেছিল। আমাদের জন্য রান্নাবান্না করা হলো। রাতের খাবার শেষে আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে মধ্যরাত হয়ে যায়।

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: