ইতিহাসে
উল্লেখ আছে-বরকামতা ছিল সমতটের রাজধানী। এখানকার
বৌদ্ধ নৃপতি দেব খড়গের মহিষী প্রভাবতী দেবী ”ভগবতী”দুর্গা মাকে
শর্বাণী নামে পূজা করতেন। বরকামতা
নামটির সাথে প্রাচীন ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে ।
চারদিকে
এ নগরী বিস্তৃত ছিল। কালের গতিতে অনেক কিছু হারিয়ে গেছে। তবে রয়ে গেছে স্মৃতি। কুমিল্লার
মধ্যে খুব সম্ভবত দেবিদ্ধারের বরকামতায় দুর্গাদেবীর প্রাচীনতম আরোধনার কেন্দ্রটি
অবস্থিত। ১৩০০ বছর পূর্ব থেকেই এখানে দুর্গাদেবীর
পুজা করা হচ্ছে। দুর্গা পুজা উপলক্ষে সারা দেশে অনুষ্ঠান
করা হয় , দশমীর
দিনে প্রতিমা বিসর্জণ দেয়া হয়। কিন্তু
বরকামতা দুর্গাবাড়িতে বিসর্জন দেয়া হয়না। বরকামতার ২ কিলোমিটার
উত্তর-পূর্বে প্রায় ২৫ ফুট উঁচু ঢিবি আছে। এর উপরে একটি
শিব লিঙ্গ আছে। প্রতœতাত্বিকদের ধারণা এটি ৭ম শতকের
চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এর স্মৃতিবিজড়িত বৌদ্বস্তুপের ধ্বংসাবশেষ হতে পারে। বরকামতার ২ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত বেলাস্বরে বোধিস্বত্ত
আলোিকতস্বরের একটি চমৎকার প্রস্তর মূর্তি পাওয়া গেছে। ৬
কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত শুভপুরে বজুপানি বোধিস্বত্তের একটি প্রমান সাইজের মূর্তি
পাওয়া গেছে । শুভপুরের পার্শ¦বর্তী
বিহারমন্ডলে পাওয়া গেছে ”ধনাধিপতির মূর্তি”। এর
পার্শ্ববর্তী ”বাঘেরপাড়”গ্রামে একটি বৌদ্বমূর্তি পাওয়া গেছে। বরকামতার
৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ”পিহর”গ্রামে মহাযানি বৌদ্ব দেবী মরীচির একটি মনোরম মূর্তি
আবিষ্কিৃতি হয়েছে।
শ্রী শ্রী চন্ডির দশম অধ্যায়ের ৫ম শ্লোকে
মা বলেছেন ”এ
কৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়াকা মমাপরা।” অর্থাৎ এজগতে
একমাত্র আমি আছি আমার দ্ধিতীয় কেউ নেই। দুর্গা মায়ের
দশ হাতে দশটি অস্ত্র । এগুলো দিয়ে সন্তানকে রক্ষা করা হয়। অস্ত্রগুলোর প্রত্যোকটির আধ্মতিক অর্থ আছে, যেমন-ত্রিশুল
, দ্বারা
স্থুল , সুক্ষ
কারণ জীবের এই তিন দেহ লয় করে সিদ্ধ দেহ জাগিয়ে দেন , খড়গ অর্থ
তত্তজ্ঞানের অসি প্রমুখ।
বরকামতা দুর্গাবড়ির নিজস্ব প্রতীক রয়েছে। এতে শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর পূর্ণ মূর্তি রয়েছে। এটি একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধিত হয়। এ সংঘের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য স্থায়ী অথবা অস্থায়ী
সম্পত্তি ক্রয় অথবা বন্ধক অথবা দান গ্রহণ এবং উদ্দেশ্য পূরণে সম্পত্তি পরিচালিত হয়। দুর্গাবড়ির সদস্যরা দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে যেমন-টিকাদান
কর্মসূচি ,গণস্বাক্ষরতা
, আদমশুমারী
, বৃক্ষরোপন
, ভুমি
জরিপ , ভোটার
তালিকা প্রণয়ণ , ভোট প্রদানে সহযোগিতা , ত্রাণ বিতরণ , জাতীয়
অনুষ্ঠান , /কর্মসূচিতে
স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশগ্রহণ করে। এ বাড়ির
অনুষ্ঠানকে স্বার্থক করার জন্য বহু ধর্মপ্রাণ হিন্দু আত্মনিয়োগ করেছেন । তাদের মধ্যে যতীন্দ্র মোহন শীলের নাম অন্যতম। এছাড়া খগেন্দ্র চন্দ্র দত্ত , উপেন্দ্র দত্ত , কৃষ্ঞ দত্ত ,
দিলিপ
দাশ , আবুল
দত্তের অবদান স্মরণীয়। এখানে দুর্গা মন্দির বাদেও আরো কয়েকটি
মন্দির রয়েছে। ৭০ এর দশকে নিশিকান্ত দাশ নাট মন্দির
নির্মাণ করেন। ৯০ এর দশকে মোহনপুরের রনজিত ধর দুগর্ৃা
মন্দির পুননির্মাণ করেন। এছাড়া ৯০ এর
দশকে হাড়ং এর খিতিশ কর রাধা গোবিন্দ মন্দিরও কালি মন্দির পুনঃনির্মাণ করেন।
বরকামতা শ্রী শ্রী দুর্গাবাড়ি কার্য
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা নারায়ন চন্দ্র দেবনাথ (মাষ্টার) ধর্মপ্রাণ
হিন্দুদের আহবান জানান ,আসুন আমরা সকল শক্তির বশীভুত হয়ে শক্তিরুপানি মায়ের নিকট
প্রার্থনা করি –”মা আমাদের অশুভ শক্তির অবসান ঘটিয়ে সত্য , সুন্দর ও
ন্যায়ের পথে তথা শক্তির আলোকে আলোকিত করে জাতি –ধর্ম -নির্বিশেষে বিশ্ব
ভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে সহায়তা করুন। হিন্দুরা
দুর্গা দেবীকে ”মা” হিসেবে সম্বোধন করেন। মায়ের
অকৃত্রিম ভালবাসা , ক্ষমা , সরলতা ,পবিত্রতা ও ত্যাগের মহান আদর্শ হলো” মা ”কালিন্দি
যমুনার তীরে যোগমায়া , যোগশক্তি , আদ্যশক্তি , জগৎজননী ,
দুর্গতিনাশিনি
,
কল্যানময়ী
,শ্রী
শ্রী দুর্গাদেবীর চিত্র অংকিত করে ব্রজের গোপীগন ব্রতানুষ্ঠানের মাধ্যমে গোলাক করে
হয়েছেন গোলাক বিহারী। জগৎস্বামী ভগবান শ্রীকৃষ্ঞকে আপনপতিরূপে
তথা জগৎস্বামীরুপে লাভ করেছিলেন। ধর্মপ্রাণ
হিন্দুরা দুর্গাদেবীর আরাধনায় মুক্তি খোঁজেন । মানবজীবনের
উদ্দেশ্য হচ্ছে মুক্তি লাভের জন্য যোগ্যতা অর্জণ করা। দুর্ভাগ্য
বশত মায়ার মোহময়ী প্রভাবে ক্ষণস্থায়ী জীবনকে আমরা প্রাধান্য দেই। দেশ , গৃহ , ভুমি , সন্তান , ব্যবসা-বাণিজ্য
ও চাকুরির মোহে আচ্ছন্ন থাকি , এসব মোহ থেকে মুক্তির জন্য দেবী দুর্গার
আশির্বাদ কাম্য । বেলুচিস্তানের মরুতীর্থে হিংলাজ –মাতা,
নেপালে
মঞ্জুশ্রী দেবী , তিব্বতে তারা দেবী , চীনে চানসান , জাপানে
চুন্ডি মহাশক্তি দেবী নামে পুঁজিত হচ্ছে। বাংলাদেশের
দুর্গাদেবী মহাশক্তিধর ।১৯৬৬ সালের
শারদীয় দুর্গাপুজার নবমী তিথিতে রাতেকুমিল্লার দেবিদ্বারের বরকামতায় মা বিপিন
দাশকে সপ্নযোগে আদেশ করলেন ”আমাকে বিসর্জন করবেনা , শিব চতুর্দশীতে ৫৬ প্রহর নামযঝগ্গ করবে। কিছুদিন পর আবার
স্বপ্নাদেশ হয়”৫৬ প্রহরের পরিবর্তে ১১২ প্রহর নামযজ্ঞ করবে।এখন প্রতি বছর এখানে ১১২ প্রহর নামকীর্তন করা হয়।
0 facebook: