18 August 2017

১০ কারণে কুমিল্লা নগরে জলাবদ্ধতা


কুমিল্লা নগরে ১০টি কারণে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। যার কারণে সামান্য বৃষ্টিতে শহরের সড়ক ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টিতে নাকাল হয়ে পড়েছে শহরের বেশির ভাগ মানুষ। পানি নামার সব পথ রুদ্ধ হওয়ায় এককালের সাজানো-গোছানো-পরিপাটি কুমিল্লা শহর এখন শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। আবাসিক শহরের এমন বিপর্যয় ঠেকাতে দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা নেওয়ার কথা বলছেন নগরবিদেরা।
কুমিল্লা শহরের আদি বাসিন্দা ও নগর ভবনের প্রকৌশলীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নগরের পানি নামার অন্তত ১০টি পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে কুমিল্লা নগরের টমছমব্রিজ মসজিদের নিচে কান্দিখালের প্রস্থ কমে যাওয়া ও খালের মধ্যে পিলার থাকা, বিসিক শিল্পনগরী লাগোয়া রেললাইনের পানি নামার পথ বন্ধ, বদরপুর রেলওয়ের অপ্রশস্ত কালভার্ট, দক্ষিণচর্থা ইপিজেড এলাকার নাসা স্পিনিং মিলের কারণে পানিপ্রবাহের পথ রুদ্ধ হওয়া, চাঁনপুর পুরাতন গোমতী নদীর স্তর ওপরে থাকা, কান্দিরপাড় সিটি হার্ট বিপণিবিতান এলাকার খালের প্রস্থ কমে যাওয়া, রেইসকোর্স রেলসেতুর সামনে খাল ভরাট, কাঠেরপুল খালের মধ্যে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি, কান্দিরপাড় সিটি মার্কেট লাগোয়া নালার মধ্যে পিলার ও অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ।
গত বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পানি নামার রুদ্ধ জায়গাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, রেললাইনের কালভার্টের পানি নামার জায়গা ভরাট রয়েছে। সেখানে প্লট করা হয়েছে। দক্ষিণচর্থার যে পথ দিয়ে পানি নামত, সেখানে কুমিল্লা ইপিজেডের নাসা কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। কান্দিরপাড়ের টাউন হল লাগোয়া সিটি মার্কেট তৈরির সময় নালার মধ্যে পিলার বসানো আছে। এতে করে পানিপ্রবাহ এক প্রকার বন্ধই রয়েছে। একই অবস্থা কান্দিরপাড় সিটি হার্ট বিপণিবিতানের খালের। আগে ওই খাল ছয় ফুট প্রস্থ ছিল, এখন সেটি সাড়ে তিন ফুটে নেমে এসেছে। কাঠেরপুল খালের মধ্যে যত্রতত্র পিলার বসিয়ে ব্যক্তিগত কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।
কুমিল্লার ইতিহাসবিদ গোলাম ফারুক বলেন, ‘১৯২১ সালে কুমিল্লা টাউন সার্ভে (জরিপ) হয়েছিল। তখন শহরের কোথায় 
কী হবে, তা উল্লেখ করা ছিল। কিন্তু সে জরিপের তোয়াক্কা না করে বাসাবাড়ি বানানো হচ্ছে। কুমিল্লা শহরের পানি নামার অন্তত ১০টি পথ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে জলাবদ্ধতা ক্রমেই দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। আমাদের ছেলেবেলায় কুমিল্লা শহর অত্যন্ত সুন্দর ছিল। এখন সেই রূপ আর নেই। শহরকে সুন্দর রাখার জন্য কুমিল্লা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করতে হবে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর বলেন, অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণের কারণে বাসাবাড়ির পানি নামতে পারছে না। যে যার মতো করে ইমারত নির্মাণ করছে। কেউ বিধিমালা মানছে না।
কুমিল্লার প্রকৌশলী আবুল বাশার বলেন, কুমিল্লা নগরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য ১৯৯৬ সালে বিভিন্ন দপ্তরের প্রকৌশলীদের নিয়ে একটি সভা হয়েছিল। ওই সভায় নানা ধরনের কর্মকৌশল ঠিক করা হয়। এরপর সেটি আর এগোয়নি।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শেখ মো. নুরুল্লাহ বলেন, পানি নামার সব উৎসমুখ ভরাট করা হয়েছে। নগরবাসী সচেতন না হলে জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব নয়।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা থাকতে হবে। এগুলোর দৈন্যের কারণে পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মনিরুল হক বলেন, নগরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণসহ কুমিল্লাকে একটি পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক শহর হিসেবে তৈরি করতে মহাপরিকল্পনা প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী নগরের জলাবদ্ধতা দূর করা হবে।
সূত্রঃ প্রথম আলো

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: