কুমিল্লা জেলা দিন দিন অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হচ্ছে। বৃহত্তর এ জেলায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় বেশ কয়েকবার আলোচনা করা হলেও অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশ বরাবরই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, পারিবারিক কলহ ও রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে কুমিল্লা জেলায় ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে ৭টি খুন ও ৪৪টি নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ১০টি, অপহরণ ১টি, ২টি দস্যুতাসহ মোট ৫৭০টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
এছাড়াও ৩ বিদেশী পিস্তল, ৮টি কার্তুজ, ৫টি ম্যাগজিনসহ ১৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ ২০১৭ইং সালের চেয়ে এপ্রিলে অপরাধ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়ে অধিক হারে। মার্চ মাসে মোট ৫৫৩টি অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৪টি নারী ও শিশু নির্যাতন, ১০টি ধর্ষণ, খুন ১৩টিসহ ৩৮টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছিল বলে গতকাল কুমিল্লা জেলা প্রশাসক সম্মেলনে কক্ষে মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সভাপতি জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাংগীর আলম এ তথ্য তুলে ধরে।
এছাড়াও জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা তথ্য অনুযায়ী জানা যায়- কুমিল্লা জেলায় চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ১৭ উপজেলায় ৭টি খুন ও ৪৪টি নারী ও শিশু নির্যাতন, ১০টি ধর্ষণ, দস্যুতা ২টি, অপহরণ ১টিসহ মোট ৫৭০টি অপরাধ সংঘটিত হয়। এর মধ্যে কোতয়ালী থানায় দস্যুতা ১টি, ১টি খুন, অপরহরণ ১টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ৭টি, সির্দেল চোর ২টি, অন্যান্য চুরি ১টি, বিস্ফোরক ১টি, পুলিশ আক্রান্ত ১টি, দ্রুত বিচার ২টি, মাদকদ্রব্যসহ ৮৬টি, অন্যান্য ৩১টিসহ মোট ১৩৪টি অপরাধ সংঘটিত হয়।
এছাড়াও জেলার সদর দক্ষিণ থানা ১টি খুন, ৪টি নারী ও শিশু নির্যাতন, পুলিশ আক্রান্ত ১টি, পশু চুরি ১টি, অন্যান্য চুরি ১টি, অস্ত্র আইন ১টি, দ্রুত বিচার ১টি, মাদকদ্রব্য ২৫টি, অন্যান্য ১৩ টিসহ মোট ৭৫টি অপরাধ সংঘটিত হয়। চৌদ্দগ্রামে খুন ১টি, ৫টি নারী ও শিশু নির্যাতন, অন্যান্য ১টি, অস্ত্র আইন ১টি, মাদকদ্রব্য ৩১টি, অন্যান্য ১৭টিসহ সহ মোট ৫৬টি অপরাধ, নাঙ্গলকোটে ৩টি নারী ও শিশু নির্যাতন, পশু চুরি ১টি, মাদকদ্রব্য ৫টি. অন্যান্য ৩টিসহ মোট ১২টি অপরাধ, লাকসামে ১টি নারী ও শিশু নির্যাতন, মাদক ১৬টি ও অন্যান্য ৮টিসহ মোট ২৫টি অপরাধ।
মনোহরগঞ্জে খুন ১টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ২টি, মাদক ২টিসহ মোট ১০টি অপরাধ, বুড়িচং ডাকাতি ১টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ২টি, সিদেল চুরি ৩টি, পশু চুরি ২টি, অন্যান্য চুরি ১টি, চোরাচালান ১টি, মাদক ১২টিসহ মোট ৩২টি অপরাধ, ব্রাহ্মণপাড়া ১টি নারী ও শিশু নির্যাতন, সিদেল চুরি ১টি, অন্যান্য চুরি ১টি, মাদক ১৯টিসহ মোট ২৬টি অপরাধ, বরুড়া দস্যুতা ১টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ৮টি, সিদেল চুরি ১টি, পশু চুরি ১টি, অন্যান্য চুরি ১টি, মাদক ৮টিসহ মোট ৩০টি অপরাধ, চান্দিনায় ৬টি নারী ও শিশু নির্যাতন, মাদক ২১টিসহ মোট ৪০টি অপরাধ, দাউদকান্দিতে ২টি খুন, ৫টি নারী ও শিশু নির্যাতন, চোরাচালান ২টি, মাদক ৪২টিসহ মোট ৫৮টি অপরাধ, তিতাসে খুন ১টি, মাদক ৫টিসহ মোট ১০টি অপরাধ, মেঘনায় মাদক ৪টিসহ মোট ৬টি অপরাধ।
হোমনায় নারী ও শিশু নির্যাতন ১টি, সিদেল চুরি ১টি, মাদক ২টিসহ মোট ৮টি অপরাধ, মুরাদনগর খুন ১টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১টি, মাদক ১৭টিসহ মোট ২৮টি অপরাধ, দেবিদ্বারে নারী ও শিশু নির্যাতন ৭টি, সিদেল চুরি ১টি, পশু চুরি ১টি, মাদক ৮টি, অন্যান্য চুরি ৫টিসহ মোট ১৬টি অপরাধ। বাঙ্গরা পশু চুরি ১টি, অন্যান্য চুরি ১টি, চোরাচালান ১টি, মাদক ৮টিসহ মোট ১৬টি অপরাধ।
এছাড়াও জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার ভূমি, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। চলতি বছরের এপ্রিলে ১৫৭টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে ২৬৭টি মামলা, ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯’শ টাকা জরিমানা আদায়, ২৫৩ জনের অর্থদণ্ড ও ৭৫ জনকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ভেজাল খাদ্য উৎপাদন ও বিপনন রোধে ভ্রাম্যমান আদালত কর্তৃক ১৬টি অভিযানে ৩৯টি মামলা, ১ লাখ ৬২ হাজার ১’শ টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় ৩৭ জনকে অর্থ দণ্ড করা হয়। মাদক চোরাচালান ও বিপনন রোধে ভ্রাম্যমান আদালত ৮১টি অভিযানে ১৩৩টি মামলা, ২ লাখ ১১ হাজার ২’শ টাকা জরিমানা, ১৩৩ জনকে অর্থ দণ্ড, ৪৮ জনকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
ইভটিজিং রোধে ভ্রাম্যমান আদালত ৬টি অভিযানে ৬টি মামলা দিয়ে ৭ জনকে কারাদন্ডসহ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অন্যদিকে গত এক মাসে মাদকদ্রব্য ও চোরাচালান বিরোধী অভিযান চালিয়ে কুমিল্লা র্যাব-১১ অক্টোবর মাসে ৬টি অভিযানে ২ লাখ ৫১ হাজার ৪’শ টাকার মালামাল উদ্ধার ও ২ জনকে আটক করে ২টি মামলা দায়ের করেছেন। বিজিবি ১ হাজার ৮৭২টি অভিযানে ১২ কোটি ২১ লাখ ৯৬ হাজার ১৮০ টাকা উদ্ধার করেছে এবং ৯ জনকে আটক করেছে, মামলা দিয়েছেন ৮টি, পুলিশ ৬ হাজার ৩’শ৯২টি অভিযানে ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৮৭ হাজার ৫৫০ টাকা ও ৩৩৮ জনকে আটক করে ২৭৫টি মামলা দায়ের করেছে এবং মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর ১৭৫টি অভিযানে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৩৮০টাকা উদ্ধার করেছে এবং ২৯ জনকে আটক করে ২৯টি মামলা দায়ের করেন। বনবিভাগে ৩০টি অভিযানে ৮টি দায়ের করেছেন।
কুমিল্লা পুলিশ সুপার শাহ মোঃ আবিদ হোসেন বলেন- কুমিল্লা গত মাসে জঙ্গী বিরোধী কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কোটবাড়ীতে জঙ্গী বিরোধী অভিযানে কাউকে পাওয়া যায়নি, তবে অভিযানে ১০ কেজি বিস্ফোরক, ১টি সুইসাইডাল বেল্ট, হেন্ড গ্রেনেড ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন- জেলা পুলিশ মাদক, জঙ্গি বিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাংগীর আলম বলেন-কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধর্মের আলোকে বাণী সম্বলিত ফলক মহানগর এলাকায় পুনঃ স্থাপনসহ বিভিন্ন মসজিদের ইমামদের এ বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন- কুমিল্লা জেলা উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও মাদকদ্রব্য প্রতিরোধে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন।
সূত্রঃ বিডি টুয়েন্টিফোর লাইভ
0 facebook: