20 April 2017

১৩ মাসেও শনাক্ত হয়নি তনুর ঘাতকরা


কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের এক বছর অতিবাহিত হলেও ঘাতকরা শনাক্ত হয়নি। আজ দেশব্যাপী আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ১৩ মাস পূর্ণ হচ্ছে। কিন্তু এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে খুনিরা। ঘটনার পর থেকে তদন্তকারী সংস্থা একাধিকবার পরিবর্তিত হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে কুমিল্লা সিআইডি। ধীরে ধীরে এ মামলার কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। এতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ তনুর পরিবার।
সর্বশেষ সোমবার রাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুমিল্লা সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ তনুর পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে তাদের সেনানিবাসের বাসায় যান। এ সময় ঢাকা থেকে সেলফোনে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আখন্দ তনুর মা ও চাচাতো বোন লাইজুর সঙ্গে কথা বলেন।
গত বছরের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গল থেকে কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। থানা পুলিশ ও ডিবির পর গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় কুমিল্লা সিআইডি। মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ৩ জনের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। এছাড়া হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলেও তারা নিশ্চিত হন। এদিকে দীর্ঘ এক বছরেও তনু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে না পারা, দুই দফা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করতে না পারা, এমনকি ডিএনএ পরীক্ষায় ৩ ধর্ষণকারীর শুক্রাণু পেলেও এ পর্যন্ত ডিএনএ ম্যাচ করে ঘাতকদের শনাক্ত করতে না পারায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য বিচার পাওয়া নিয়ে তনুর পরিবারসহ সচেতন মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে।
বুধবার বিকালে তনুর মা আনোয়ারা বেগম মোবাইলে যুগান্তরকে বলেন, ‘১৩ মাসেও কেন খুনিদের কাউকে চিহ্নিত বা গ্রেফতার করতে পারেনি। পিয়নের মেয়ে বলে আমরা কি হত্যার বিচার পাব না? তনু যদি কোনো সেনা অফিসারের মেয়ে হতো তাহলে তো খুনিদের চিহ্নিত করতে এত সময় লাগত না।’
তদন্ত সংস্থা সিআইডির তৎপরতা বিষয়ে তনুর মা বলেন, সোমবার রাতে সিআইডির কর্মকর্তারা বাসায় এসে আবারও বিচারের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘তারা (সিআইডি) তদন্তে অনেক দূর এগিয়েছেন।’ কিন্তু আমরা ন্যায়বিচারের কোনো লক্ষণ দেখছি না। ঢাকা থেকে সিআইডির আখন্দ সাহেব মোবাইলে তনুর চাচাতো বোন লাইজুর সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় তিনি তনুর বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চান, এসব তথ্য এর আগেও অনেকবার আমরা সিআইডিকে বলেছি, নতুন করে কেন বারবার এসব তথ্য চাওয়া হচ্ছে।
তনুর মা আরও বলেন, ‘কাকে গ্রেফতার করলে তনুর হত্যার রহস্য বের হবে, তা আমি অনেক বার সিআইডিকে বলেছি, প্রয়োজনে বিচারের দাবি নিয়ে উচ্চ আদালতে যাব, মেয়ে হারিয়েছি, এখন আর কিছু হারানোর ভয় করি না। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি ন্যায়বিচার চেয়েও পাচ্ছি না, দেশের ১৬ কোটি লোকও তনু হত্যার বিচার চায়।’
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি-কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘মামলাটি তদন্ত নিজস্ব গতিতে চলছে, কিছুটা অগ্রগতি আছে, মামলাটি তদন্তাধীন, তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’


সুত্রঃ যুগান্তর

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: