23 June 2017

কুমিল্লায় খাদির পাঞ্জাবি চাহিদার শীর্ষে

কুমিল্লায় খাদির পাঞ্জাবি চাহিদার শীর্ষে

কুমিল্লার ঈদবাজারে ঐতিহ্যবাহী খাদি কাপড়ের পাঞ্জাবি চাহিদার শীর্ষে রয়েছে। এ ছাড়া দৃষ্টিনন্দন, আরামদায়ক এবং কম দাম হওয়ায় খাদি কাপড়ের থ্রি-পিস কিনছেন মহিলারা। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা খাদি কাপড় কিনছেন ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে। সাদা এবং রঙিন পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ৬শ থেকে ১২শ টাকা। থ্রি-পিসের দাম ৫শ থেকে ১০০০ টাকা। শার্ট ৪শ থেকে ৫শ টাকা। ফতুয়া ৪শ থেকে ৬শ টাকা। এছাড়া রয়েছে বিছানার চাদর, গায়ের চাদর, ছোটদের প্যান্ট-শার্টসহ বিভিন্ন পোশাক। কুমিল্লা মহানগরীর মনোহরপুর ও লাকসাম রোডে খাদিপণ্য বিক্রির পুরান দোকানগুলোর পাশাপাশি অনেক নতুন দোকান গড়ে উঠেছে। খাদি ব্যবসায়ীদের সূত্র জানায়, খাদির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতবর্ষের স্বাধিকার আন্দোলন ও বাঙালি ঐতিহ্য। এ কাপড় খাদে (গর্তে) বসে তৈরি করা হয় বলে এর নাম দেওয়া হয় ‘খাদি’। শতবর্ষের ঐতিহ্যের খাদি আলোচনায় আসে ১৯২১ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময়। তখন  মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় খাদি শিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেই সময় বিদেশি পণ্য বর্জন করার ডাক আসে। সর্বত্র এক আওয়াজ ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’। সেই মোটা কাপড় এখন মিহি হয়েছে। কাপড়ে লেগেছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। কুমিল্লার খাদি এখন শৈল্পিকতার ছোঁয়ায় দেশ-বিদেশে সমাদৃত হয়ে আসছে। খাদির কাপড় যাচ্ছে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এ সুনাম অর্জিত হয়েছে বহু বছর ধরে অনেক কারিগর আর ব্যবসায়ীর অক্লান্ত পরিশ্রমে। খাদি কাপড়ের সঙ্গে এখন কয়েকটি দিক জড়িত রয়েছে। তা হচ্ছে তাঁতি, সুতা কাটুনী, ব্লক কাটার ও রঙের কারিগর। সবাই মিলে তৈরি করেন নান্দনিক খাদি কাপড়। বর্তমানে কুমিল্লা জেলায় দেড় হাজার পরিবার এই পেশায় জড়িত। মহানগরে খাদি কাপড়ের দোকান রয়েছে শতাধিক। খাদি শিল্পের প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন কুমিল্লা মহানগরের খাদি ঘরের তরুণী মোহন রাহা, খাদি কুটির শিল্পের শংকর সাহা, খাদি ভবনের দীনেশ দাশ, বিশুদ্ধ খদ্দরের মনমোহন দত্ত ও রাম নারায়ণ স্টোরের কৃষ্ণ সাহা।  
আমেরিকা প্রবাসী আকিলা রাব্বী জানান, তিনি প্রায় প্রতি বছর দেশে আসেন। দেশে এলে খাদির শার্ট, ফতুয়া, পাঞ্জাবি ও থ্রি-পিস কেনেন। তিনি আমেরিকায় স্বজনদের জন্য কুমিল্লার ঐতিহ্যের খাদি কাপড় নিয়ে যান। কুমিল্লা মহানগরীর খাদি কাপড়ের প্রবীণ ব্যবসায়ী খাদিঘরের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কুমার রাহা বলেন, কুমিল্লা খাদি শিল্পের একটা শক্ত ভিত আছে। বর্তমানে খাদি শিল্পে অনেক নতুন নতুন ডিজাইন এসেছে, কারণ ১৯২১ সালের প্রেক্ষাপট ও আজকের চাহিদা এক নয়। শতবর্ষের খাদিপণ্য তার গুণগত মান বজায় রেখে আধুনিকতার সংমিশ্রণে প্রতিযোগিতার বাজারে চাহিদা ধরে রেখেছে। পৃথিবীর যেখানে বাঙালি আছে সেখানে খাদি কাপড়ের প্রসার ঘটেছে। বাংলাদেশের বিদেশি দূতাবাসে খাদিসহ দেশি পণ্যের প্রদর্শনী করলে তা এ পণ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটাবে।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: