14 May 2017

কুমিল্লার কৃতি সন্তান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ

কুমিল্লার কৃতি সন্তান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ

অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার এলাহাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেনতার পিতা স্কুল শিক্ষক আলহাজ কেয়াম উদ্দিন ভূইয়া, মা আফজারুন্নেছা

মোজাফফর আহমদ হোসেনতলা স্কুল, জাফরগঞ্জ রাজ ইনস্টিটিউশন, দেবিদ্বার রেয়াজউদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও ভিক্টোরিয়া কলেজে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে পড়াশোনা করেনপরবর্তী পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ইউনেস্কোর ডিপ্লোমা লাভ করেনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কৃতী ছাত্র দীর্ঘদিন বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকতা শেষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে [১৯৫২-১৯৫৪] অধ্যাপনা করেন

মোজাফফর আহমদের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ১৯৩৭ সালে১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন১৯৫৪ সালে চাকরি ছেড়ে পুরোপুরিভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে দেবিদ্বার আসনে মুসলিম লীগের শিক্ষামন্ত্রীকে পরাজিত করেন১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল আওয়ামী লীগের বিরোধিতা সত্ত্বেও পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদে ন্যাপ নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন

১৯৫৮ সালে সামরিক শাসক আইয়ুব সরকার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও হুলিয়া জারি করেএমনকি তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়তিনি আত্দগোপন অবস্থায় আইয়ুবী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করেনআট বছর আত্দগোপনে থাকার পর ১৯৬৬ সালে প্রকাশ্য রাজনীতিতে তিনি আবার ফিরে আসেন১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হনতিনি অবিভক্ত পাকিস্তান ন্যাপের যুগ্ম সম্পাদকও ছিলেন১৯৬৯-এ আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং কারাবরণ করেনতিনি আইয়ুব খান আহূত রাওয়ালপিন্ডির গোলটেবিল বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন

১৯৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে মূল নেতৃত্বের একজন ছিলেন এবং প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেনতিনি স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেনওই সময় তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেনমুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ, সিপিসি ও ছাত্র ইউনিয়নের নিজস্ব ১৯ হাজার মুক্তিযোদ্ধা গঠনের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অবিস্মরণীয়১৯৭৯ সালে এমপি নির্বাচিত হন১৯৮১ সালে ন্যাপ, সিপিবি এবং প্রগতিশীল শক্তির প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনস্বৈরাচারী এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনের শুরুতে কারারুদ্ধ হনতিনি যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা, সোভিয়েত ইউনিয়ন, বুলগেরিয়া, অস্ট্রিয়া, ভারত, দক্ষিণ ইয়মেন, লিবিয়া, আফগানিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যসহ পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের বহু দেশ সফর করেনতিনি 'সমাজতন্ত্র কি এবং কেন', 'প্রকৃত গণতন্ত্র তথা সমাজতন্ত্র সম্পর্কে জানার কথা', 'মার্ঙ্বাদী সমাজতন্ত্র ও কিছু কথা' বইয়ের রচয়িতাঘটনাবহুল বিশ্বব্যবস্থায় তার রাজনৈতিক দর্শন ও দূরদর্শিতা বাস্তবানুগ ও সময়োপযোগী বলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত হয়েছেবর্তমানে তার গবেষণার বিষয় নতুন শতাব্দীতে নতুন সভ্যতা জন্ম নিচ্ছে যার প্রসব বেদনা শুরু হয়েছে রাশিয়ায় এবং ব্যথা ছড়াচ্ছে অন্যান্য দেশসহ আমাদের দেশেওদেশপ্রেমিক কর্মী সৃষ্টির জন্য মদনপুরে তার প্রতিষ্ঠিত উপমহাদেশের একমাত্র শিক্ষায়তন 'সামাজিক বিজ্ঞান পরিষদ'ব্যক্তিগত জীবনে একমাত্র কন্যাসন্তানের জনকতার সহধর্মিণী মিসেস আমিনা আহমদ ন্যাপের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বাংলাদেশ নারী সমিতির সভানেত্রী

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন 

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: