কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ২৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় প্রাঙ্গণে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।
নির্বাচনী এ ইশতেহারে নগরীর জলাবদ্ধতা, যানজট ও ড্রেনেজ সমস্যার সমাধান, শিার মান উন্নয়ন, কর বৃদ্ধি না করা, কর্মজীবী নারীদের জন্য হোস্টেল, আধুনিক স্টেডিয়াম, আইটি পার্ক ও নগরীর চারপাশে সার্কুলার রোড তৈরি ও কুমিল্লা চিড়িয়াখানার উন্নয়নসহ ২৯ দফার ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদু নাহার লাইলী, শিা বিষয়ক সম্পাদক শামছুন নাহার চাপা।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন- কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক আলহাজ ওমর ফারুক, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজহার উদ্দীন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা আরফানুল হক রিফাত, সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবদুল হাই বাবলু ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম রতন প্রমুখ।
ইশতেহার সমূহ তুলে ধরা হলো:
১) আগামী ৫ বছরের জন্য বর্ধিত কোন করের বোঝা জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না। অতি দরিদ্রদের হোল্ডিং কর মওকুফ করা হবে।
ক) সিটি কর্পোরেশ তত্বাবধায়নে দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। এগুলো মান সম্মত এবং অলাভ জনক।
খ) কর্মজীবী তরুণ-তরুণীদের কথা বিবেচনায় রেখে একটি নৈশ্য মহা বিদ্যালয় চালু করা হবে।
গ) সিটি কর্পোরেশনের পূর্বাঞ্চলে মেয়েদের জন্য একটি মানসম্মত মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।
ঘ) কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয় এবং ভিক্টোরিয়া কলেজে পর্যাপ্ত আসন না থাকায় অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী ভর্তির সুযোগ থেখে বঞ্চিত হন। তাদের কথা বিবেচনায় রেখে সদর দক্ষিণ এলাকায় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এর উদ্যোগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। এ সমস্ত উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা শিক্ষা ক্ষেতে কুমিল্লার হতগৌরব ও ঐতিহত্য ফিরেয়ে আনতে পারবো বলে আশা রাখি। সরকারের সহযোগীতায় শহরের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ে যাব এক অন্যান্য উচ্চতায়।
২) শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের হবে আমার প্রথম অগ্রাধিকার। নগর পরিকল্পনাাবিদ ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে বাস্তবমুখী ও কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এ শহরকে জলাবদ্ধতা থেখে মুক্ত করবো।
৩) নগররের অসহনীয় যানজট নিরসনে জন সচেতনাতা বৃদ্ধি, সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। প্রয়োজনে ফ্লাইওভার, ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণ করা হবে। ফুটপাত সমূহ জনগণের চলাচলে উপযোগী করা হবে।
৪) আপনারা নিশ্চিয় অবগত আছেন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ক্রমে রূপকল্প ২০২১ মাথায় রেখে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের জন্য উন্নয়নের মাস্টার প্ল্যান প্রনয়ণ করা হবে। মাস্টার প্ল্যানের সমুদয় পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।
৫) শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে আমার এক গুচ্ছ পরিকল্পনা রয়েছে। যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।
৬) শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত । উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে প্রতিবছর অনেক মা ও শিশু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। সিটি কর্পোরেশনের তত্ত¦াবধানে সর্বাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল স্থাপন করা হবে। দ্ররিদ্র জনেেগাষ্ঠির জন্য সেখানে স্বল্প খরচে চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে পরিচালিত স্যাটেলাইট ক্লিনিক সমূহের চিকিৎসা সেবার পরিধি বৃদ্ধি করা হবে।
৭) কুমিল্লায় কর্মজীবি নারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত এ সকাল নারীদের আবাসন সংকটের কথা বিবেচনায় রেখে একটি কর্মজীবি মহিলা হোস্টেল স্থাপন করা হবে।
৮) ভবন নির্মানের নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে জনসাধারনের ভোগান্তি দূর করা হবে। দ্রুত তম সময়ে নকশা অনুমোদন করা হবে।
৯) সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে। রাত ১২ টা থেকে সকাল ৬ টার মধ্যে বর্জ্য পরিষ্কার নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি স্বল্পাআকৃতির ময়লা, কাগজ, ইত্যাদি ফেলার জন্য মূল সড়কের পাশে ক্ষুদ্রাকৃতির বীন/ঝুড়ি স্থাপন করা হবে। বর্জ্যকে বোঝা মনে না করে সম্পদে পরিনত করার জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া হবে।
১০) সরকার এবং জনসাধরণের সহায়তা নিয়ে কুমিল্লার পরিছন্ন রূপটি ফিরিয়ে এনে কুমিল্লার মহানগরকে নন্দনিক শহরে পরিনত করবো।
১১) দ্রুততম সময়ের মধ্যে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং চলাচল অনুপযোগী সড়ক সমূহ সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহন করবো । পাশাপশি সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন সকল কাঁচা সড়ক পর্যায়ক্রমে পাকা করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১২) সদর দক্ষিণ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের অংশ হলেও গত ৫ বছরেও সেখানকার দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়নি। তাই আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হলে সদর দক্ষিণের জন্য মহা পরিকল্পনা গ্রহন করা হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সদর দক্ষিণের উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালিত হবে। সদর দক্ষিণের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সেখানে সিটি কর্পোরেশনে অচল আঞ্চলিক কার্যলয়টি সচল করা হবে। ফলে সেখাকার বাসিন্দরা সময় ক্ষেপন ও বিড়ম্মনা থেকে রক্ষা পাবেন । এখানে আন্তর্জাতিক মানে একটি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে, ফলে কুমিল্লাতে আন্তজার্তিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের সুয়োগ তৈরী হবে। আন্তর্জাতিক সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে ৫ তারাকা হোটেল স্থাপনে জমি বরাদ্ধ করে সহযোগিতা করা হবে।
১৩) জেলা পরিষদের সহযোগিতা নিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনে একটি মুক্তমঞ্চ স্থাপন সহ পুরো বোটানিক্যাল গার্ডেনটিকে একটি নতনু আঙ্গিকে গড়ে তোল হবে। যাতে করে দর্শনার্থীরা একটি মনোরম পরিবেশে বেড়াতে পারেন।
১৪) আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি মিলনায়তন প্রতিষ্ঠান মাধ্যমে নগরবাসীর সংস্কৃতি চর্চা ও বিনোদনের সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে।বিদ্যমান মিলনায়তন সমূহের সংস্কার ও উন্নয়ন করা হবে।
১৫) কুমিল্লা খ্যতিমান ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধাদে নামে নগরের বিভিন্ন সড়ক সমূহের নাম করা হবে।
১৬) নগরীরের সড়ক সমূহে রাতের বেলায় নিরবিছিন্নভাবে আলোকিত রাখার ব্যবস্থা করা হবে।
১৭) মাদকমুক্ত কুমিল্লা গঠনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
১৮) সন্ত্রাসমুক্ত নগর গঠনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। প্রত্যোক নগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
২১) শহরের চারপাশে বৃত্তাকার সার্কুলার রোড নির্মান করা হবে মূল শহরের উপর যানবাহন চাপ অনেকটাই কমে আসবে।
২২) পর্যাপ্ত পরিমান পাবলিক টয়লেট স্থাপন এবং সেগুলো সার্বক্ষণিক পরিচ্ছন্ন নেওয়া হবে।
২৩) কাঁচা বাজার গুলোর সংস্কার মানবৃদ্ধি করা হবে। বিশেষ সরকারের সহযোগিতা রাজগঞ্জ ও রাণীর বাজারটিকে সর্বাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বাজারে পরিণত করা হবে। বাজারগুলো নান্দনিক স্থাপনা তৈরি মাধ্যমে কুমিল্লাবাসীর জন্য এর বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
১৯) কুমিল্লাতে একটি আইটি পার্ক স্থাপনা করা হবে। যাতে করে নতুন প্রজম্ম আউটসোসিং এর মাধ্যমে আয়ের উৎস খুঁজে নিতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সমূহকে ফ্রি ওয়াইফাই জোনের আওতায় আনা হবে।
২০) বেকারত্ব দূরীকরণ ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সিটি কর্পোরেশন উদ্যোগ গ্রহন ও সহায়তা করবে।
২৪) ধর্মীয় স্থাপনা সমূহ মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, কবরস্থান, শ্মশান ইত্যাদি সংরক্ষনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়া হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর যে কোন প্রকার নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে হিমাল পাহাড়ের মতো প্রতিরোধের দেয়াল হয়ে দাঁড়াবো। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টান সকলকে সঙ্গে নিয়ে কুমিল্লাকে একটি অসাম্প্রদায়িক পরমতসহিষ্ণু শহর হিসেবে গড়ে তুলবোঅ
২৫) মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সকল ক্ষেত্রে বিশেষ সম্মানের ব্যবস্থা করা হবে। হোল্ডি, ট্যাক্স, পানির বিল সমূহ মওকুফ করা হবে।
২৬) নগর জুড়ে প্রবীণ নাগরিকদের অগ্রাধিকার বিত্তিতে সেবা প্রদান করা হবে।
২৭) প্রতি তিন মাস পর পর একবার জনতার মুখোমুখী অনুষ্ঠানের আয়েজন করা হবে। যাতে করে বিগত কার্যক্রম সম্পর্কে জনসাধারণের মূল্যায়ন এবং আগামী কার্যক্রম সম্পর্কে তাদের পরামর্শ গ্রহন করা যায়। এর মাধ্যমে কর্পোরেশনের কার্যক্রম সম্পর্কে জনসাধারনের প্রতি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
২৮) আমি আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হলেও কখনই দলের বা পরিবারের মেয়র হব না। আপমর কুমিল্লাবাসীর মেয়র হব। জনসাধারণের জন্য মেয়রের কার্যালয় উন্মুক্ত থাকবে। রাগ বা অনুরাগের বর্শবর্তী হয়ে কখনও মেয়রের কর্মকা- পরিচালনা করবো না।বিগত দিনে যারা সিটি কর্পোরেশ/ পৌরসভার নেতৃত্বে ছিলেন তাদের সকলের প্রয়োজনীী পরামর্শ নেব। নাগরিক সেবা প্রদান ও এবং নাগরিক সন্তুষ্টি বিধানই হবে আমার কার্যক্রমের মূল ভিত্তি।
২৯) জনগণের সেবক হবার ব্রত নিয়েই এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। জনগণের সেবব হবে চাই. শাসক হতে চাই না। সকলের ন্যায্য চাহিদা পূরনের সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করে যাব। কিন্তু এটুকু আশ^স্ত করতে পারি কারো সাথে অসৈজন্যমূলক আচরণ করে মেয়রের কার্যালয় থেকে ফিরিয়ে দিবো না। চাটুকার পরিবেষ্টিত হয়ে জনসাধারণের নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন হবো না।
0 facebook: