কুমিল্লা রিপোর্ট২৪ ডেস্কঃ কুমিল্লায় একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ড্রেনের পানি রাস্তার উপর উঠে নগরবাসীর দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। নগরীর প্রতিটি অলিতে গলিতে পানি উঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে নগলবাসীর দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। মনিরুল হক সাক্কু জলাবদ্ধতা নিরসনে নিজে দাড়িয়ে ড্রেন পরিস্কার করলেও কোন ফলাফল পাচ্ছে না নগরবাসী। যদি পরিকল্পিত নগরায়ন না করা হয় তাহলে আগামীতে ভয়াবহ রূপ নিবে বলে সিটি বাসীর ধারণা।
কুমিল্লা নগরবাসীর জলাবদ্ধতাএকটি নিত্যদিনের অভিশাপ হয়ে হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুমিল্লার জলাবদ্ধতার প্রধান প্রধান কারণ ভৌগোলিক কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কুমিল্লা গোমতী নদীর তীরে হওয়া সত্ত্বেও নগরীর পানি নিষ্কাশনে ভূমিকা রাখছে না।
কারন এটি উত্তর পাশে হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নগরীর পশ্চিমে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট ও লালমাই পাহাড়ী অঞ্চল হওয়ায় যে দিকে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। পূর্বদিকে উচুঁ ভূমির জন্য পানি প্রবাহিত হওয়ায় সুযোগ নেই। দক্ষিণে এয়ারপোর্ট রোডের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন করা গেলেও বর্তমানে ইপিজেড হওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে না। এতে নগরীর পানিনিষ্কাশনের জটিলতা বুঝা যায়।
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে পুকুর ভরাট ও নিচু পতিত জমি নগরায়নেরফলে এক কালের ব্যাংক ও ট্যাংকের নগরী কুমিল্লা থেকে ট্যাংক বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ও নগরীর বিভিন্ন পতিত জমি ভরাট করে বাড়িঘর নির্মাণের ফলে বৃষ্টির পানি জমা হয়ে ড্রেন উপচিয়ে রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। নগরীর ক্রস কালভার্টের বিভিন্ন সার্ভিস সংস্থা, যেমন-পানি, গ্যাস, টেলিফোন এর একাধিকপাইপ থাকার কারণে বৃষ্টির সময় এই সকল পাইপে পলিথিন আটকিয়ে পানি নিষ্কাশনের বাধা প্রদান করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে।
অবৈধ জবর দখল ও খালের উপর অপ্রশস্ত কালভার্টের কারনে পানি বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে।জনসাধারণের সচেতনতার অভাবের ফলে নগরীর জমির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায়ও খালি জায়গায় ঘর বাড়ি তৈরির দরুন সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্মিত থাকা স্বত্ত্বেও জনগণও ময়লা-আবর্জনা বিরাট অংশ পলিথিন ড্রেনে ফেলছে আর আবর্জনা অপসারণে ট্রাকের অপ্রতুলতার দরুন কুমিল্লা নগর এলাকায় প্রায় ১১০ কিঃ মিঃ ট্রেইন ১১৫ কিঃ মিঃ রাস্তা লক্ষাধিক লোকের সৃষ্ট সালড ওয়াস্ট ও ড্রেন হতে উত্তোলিত মাটি এবং রাস্তার আবর্জনা অপসারণের জন্য কয়েকটি ট্রাক দিয়ে অপসারণ করা সম্বব হচ্ছে না। ফলে ড্রনে পড়ে এই আবর্জনাগুলো পানি নিষ্কাশনের বাধা সৃষ্টি করে।
অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মানের ব্যাপারে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন ড্রেইন সড়ক থেকে অনেক ওপরে থাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে কোন কাজে আসছে না।
আউট লেটের ডাউন স্টিম এর সংযোগ খালগুলো খনন না থাকার কারণে বড় ধরনের বৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশিত হতে না পেরে অনেক দিন পর্যন্ত নগর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়
। ড্রেনের মাটি উত্তোলন ও অপসারণের সিটি করপোরেশনের সীমাবদ্ধতার কারণে ড্রেনের উত্তোলিত মাটি সঠিক সময়ে অপসারণ না করার ফলে পুনরায় ড্রেনে পড়ে এবং ময়লা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরিবেশ দুষণ করে। কোন কোন জায়গায় ড্রেনের দুই পাশের দেওয়ালে বড় বগ ইমারত গড়ে উঠায় ড্রেন পরিষ্কার করার সুযোগ থাকে না। ড্রেনের মাটি নরম থাকায় বালতি দিয়ে উঠানো সম্ভব হয় না। তাছাড়া এ মাটি অপসারণের জন্য সিটি কর্তৃপক্ষের উন্নতমানের কোন যন্ত্রপাতি নেই।
উপরোক্ত উল্লেখিত বিষয়ের সমস্যার প্রেক্ষিতে বর্তমানে ৪টি জোনে বিভক্ত এবং ৪টি আউটলেট খালের মধ্যে জোন-১ রেইসকোর্স খালের এলাকা রেইসকোস, বাগিচাগাঁও, ঝাউতলা, বাদুরতলা, বিষ্ণপুর, ছোটরা, কালিয়াজুরীসহ নগরীর উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের পানি ছোট বড় বিভিন্ন ড্রেনের মাধ্যমে রেইসকোস খালে পতিত হয়। কিন্তু ঐ খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং ড্রেনের অপ্রস্থড্রেন নির্মাণের ফলে এ সকল এলাকায় জলাদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জোন-২ আউটলেট লাকসাম রোড সাইড খাল এরএলাকা কাপ্তান বাজার, আদালত, মোঘলটুলী, কান্দিরপাড়, উত্তর চর্থা, মুরাদপুর, মনোহরপুর ও ঠাকুরপাড়াসহ নগরীর মধ্যে অঞ্চলের পানি বিভিন্ন ড্রেনের মাধ্যমে ঐ খালে পতিত হয়। কিন্তু এর মধ্যে টাউন হলেরসামনের ড্রেন, রাজগঞ্জ থেকে চকবাজার ড্রেন প্রশস্থ হলে কোন কাজে আসছে না এছাড়া বিভিন্ন প্রতিবদ্ধকতার কারণেপানি সহজে সরতে পারে না। সার্কুলার রোড ও লাকসাম রোড সাইড খাল খনন না করার ক্ষেত্রে বিশেষে সংরক্ষণ দেওয়াল নির্মাণকালে উত্তোলিতমাটি দ্বারা ভরাট হওয়ায় পানি চলতে না পেরে অল্প বৃষ্টিতে ওইএলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়।
জোন-৩ এর এলাকার মধ্যে চান্দঁপুর ও শুভপুর এলাকায় জলাশয় হয়ে গোমতীর নতুন ও পুরাতন বাঁধের ভেতর অংশ দিয়ে টিক্কারচর, সুজানগর ও বিবির বাজার রোডের উত্তর পার্শ্বের পানি বিভিন্ন ছোট বড় নালা দিয়ে এই খালের মাধ্যমে দক্ষিণে নিচু জমির মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু ওই অঞ্চলের এই নিচু জমিতে ঘরবাড়ী তৈরির হওয়ার কারণে আরঅন্য কোন খালে এই পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করায় মারাত্মক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়- বুধবার রাতে থেকে সকাল পর্যন্ত কয়েক ঘন্টা সামান্য বৃষ্টিতে নগরীর কান্দিরপাড় ভিক্টোরিয়াকলেজ রোড, ঝাউতলা মুন হাসপাতালের সামনে, দক্ষিণ চর্থা সরকারি মহিলা কলেজ রোড, দক্ষিণ চর্থা ইপিজেড রোড, মনোহরপুর জেনারেল হাসপাতাল রোড, টমছমব্রীজ ইবনে তাইমিয়া স্কুল রোড, উত্তর চর্থা, ছাতিপট্টি, কুমিল্লা স্টেডিয়াম মার্কেট, দক্ষিণ চর্থা বড়পুকুর পাড়, রেইসকোর্স, ঝাউতলা, বাদুরতলা, ঠাকুরপাড়া, টমছমব্রীজ, নিউ হোস্টেলের সামনে গর্জনখোলা প্রতিটি সড়ক, চক বাজার থেকে রাজগঞ্জ হয়ে কান্দিরপাড়, শাসনগাছা পুরো সড়কটিই জরাজীর্ণ, জেলা প্রশাসক রোড, থিরাপুকুরপাড়, হাউজিং এস্টেট, কাপ্তান বাজার রোড, চকবাজার, কান্দিরপাড়, দ্বিতীয় মুরাদপুর, হাউজিং এষ্টেট, ধর্মপুর সহ নগর এলাকার প্রতিটি রাস্তাঘাটই বড় বড় গর্ত হওয়ার ফলে সামান্য বৃষ্টিতে পানিতে তলিয়ে আছে ।
এতে নগরবাসী চলাচলে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। নগরবাসী অভিযোগ করে বলেন- মনিরুল হক সাক্কু নির্বাচনী ইস্তেহার হিসেবে নগরীকে প্রথমে জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে কাজ করবেন। কিন্তু চার বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও পরিকল্পিতভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। যদিও তিনি নিজে দাঁড়িয়ে ড্রেন পরিষ্কার করেন। কিন্তু এতে কোন লাভ হবে না। ড্রেনের ময়লা আবর্জনা ও মাটিগুলো পুনরায় ড্রেনেই পড়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশনে আরও মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। এতে নগরজীবনে দুর্ভগে চরম আকারে পৌছবে। জরুরী ভিত্তিতে প্রশস্ত ড্রেন নির্মান করেও জলাবদ্ধতা বন্ধ করা যাচ্ছে না ।
0 facebook: