16 April 2016

শূন্য পদের ভারে আক্রান্ত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ



শাহাজাদা এমরানঃ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকটে সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়তে যাচ্ছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে। শূন্য পদের ভারে আক্রান্ত কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মো. মহসিন উজ্জামান চৌধুরীর সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, এখানে দ্রুত বেসিক সায়েন্সে শিক্ষক নিয়োগ না করলে পড়াশোনা চালিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। তিনি দুঃখ করে বলেন, যেখানে ১৪৬টি প্রথম শ্রেণীর পদের মধ্যে ৫২টি পদ শূন্য থাকে সেখানে ভালো সার্ভিস দেব কিভাবে বলেন?
সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী মিলিয়ে মোট পদ সংখ্যা রয়েছে ৩০৮ জন। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে জানা গেছে। এর মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন ২২১ জন। শূন্য রয়েছে ৮৭টি পদ। বিভাগওয়ারী শূন্য ও কর্মরত পদগুলো হলো, প্রথম শ্রেণীর মোট পদ রয়েছে ১৪৬টি। এর মধ্যে শূন্য রয়েছে ৫২টি। এ কলেজে ২৪টি অধ্যাপক পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ১৫টি। ৩৫টি সহযোগী অধ্যাপকের মধ্যে শূন্য রয়েছে ১০টি আর ৪৮টি সহকারী অধ্যাপক পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ২১টি। ৩১ জন প্রভাষকের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৬টি পদ। 
অপরদিকে, কলেজের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী মিলিয়ে মোট পদ রয়েছে ১৬২টি। আর শূন্য রয়েছে ৩৫টি পদ। এখানে শূন্য পদগুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চমান সহকারী ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস (ফার্মেসি) ১টি, লাইব্রেরিয়ান ১টি, চিফ টেকনিশিয়ান ১টি, অফিস সহকারী ও মুদ্রাক্ষরিক-কাম-সহকারী কম্পিউটার অপারেটর ৩টি, ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট ৭টি, অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) ১৪টি, মালী ২টি, আয়া ১টি, ম্যাসেঞ্জার ১টি, টেবিল বয় ১টি ও নিরাপত্তা প্রহরী ২টি।
এ প্রসঙ্গে কলেজ অধ্যক্ষ ও বিশিষ্ট চিকিৎসক নেতা প্রফেসর ডা. মো. মহসিন উজ্জামান চৌধুরী বলেন, মিথ্যা বলে সত্যকে আড়াল করার অভ্যাস আমার নেই। শিক্ষকের অভাবে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই মেডিকেল কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে বেসিক সায়েন্সে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ না করলে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, পরিষ্কার ভাষায় বলা আছে, অধ্যাপক ছাড়া কোনোভাবেই পরীক্ষা নেয়া যাবে না। অথচ আমার এনাটমি বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক পদে শিক্ষক নেই একজনও। ফিজিওলজি বিভাগে সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক পদে কোনো শিক্ষক নেই। একই অবস্থা রয়েছে বায়োক্যামিস্ট বিভাগেও। তিনি বলেন, প্রতি মাসেই আমরা শূন্য পদগুলো পূরণ করার জন্য ঢাকায় লিখিতভাবে চিঠি পাঠাচ্ছি। কিন্তু কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখছি না। 
অধ্যক্ষ ডা. মো. মহসিন উজ্জামান চৌধুরী অবিলম্বে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য শূন্য পদগুলো পূরণ করবার দাবি জানান। 
উল্লেখ্য, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে বর্তমানে ৩০ জন বিদেশি শিক্ষার্থীসহ ৭০০ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে। এর মধ্যে ছাত্র ৩৯৮ জন আর ছাত্রী ৩০২ জন। ১৯৯২ সালে এ কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়।


শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: